৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৭:৩১ অপরাহ্ন


নির্বাচন পাশ কাটানোর চক্রান্ত নসাৎ করল বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৪
নির্বাচন পাশ কাটানোর চক্রান্ত নসাৎ করল বিএনপি বিএনপির দলীয় পতাকা


দেশে রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে পাশ কাটাতে একটি মহলের গভীর চক্রান্ত ভুন্ডুল করে দিয়েছে বিএনপি। আপাতত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের দিকে নজর না দিয়ে আবারও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ধাবিত করার চক্রান্তও ওই চক্রটির। তবে বিএনপি’র কঠোর নজরদারির পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সে-ই চক্রান্ত মাঠে মারা পড়েছে। এসব খবর পাওয়া গেছে রাজনৈতিক মাঠ থেকে। 

কী সে পরিকল্পনা

দেশ মহাসঙ্কটে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে যেকেনো মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ রয়েছে মহাসঙ্কটে। এর পাশাপাশি চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের পরিসর বাড়ানো ফাঁদ পাতে একটি মহল। জানা গেছে, দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে না হেঁটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আরো পরিসর বাড়ানো সুপারিশ করা হয় ওই চক্রটির মাধ্যেমে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদেরও সম্পৃক্ত করার কথা উঠে। এমননি অন্তর্বর্তী সরকারের বিএনপি’রই অধিকাংশ প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাকে উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়ার লোভনীয় সুপারিশ করা হয় চক্রটির পক্ষ থেকে। বলা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের নামেই থাকবে। তবে তা হবে জাতীয় সরকারের আদলেই একটি অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সে-ই বহরে প্রায় প্রধান প্রধান দল থেকে শীর্ষ নেতাদের ভিড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় সরকার চলমান রাখা যায়।

কেন এমন চক্রান্ত?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি’সহ মাঠে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষদের নিয়ে সে-ই ধরনের সরকার গঠন করা গেলে অনেক ধরনের বেনিফিটের লোভনীয় প্রস্তাব ছুড়ে দেয়া হয়। এধরনের চক্রান্তের কারণ ছিল দেরিতে নির্বাচনের দিকে দেশকে ঢেলে দিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সাথে দেড়যুগ ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমমনা বিশিষ্ট জনদের মধ্যে হতাশা ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে এমন সরকার হলে মাঠে ওই চক্রটি যে দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের দাবি তুলেছে তাতে হাওয়া পাবে। দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার করেই দেয়া হবে নির্বাচন-এমনটাই ছিল পরিকল্পনায়। এসময় চলমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বোঝানো হয় যে, পদে পদে সংস্কার করা হলে মাঠ প্রশাসন আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে..। অর্থ্যাৎ আবারাও সে-ই দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের পথে চলতে কৌশলে সরকারকে পরিচালনা করা ছিল চক্রান্তর অংশ। 

চেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারকেও বিতর্কিত করা

এর পাশাপাশি চক্রান্তের আরেকটি অংশ ছিল দীর্ঘমেয়াদী মেয়াদী সংস্কারের দিকে নিয়ে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও বেকায়দায় ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা। কারণ এধরনের পদক্ষেপের ফলে প্রথমে কিছুটা সুবিধা দেখালেও পরিবর্তিতে সব দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে এনে পুরো ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে ফেলা হবে। এতে নির্বাচন যেমন পিছিয়ে যাবে তেমনি আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি হবে। 

