নিউ ইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ও ডেমোক্রেটিক মেয়র পদপ্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডারকে গত ১৭ জুন মঙ্গলবার ম্যানহাটনের ২৬ ফেডারেল প্লাজা বিল্ডিংয়ে অবস্থিত ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় গ্রেফতার করেছে এফবিআই এবং ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা। তিনি যখন একজন অভিবাসীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোর্ট থেকে বের হচ্ছিলেন, তখনই এই গ্রেফতার সংঘটিত হয়। ঐ অভিবাসীকেও এজেন্টরা গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ফেডারেল এজেন্টরা ল্যান্ডার ও ঐ অভিবাসীকে আলাদা করার চেষ্টা করছিলেন। প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে ল্যান্ডার তাদের হাত ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান, পরে জোরপূর্বক তাদের আলাদা করে ল্যান্ডারকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়।
গ্রেফতারের সময় ল্যান্ডার বলেন, আমি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি না, আমি শুধু করিডোরে দাঁড়িয়ে আছি। এক এজেন্ট তখন তাকে বলেন, আপনি অফিসারদের কাজে বাধা দিচ্ছেন। ল্যান্ডার আরও বলেন, আপনাদের কাছে যদি বিচারকের আদেশ না থাকে, তবে একজন আমেরিকান নাগরিককে গ্রেফতারের কোনো অধিকার নেই।
পরে ল্যান্ডারের স্ত্রী মেগ বারনেট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা যখন কোর্ট বিল্ডিং থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ করে বহু ফেডারেল এজেন্ট আমাদের ঘিরে ধরে। আমার চোখের সামনে যা ঘটেছে, তা ছিল আইনবহির্ভূত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। নিউ ইয়র্ক সিটি পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানি উইলিয়ামস, মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি এবং সিটি কাউন্সিল সদস্য অ্যালেক্সা আভিলেসও ল্যান্ডারের স্ত্রীর ডাকা ঐ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে বলেন, ল্যান্ডারকে একজন ফেডারেল অফিসারের ওপর আক্রমণ এবং বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
ল্যান্ডারের এই গ্রেফতার এমন এক সময়ে ঘটল যখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইমিগ্রেশন কোর্টগুলোতে ব্যাপকভাবে অভিবাসীদের ধরপাকড় চলছে। বিশেষত, যেসব অভিবাসীর মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, তাদের দ্রুত বহিষ্কারের উদ্দেশ্যে এসব অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটি ছিল চলতি জুন মাসে ল্যান্ডারের তৃতীয়বারের মতো ইমিগ্রেশন কোর্টে অভিবাসীদের সহচর হিসেবে উপস্থিত থাকা। এর আগে, তিনি নিউ জার্সির নিউয়ার্কে একটি ডিটেনশন সেন্টারে মেয়র রাস বারাকার গ্রেফতারের প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট মুরাদ আওয়াদেহ বলেন, নিউ ইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলারকে গ্রেফতার করা ফেডারেল ক্ষমতার এক চরম অপপ্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থায় গুরুতর হস্তক্ষেপ। এটি শুধু একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ওপর নয়, বরং সমস্ত নিউ ইয়র্কবাসীর ওপর আঘাত- বিশেষ করে তাদের ওপর, যারা ন্যায়বিচার ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী।
একজন অভিবাসী নিউ ইয়র্কবাসীকে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সঙ্গ দেওয়ার কারণে একজন নির্বাচিত কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক গ্রেফতার ও আটক করা কোনো আইনি পদক্ষেপ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ভয়ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা। যারা অভিবাসী প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের দমন ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতেই এই অপচেষ্টা। এই মুহূর্তে, যখন দিনের আলোয় আমাদের কমিউনিটি থেকে অভিবাসী পরিবারদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন এ ধরনের হয়রানি শুধু আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে। আমরা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে অবিলম্বে এই ঘটনার পূর্ণ ব্যাখ্যা ও দায়িত্ব গ্রহণ দাবি করছি। নিউ ইয়র্ক সিটি অভিবাসীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, আশার প্রতীক এবং ন্যায়ের পক্ষে অবিচল শহর হিসেবেই থাকবে।
এ ঘটনাটির রাজনৈতিক প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই গ্রেফতার অনেক বিশ্লেষকের মতে ল্যান্ডারের পক্ষে জনসমর্থন বাড়াতে পারে। কারণ নিউ ইয়র্ক শহরে ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত রয়েছে। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেন, আইস-এর কোনো আইন বা শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা নেই। তারা শুধু আমেরিকার জনগণকে আতঙ্কিত করতে চায়।
এদিকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ল্যান্ডারকে মুক্তির সময় আদালতে ছিলেন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল। আদালতের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর হোকুল জানান, ল্যান্ডারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ইউ এস অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, তারা এখনো এই ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ইউ এস অ্যাটর্নি অফিসের জনসংযোগ প্রধান নিক বিয়াসে বলেন, সরকারি কার্যক্রম, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জনগণের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। ফেডারেল আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।