৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:০০:৩৩ অপরাহ্ন


গুতারেসকে এনে কী ম্যাসেজ দিলেন ইউনূস
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
গুতারেসকে এনে কী ম্যাসেজ দিলেন ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অ্যান্তোনিও গুতারেস


জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেসের মত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসে কী কোনো ম্যাসেজ দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাছের ও দীর্ঘদিনের বন্ধু গুতারেস। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সুনামের সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনার সূচনা থেকেই প্রফেসর ইউনূসের শুভ কামনায় আন্তোনিও গুতারেস। ৮ আগষ্ট দায়িত্ব নিয়েই জাতিসংঘকে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা ও তার সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে যে ম্যাসাকার করেছে তার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করতে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিনার তার লোকজন পাঠিয়ে নিরপেক্ষ ও বিশ্বে গ্রহণযোগ্য এমন একটা আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত প্রমাণাদিসহ করে নিয়ে গেছেন। এবং সেটা প্রকাশ করেছে এবং জাতিসংঘে উপস্থাপনও করেছে। 

এটা শুধু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই নয়, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ ১৬ বছর পেছন থেকে মদদ দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন তাদের জন্যও বিশাল বড় ম্যাসেজ। ইউনূস তদন্তটা বিশ্বমানের করার পাশাপাশি এমন একটা ম্যাসাকারের মদদতাদাদেরও মুখও উম্মোচিত করে দিয়েছেন। যার অর্থ এমন ম্যাসাকারের বিচারকার্য চলাকালে কেউ যাতে বিপক্ষে মুখ খুলতে না পারে। এমনকি ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা বা ম্যাসাকারের সঙ্গে যুক্তদের পূণর্বাসনে ওকালতি না করতে পারে সে পথটা রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এরপরও যদি কেউ ওই কাজ করতে আসে তাহলে ম্যাসাকারের দায় তাদের উপরও বর্তাবে।

প্রফেসর ইউনূস শুধু সেখানেই ক্ষ্যান্ত দেননি। আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবকে তার যে কর্মযজ্ঞ সেগুলো সরাসরি দেখাতে, পর্যবেক্ষণ করাতে এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের যে সংস্কার কার্যক্রম সেগুলো পর্যবেক্ষণও করেছেন গুতারেস। এবং সমার্থন যুগিয়েছেন গুতারেস এসকল কার্যাদির। এবং প্রফেসর ইউনূস যে সঠিক পথেই রয়েছেন সেটাও তিনি বলে গেছেন। যা বিশ্বে একটা ম্যাসেজও যে প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সঠিক কাজগুলোই করে যাচ্ছেন। 

তবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই রোহিঙ্গা নিয়ে সঙ্কটে। রোহিঙ্গারা যে দেশে ফিরে যেতে চায়, বা তাদের যে দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করা উচিৎ সেটাই গুতারেসের এ সফরের মাধ্যমে বিশ্বকে ম্যাসেজ দিলেন ইউনূস। গুতারেস নিজ মুখেই বলেছেন, তিনি এমনই একটা ম্যাসেজ পেয়েছেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে। ইউনূস আশাপোষন করেন এবং রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে (চিটাগাংয়ের বা যা অনেকটাই আরকানের বাংলা ভাষা) বলেছেন, এ ঈদে তো হলো না, আগামী ঈদ যেন দেশে করতে পারি। মানে রোহিঙ্গাদের যেন নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় এক বছরের মধ্যে। 

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে রোহিঙ্গাদের। এটাতেও বড় সঙ্কটের মুখে পরেছে বাংলাদেশ। গুতারেসকে বুঝানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে। এতে গুতারেস নিজ থেকে এখন উদ্যোমী হবেন যাতে রোহিঙ্গাদের সহায়তা ফান্ড যেন আগের মতই অব্যাহত থাকে। 

ইউনূস আরো একটা প্রমাণ দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলেন ‘আমরা কারো কাছে যাব না, আমাদের কাছে আসবেন।’ গুতারেসকে নিয়ে এসে তার ওই কথার যথার্থতার প্রমাণ ইতিমধ্যে রেখেছেন। এটাও তার একটা বড় সফলতা। 

আরো একটা কাজ তিনি গুতারেসের মাধ্যমে দিয়েছেন বিশ্বকে। সেটা হলো ভারতীয় মিডিয়ায় পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। এটাতে প্রায় সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। গুতারেস সেখানেও ম্যাসেজ দিয়েছেন। এবং যেসব ইস্যুতে মিথ্যাচার হচ্ছে সেগুলো যে সঠিক নয় সে কথাও তিনি বলেছেন। 

বাংলাদেশের উদারতার ভূয়াসী প্রশংসা করেন গুতারেস। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ।’

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বজুড়ে অনেক সীমান্তই বন্ধ। আপনারা যে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণ করা উচিত।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা যে আতিথেয়তার সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের জীবনে এর অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, ‘এটি দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম নিখুঁত গণতন্ত্রে পরিণত করতে সাহায্য করবে।’ 

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভুয়া তথ্য মোকাবেলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের প্রয়োজন। বিশেষ করে একটি বিষয় মোকাবেলা করতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তা হলো ভুয়া তথ্য, যা আমাদের হত্যা করছে।’

 গুতারেস বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়াতে সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে।’ জাতিসংঘ প্রধান বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত।

গুতারেস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে জনগণের বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে আপনাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা।’

গুতারেস বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তি, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার প্রতি তার অঙ্গীকারের মাধ্যমে এসব মূল্যবোধের জীবন্ত প্রতীক।

শেয়ার করুন