৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১০:০৪ অপরাহ্ন


আদালত ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ প্যারোল প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৪
আদালত ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ প্যারোল প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে অভিবাসীদের বিক্ষোভ


গত ২৬ অগাস্ট সোমবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত টেক্সাসের ইউএস ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জে. ক্যাম্পবেল বার্কার পরবর্তী ১৪ দিনের জন্য ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ প্যারোল ইন প্লেস প্রোগ্রামের জন্য ফেডারেল সরকারকে অনুমোদন প্রদান থেকে বিরত রাখতে প্রশাসনিক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। তবে তিনি এটি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও কর্মকর্তারা প্রক্রিয়া করতে পারবে না, তবে প্রোগ্রামের অধীনে আবেদন গ্রহণ করতে পারবে।

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র নারি কেটুডাত ২৭ অগাস্ট মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন যে তার সংস্থাটি প্রক্রিয়ার অধীনে মামলাগুলির অনুমোদন বন্ধ করেছে। তিনি বলেন,‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ মার্কিন নাগরিকদের এবং তাদের পরিবারগুলিকে বিচ্ছিন্নতার ভয়ে ছাড়াই বসবাস করতে সক্ষম করে, যা মৌলিক আমেরিকান মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। “ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাবে, যা আমাদের আদালতে ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ নীতির পক্ষে লড়াই করার সময় আবেদন গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

সাবেক ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের অভিবাসন পরামর্শক স্টিফেন মিলার, যার গ্রুপ আমেরিকা ফার্স্ট লিগ্যাল এই মামলায় টেক্সাস এবং অন্যান্য জিওপি-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলির সাথে যুক্ত হয়েছেন তিনি সোমবারের আদালতের আদেশের প্রশংসা করেছেন। মিলার একটি বিবৃতিতে বলেছেন,এটি আমাদের আদালতের লড়াইয়ে একটি বিশাল বিজয় যা বিডেন-হ্যারিসের নির্বাহী আদেশকে অবৈধভাবে আমেরিকার নাগরিকত্বের পথে নিয়ে যাচ্ছে ।

২৭ আগস্ট মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, টেক্সাসের একক ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট দ্বারা দেওয়া রায় ভুল।এই পরিবারগুলোকে অযথা বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়, বাইংডেন যোগ করেন। তারা একত্রে থাকার সুযোগ পাওয়া উচিত, এবং আমার প্রশাসন তাদের পক্ষে লড়াই করা বন্ধ করবে না।

এর আগেংং টেক্সাসসহ ১৬টি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন স্টেটগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিবাহিত স্বামী/স্ত্রীদের আইনি স্থায়ী মর্যাদা দেওয়ার কর্মসূচি ‘প্যারোল ইন প্লেস’ অসাংবিধানিক ঘোষণার আবেদন করে মামলা দায়ের করেছে ফেডারেল আদালতে। মামলাটি ২৩ অগাস্ট শুক্রবার টেক্সাসের টাইলার ফেডারেল আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত মামলাটি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরকাস এবং অন্যান্য বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ‘স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ একটি নাগরিকত্বের পথ তৈরি করেছেন। মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্যারোলের অপব্যবহার করছে। এ কর্মসূচির অধীনে গত ১৯ আগস্ট সোমবার থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস। অনেক অভিবাসী যারা আইনতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিয়ে করেছেন, তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘প্যারোল ইন প্লেস’ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়া তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতিও দেবে। সেই সঙ্গে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করতে এবং শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্বের পথে যেতে সক্ষম হবেন।

