ব্রঙ্কসে বর্বরোচিত হামলার শিকার বাংলাদেশি-আমেরিকান এনওয়াইপিডি অফিসার চৌধুরী নাফিস গত ২৮ মে জ্যাকোবি মেডিকেল সেন্টার থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বর্তমানে সুস্থতার পথে রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার ২৩ বছর বয়সী তাভিওন হারগ্রোভকে ভার্জিনিয়ায় গ্রেফতার করা হয়। পরদিন বুধবার, ইউএস মার্শাল সার্ভিস ও এনওয়াইপিডির যৌথ অভিযানে রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় দ্বিতীয় সন্দেহভাজন ২৩ বছর বয়সী ওয়েইন লুকাসকে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, গুরুতর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং নিউইয়র্কে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
গত ২৫ মে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার পথে নাফিস চৌধুরী ওয়েস্টচেস্টার স্কয়ার এলাকায় সেন্ট পিটার্স ও ট্রাটম্যান অ্যাভিনিউয়ের কাছে দুই দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। সে সময় তিনি সিভিলিয়ান জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন। হামলাকারীরা ছুরি দেখিয়ে তাকে আক্রমণ করে এবং পরিচয় জানার পরও বর্বরভাবে মারধর চালায়। এক পর্যায়ে তার সার্ভিস রিভলবার ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং এক হামলাকারী তাকে মাটিতে ফেলে তার মাথায় পা দিয়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে এক পথচারী পুলিশে ফোন করেন। এরপর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জ্যাকোবি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়, যেখানে তিনি কয়েকদিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মুখমণ্ডলের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তার একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় শতাধিক এনওয়াইপিডি সদস্য করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। হুইলচেয়ারে বসে নাফিস স্যালুট ও ‘থাম্বস আপ’ দিয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২৭ বছর বয়সী চৌধুরী নাফিস পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং সম্প্রতি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। এনওয়াইপিডিতে অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি দুই বছর ৯১১ ডিস্টপ্যাচার হিসেবে কাজ করেছেন। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এক বিবৃতিতে বলেন, একজন অফিসারের ওপর যেভাবে নৃশংসভাবে হামলা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এনওয়াইপিডি এই অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত তাভিওন হারগ্রোভের বাবা, জেফরি হারগ্রোভকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আহত অফিসারের চুরি যাওয়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন। পরে তাকে আদালতে হাজির করে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অফিসার নাফিস এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তবে সহকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি দৃঢ় মানসিকতায় দ্রুত কাজে ফিরতে চান। তার সাহস, সততা ও প্রতিশ্রুতি পুরো নিউইয়র্ক শহরবাসীর কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।