বিএনপি’র না বলায় ভেস্তে গেলো সে চক্রান্ত

কিন্তু খো্জঁ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বহুমাত্রিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয় তাকেই কাজে লাগিয়ে বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ে মাথাভারি করা হয় যেনো দলটি আপাতত নির্বাচনের দাবি থেকে পিছু হটে। তারা আপাতত ঐক্যমতের আদলে একটি সরকার গঠনে ভূমিকা রাখে এবং তা-তে অংশ নেয়। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রেখেই একটি ঐক্যমতের সরকারের বিএনপি’কে রাজি করানো চেষ্টা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সে-ই বৈঠকেই বিএনপি’র পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় যে, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে। আর এটা হয়ে গেলে আর ষড়যন্ত্র করার সাহস কেউ পাবে না। এর পাশাপাশি সব ধরনের ষড়যন্ত্রও বিএনপি মোকাবেলা করতে সচেষ্ট রয়েছে বলে জোর দেয়া হয়। জানিয়ে দেয়া হয় যে,জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে, তাদের ষড়যন্ত্রকেও এ দেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে বিএনপি মোকাবিলা করবে। সাফ সাফ বলে দেয়া হয় যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু তৈরির বিষয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় বিএনপি’র সহযোগিতা থাকবে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে আরো জানিয়ে দেয়া হয় যে, জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই সরকার ওয়াদাবদ্ধ। জনগণ রোডম্যাপ পেয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করার সাহস পাবে না। তা-ই এদিক সেদিক না করে দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনই শ্রেয় বলে ইউনুস সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। 

আরো যে কারণে বিএনপি’র না

জানা গেছে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস’কে একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেয়া হয় সে-ই ঐক্যমত্য সরকারের প্রস্তাব। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দলটি জানে বিএনপি কোনোভাবেই জাতীয় সরকারের ব্যানারে রাজি হবে না, হলে প্রথমেই হতো। আর একারণে তা-ই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বেই অন্তর্বর্তী সরকারের পরিসর বাড়িয়ে একে রাজনৈতিক চরিত্র দেয়া দেয়ার চেষ্টা করা হয়। বিএনপি’র একটি সুত্র জানায়. তারা বুঝে ফেলেছে যে, দলটি এমন প্রস্তাব দিয়েছে তাদের খারাপ উদ্দেশ্য রয়েছে। বিএনপি মনে করে, এমন ফাঁদে পা দিলে চক্রটি তাদের সে কৌশলের মাধমে আরো প্রশাসনের কাছে চলে যেতে পারবে। কেননা ওই দলটি জানে তারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা পাবে বা। তাছাড়া ওই দলটির দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বর্তমানেও নানান ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে দলটি কোনো সহানুভতিই পায়নি, তাদের সাম্প্রদায়িক ও অতীত কর্মকান্ডের কারণে। তাছ্ড়াা বিএনপি’র নেতারা মনে করেন, ওই চক্রটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে ভর করেছে মানুষের কল্যাণে না, তাদের দলের লোকজনকে প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে বসিয়ে দিতে। যেনো ভবিষ্যতে যে কোনো পরিস্থিতি তাদের অনুকূলেই থাকে। কেননা এমনতিতো দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনৃুষ্ঠিত হলে কোনোভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার মতো আসন পাবে না। আর তাই ঐক্যমত্যের একটি সরকার গঠন করে বেশ কয়কটি মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নিয়ে তাদের ভবিষ্যত ছক মতো দ্রুত সব বাগিয়ে নিতে পারবে। জানা গেছে, এমন চক্রান্তের টের পেয়ে বিএনপি দেশে একটি নির্বাচিত সরকার গঠনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। রাজনৈতিক সরক্রাকই প্রাধান দিয়েছে, দিয়েও যাচ্ছে। কেননা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দিকে নিয়ে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে। তবে বিএনপি’র নেতারা আরো মনে করেন, এতে করে শুধু অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত হয়ে যাবে না,আরও বিপর্যয় নেমে আসবে দেশে। কেননা কোনো ধরনের বির্তক বা ব্যর্থতা দীর্ঘ ১৭বছর ধরে ফ্যাসিবাদি শাসকদের সরাতে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যে সময়োচিত সাহসী ভূমিকা নিয়েছিল তা প্রশ্নবিব্ধ হয়ে পড়বে, তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হবে। আর এসব কারণগুলি বিএনপি আঁচ করতে পেরেই চক্রটির চক্রান্তে পা দেয়নি, তা-কে বেশি দূর গড়াতে দেয়নি বলে দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে। 

শেয়ার করুন