সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এক যুক্ত বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ নিশ্চিত করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নারী ফুটবল টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বরাবরের মতোই বাফুফের প্রহসনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ফাঁকা বুলির নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘নারী ফুটবল টিম বীরের বেশে দেশে প্রবেশ করেছে। বাফুফে রাত আড়াইটার সময় তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। যা শুরু হয় রাত তিনটারও পরে। দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ এই খেলোয়াড়দের বরণ করার আকাঙ্ক্ষায় ছিল যা এই মধ্য রাতের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভন্ডুল করে দেয়া হলো এবং খেলোয়াড়দেরও মানুষের এই আবেগ থেকে বঞ্চিত করা হলো। তারা কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ঋতুপর্ণা ও মনিকা ভোরেই ভুটানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। কয়দিন সময় নিয়ে জনসাধারণকে যুক্ত করেও তো এই আয়োজন করা যেত। শ্রান্ত ক্লান্ত খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সময় দিয়ে, তড়িঘড়ি না করে আয়োজনকে উপভোগ্য করা যেত!’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘মধ্যরাতের এই অভূতপূর্ব সংবর্ধনা শেষ পর্যন্ত প্রহসনে পরিণত হয়েছে কারণ সেখানে ফুলের তোড়া আর কিছু ফাঁকা বুলি ছাড়া কোন কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ কতকিছু করার ছিল বাফুফের! ২০২৩ সালের মার্চে অর্থসংকটের অজুহাত দিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠানো হয়নি, যেটি হয়েছিল মিয়ানমারেই। এ বছর ৩০ জানুয়ারি কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় তাঁরা বেতনের আওতায়ও ছিলেন না। বেতনও পেয়ে এসেছেন অনিয়মিতভাবে। এখনো শীর্ষ খেলোয়াড়দের বেতন মাত্র মাসে ৫৫ হাজার টাকা। গত সাফ জেতার পর মেয়েদের দেড় কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হবে বলেছিল বাফুফে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের কাছ থেকে একুশে পদকের সঙ্গে পাওয়া চার লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার ও চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ম্যাচ ফি তাদের দেয়া হয়নি। এবার জিতে আসল নারী টিম, তারও কোন পুরস্কার তাদের জন্য নেই। খেলোয়াড়রা পুরস্কারের জন্য খেলে না, দেশের জন্য খেলে। কিন্তু বাফুফের তো দায়িত্ব বর্তায় তাদের উৎসাহিত করার। তাদের খেলার পরিবেশ সহজ করে দেয়ার। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরো খেলা আয়োজন করার, কোচিং প্রক্রিয়াকে আধুনিক করার, দক্ষতাসম্পন্ন বিভিন্ন ক্ষেত্রের কোচ নিয়োগের ব্যবস্থা করার, বেতন কাঠামো বৃদ্ধি করার, বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেয়ার, প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করার! অথচ তারা কিছু ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে দায়িত্ব শেষ করলেন!’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘সাফ জয়ের জোড়া সাফল্যের পরের দিন বাফুফের সাথে খেলোয়াড়দের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। ৬ মাস পরে গিয়ে আবার নতুন চুক্তি করা হয়েছিল। এই ৬ মাস তাদের জীবন কিভাবে চলেছিল এই চিন্তাটুকু কি বাফুফের করার প্রয়োজন ছিল না! তিন ধাপে সেই চুক্তি নবায়ন করলেও খেলোয়াড়দের স্বস্তি ফেরেনি। আগের চুক্তিতে যাদের বেতন ছিল ৫০ হাজার টাকা, ৬ মাস পর তা হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৬ মাস বেতন না পাওয়া ১৩ জনের বেতন বেড়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা! চুক্তির শর্তে আবার আছে কোন ফুটবলার বিদেশে লীগ খেলতে গেলে তিনি কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুয়ায়ী বেতন পাবেন না। নতুন চুক্তিতে খেলোয়াড়দের সাথে বৈষম্যের চিত্র প্রকট। সাফ দলের বাইরে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দের বেতন মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়লেও সাফজয়ী দলের বেতন বিশেষ বাড়েনি। কোচ বাটলারের অধীনে খেলতে না চাওয়া ১৮ জনের প্রতি সমর্থন আছে এমন খেলোয়াড়ের বেতন না বাড়া এবং সমর্থন নেই খেলোয়ারদের বেতন বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা হতাশাই তৈরি করছে। পুরুষ ফুটবলারদের তুলনায় নারী ফুটবলারদের বেতন বৈষম্য প্রকট। এখন নারী ফুটবলারদের মধ্যে বেতন নিয়ে এমন বৈষম্য করাটা কি ন্যায়সঙ্গত? দেশে গণঅভ্যুত্থান হলো বৈষম্যেহীন সমাজের জন্য। অথচ এরকম একটি প্রতিষ্ঠিত ক্ষেত্র এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা খেলোয়ারদের সাথেই এমন বৈষম্য চলছে।’
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এই সকল প্রকার বৈষম্য ও প্রহসন বন্ধ করে খেলোয়াড়দের ন্যায্য বেতন ও সম্মানজনক কাজের পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানান।