৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪৪:৪১ অপরাহ্ন


নিউইয়র্কে ভোটারদের স্বস্তি : লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার ও পানি সরবরাহ এখন বৈধ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
নিউইয়র্কে ভোটারদের স্বস্তি : লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার ও পানি সরবরাহ এখন বৈধ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন


নিউইয়র্ক স্টেটে এখন থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা বৈধ। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল গত ১৯ জুন এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে ভোটকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ ভোটারদের পানি, হালকা খাবার বা রিফ্রেশমেন্ট সরবরাহ করা যাবে। নতুন এই আইনটি পূর্ববর্তী নিউইয়র্ক স্টেট নির্বাচন আইন ১৭-১৪০ কে বাতিল করেছে। এই পুরোনো এবং বিতর্কিত আইনটি অনুযায়ী, ভোটারদের ছোটখাটো মূল্যমানের পণ্য যেমন পানি বা স্ন্যাকস দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো। যদিও এই বিধানটি মূলত ভোটারদের প্রভাবিত হওয়া ঠেকাতে তৈরি করা হয়েছিল, বাস্তবে এটি সাধারণ মানবিক সহায়তাকেও আইনি বাধার মুখে ফেলতো।

এই আইনটি এমন সময়ে পাস করা হয়েছে, যখন নিউইয়র্ক জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে এবং ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্কে স্টেটব্যাপী নির্বাচনের দিন তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেছে এবং অনুভূত তাপমাত্রা ১১০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভোটারদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখেই এই মানবিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নতুন আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এখন থেকে ভোটারদের হালকা রিফ্রেশমেন্ট বা পানীয় সরবরাহ করতে পারবে, যতক্ষণ না তা নির্বাচনী প্রচার বা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে করা হয়। গভর্নর হোচুল এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের গণতন্ত্র তখনই সবচেয়ে কার্যকরি হয়, যখন প্রতিটি যোগ্য ভোটার নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় জল দেওয়া একটি সাধারণ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, যা তাদের অভিজ্ঞতাকে আরো সহজ ও নিরাপদ করে তোলে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রচণ্ড গরম হলো যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়াজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ।

এই নতুন আইনের পক্ষে একাধিক স্টেট আইনপ্রণেতা সমর্থন জানিয়েছেন। স্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি বলেন, ভোট দেওয়া কোনো সহ্যশক্তির পরীক্ষা নয়। এই তাপপ্রবাহে ভোটারদের জল দেওয়া যেন আইনি হয়, তা নিশ্চিত করাটা ছিল এক মানবিক প্রয়োজন। স্টেট সিনেটর ক্রিস্টেন গঞ্জালেস বলেন, এই রেকর্ড-তাপপ্রবাহে মানুষ যেন ভোট দিতে নিরুৎসাহিত না হন, সেজন্য এই আইনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। অ্যাসেম্বলিমেম্বার জো অ্যান সাইমন বলেন, এই আইনটি একটি অপ্রচলিত বাধা দূর করে সাধারণ বুদ্ধির জয় ঘটিয়েছে। কেউ যাতে জল বা হালকা খাবার দিয়ে ভোটারদের সাহায্য করতে গিয়ে অপরাধী না হন, সেটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।

নতুন এই আইন ছাড়াও গভর্নর হোচুল তার শাসনামলে নিউইয়র্কে ভোটাধিকার প্রসারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ২০২২ সালের জুনে তিনি জন আর লুইস ভোটিং রাইটস অ্যাক্ট স্বাক্ষর করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট পর্যায়ে সবচেয়ে শক্তিশালী ভোটাধিকার আইন হিসেবে বিবেচিত। এরপর ডিসেম্বরে, তিনি ভোটার নিবন্ধনের সময়সীমা ২৫ দিন থেকে কমিয়ে ১০ দিন করেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আগাম ডাকযোগে ভোটদানের পদ্ধতি চালু করেন, যার মাধ্যমে সব যোগ্য ভোটার আগাম ভোট দিতে পারেন। আজকের এই নতুন আইন সেই ধারাবাহিকতারই অংশ, যার মাধ্যমে গভর্নর হোচুল নিউইয়র্ককে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও মানবিক গণতন্ত্রে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

শেয়ার করুন