৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২৫:৫৩ অপরাহ্ন


যে কোনো মুহূর্তে মুক্তি বাবরের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
যে কোনো মুহূর্তে মুক্তি বাবরের লুৎফুজ্জামান বাবর


চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবারের এই রায়ের ফলে লুৎফুজ্জামান বাবরের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। খালাসপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন-মহসিন তালুকদার, একেএম এনামুল হক, রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও নূরুল আমিন। ফলে যে কোনো সময় মুক্তি পেতে যাচ্ছেন সাবেক এ স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী। এতে করে যে কোনো মুহুর্তে মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপির এ নেতা। 

এছাড়া ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বডুয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে আসামী আকবর হোসেন, লেয়াকত হোসেন, হাফিজুর রহমান ও শাহাবুদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর মৃত্যুর কারণে যে চারজনকে এই মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- আব্দুর রহিম, মতিউর রহমান নিজামী, দ্বীন মোহাম্মদ ও হাজী আব্দুস সোবহান। এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় দেন বলে জানায় বাসস।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়া আসামী পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান। আসামী নূরুল আমিনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট সাধন কুমার বণিক।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে একটি ও অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ চোরাচালান মামলায় রায় দেন। বিচারিক আদালতের সে রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। অন্যদিকে, অস্ত্র আইনে করা পৃথক মামলায় একই আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

বিচারিক আদালতের এই রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে গত ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত এ হাইকোর্ট বেঞ্চ চোরাচালান মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন তালুকদার, সিইউএফএল’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিনকে খালাস দেন। এছাড়া সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী মৃত্যুবরণ করায় মামলা থেকে অ্যাবেট করে তাদেরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। তবে এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম মৃত্যুবরণ করায় মামলা থেকে অ্যাবেট করলেও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

এছাড়া চোরাচালান মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। আর মৃত্যুদণ্ড থেকে ডিজিএফআই’র সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এনএসআই’র সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআই’র সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান, অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

শেয়ার করুন