প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যেটুকুই আলাপ ছিল, দূরত্ব ছিল, সেই দূরত্বকে ঘুচিয়ে এনে যাতে জুলাই সনদের বর্তমানে যত ঐকমত্যের বিষয় আছে, তার সঙ্গে আরো কিছু যোগ করতে পারি। দেখতে সুন্দর লাগবে, জাতীয় একটা সনদ হলো, অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি, গর্বিত জাতি হিসেবে আমরা যাতে দাঁড়াতে পারি। আমরা তো বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনীতি সৃষ্টি করিনি। আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য। তিনি বলেন, জুলাই সনদ দেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করবে। আগামী দিনের রাজনীতি হবে বিভক্তির নয়, ঐক্যের।
২ জুন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেন, আমি সারাদিন যত মিটিং করি, সব থেকে আনন্দ পাই আপনাদের সঙ্গে এরকম বসে আলাপে। কারণ এখানেই সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায়, এ-রকম একটা কাজে আমি নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। শুধু আপনাদের কথা শোনার জন্য এটাকে আপনারা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংস্কার করার জন্য। আমরা তো বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করবো। প্রথমেই নানা আলাপের মধ্যে ঠিক হলো, আমরা কিছু কমিশন করে দেই। তারা প্রকৃতপক্ষে ভেতরে গিয়ে জিনিসটা তৈরি করবে। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া, শেষ পর্যন্ত আমরা লোক জোগাড় করলাম। প্রথমে ছয়টি, পরবর্তী সময়ে আরো ছয়টি কমিশন করা হলো। দ্রুতগতিতে কাজ করার জন্য তাদের ৯০ দিন সময় দিয়েছিলাম। তারা করতে পেরেছে, কয়েকটা কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে অসুবিধা নেই। কমিশনের রিপোর্ট আসার পর এখন আমরা যে ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, এটা কীভাবে হবে। সেখান থেকে আইডিয়া হলো আলাদা একটা কমিশন করি। আমি কমিশনের সঙ্গে যখনই বৈঠক করি, আমাকে জানানো হয় আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শুনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই, যেভাবে আপনারা সহযোগিতা করেছেন, কারণ আমার মনে হয়েছিল কারো আগ্রহ হবে, পাশ কাটিয়ে যাবে। আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি, কত গভীরভাবে আপনারা এর ভেতরে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ-রকম আগ্রহ নিয়ে যদি আমরা নিজে থেকে বসি, তাহলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু আসবে। আজকে প্রথম পর্ব শেষ হলো, সেটাও আনন্দের দিন। সবাই কোন বিষয়ে একমত হলাম, সেসব মিলিয়ে সবাই মিলে আমরা জুলাই সনদ করবো। এটি আমাদের লক্ষ্য। এটি ছিল প্রথম পর্বে, দ্বিতীয় পর্বে তাহলে কী হবে। অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি, আরেকটু একমত হলে আমাদের তালিকাটি আরেকটু সুপারিশযুক্ত হয়। এই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের বরাতে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, চলতি সপ্তাহে কয়েকটি রাজনৈতিক নৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করতে পারে ঐকমত্যে কমিশনের। হয়তো এসব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন না। ড. আলী রীয়াজ বা আইন উপদেষ্টা আসিফ ড. নজরুল থাকতে পারেন। তিনি জানান খুব দ্রুতই জুলাই ঘোষণা শুরু হবে।