ফ্লোরিডা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাশলি মুডি এক বিবৃতিতে বলেন, ফ্লোরিডা স্টেট ‘প্যারোল ইন প্লেস’ নীতির বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন বাইডেন প্রশাসন ‘প্যারোল’ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের উন্মুক্ত সীমান্ত নীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ মামলায় সহ-আইনজীবী হিসেবে কাজ করছে কনজারভেটিভ অলাভজনক সংগঠন আমেরিকা ফার্স্ট লিগ্যাল, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র মাইরা আলেজান্দ্রা বলেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কোর্টে ‘কিপিং ফ্যামিলিস টুগেদার’ প্রোগ্রামটি রক্ষা করবে এবং ইতিমধ্যে জমা দেওয়া আবেদনগুলো প্রক্রিয়া করতে থাকবে। এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাঞ্জেলো ফার্নান্দেজ হের্নান্দেজ রিপাবলিকানদের ‘রাজনীতি খেলা’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং মামলাটিকে পরিবারের বিচ্ছেদের আরেকটি রূপ বলে অভিহিত করেছেন।

এফডব্লিউডি-ইউএস নামক দ্বিদলীয় অভিবাসন এবং অপরাধমূলক বিচার সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, এ কর্মসূচি আইনসম্মত। এ মামলার পেছনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো পরিবারের বিচ্ছেদ ঘটানো এবং নৃশংস রাজনীতির সুযোগ নিয়ে বিচারককে অভিবাসনবিরোধী আন্দোলনের পক্ষপাতিত্ব করার আশায় মামলা করা। জাস্টিস অ্যাকশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক কারেন টামলিন এ আইনি চ্যালেঞ্জকে অপ্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ও নিষ্ঠুর। তিনি বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এখন পর্যন্ত কিছু পরিবর্তন হয়নি, প্রক্রিয়াটি এখনো খোলা রয়েছে এবং আবেদন গ্রহণ করছে। এ কর্মসূচির যোগ্য হওয়ার জন্য, অভিবাসীদের অবশ্যই অন্তত ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতে হবে এবং কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অপরাধমূলক ইতিহাস নেই, তা প্রমাণ করতে হবে। আবেদনকারীকে ৫৮০ ডলার ফি দিতে হবে এবং একটি দীর্ঘ আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। যদি আবেদন অনুমোদিত হয়, আবেদনকারীদের তিন বছরের সময় দেওয়া হবে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে। সে সময়ের মধ্যে তারা কাজ করতে সক্ষম হবেন। প্রশাসনের মতে, প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ কর্মসূচির জন্য যোগ্য হতে পারে এবং তাদের প্রায় ৫০ হাজার সন্তানও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ কর্মসূচি চালু হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত লোকদের জন্য গ্রিনকার্ড পাওয়া জটিল ছিল, এমনকি তারা একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত হলেও। তারা প্রায়ই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হতো, যা অনেক সময় বছর ধরে চলতে পারে এবং তারা সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকতো যে, তাদের আর ফিরে আসার অনুমতি না-ও দেওয়া হতে পারে।

টেক্সাসের মামলায় বলা হয়েছে, স্টেট অবৈধভাবে অবস্থানরত শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা প্রদান করতে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে। এছাড়াও টেক্সাস স্টেট প্রতি বছর বেড়ে যাওয়া অপরাধ, বেকারত্ব, পরিবেশগত ক্ষতি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণে তার স্টেট কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। কর্মসূচির উপকারভোগীরা কর্ম অনুমোদনের যোগ্য হবেন, সেই অতিরিক্ত কর্মীরা টেক্সাসের বাসিন্দাদের মজুরি কমিয়ে দেবে, যা রাজ্য এবং তার নাগরিকদের সরাসরি ক্ষতি করবে বলে মামলার আবেদনে বলা হয়েছে। আমেরিকানস ফর ইমিগ্র্যান্ট জাস্টিসের অভিবাসন আইনজীবী ইভলিন উইজ এ মামলাটিকে একটি ‘আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে বছরের পর বছর ধরে তাদের সম্প্রদায়ে অবদান রাখা পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, এ পরিবারগুলোকে ছিন্ন করতে এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আইনি মর্যাদা লাভের পথ থেকে বিরত রাখতে চাওয়া নিষ্ঠুর এবং অভিবাসনবিরোধী চরমপন্থার প্রতিফলন।

রিপাবলিকানরা এ কর্মসূচিকে নির্বাচনী বছরে বিতর্কিত করে তুলছে। যেখানে অভিবাসন তাদের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ইস্যু। অনেক রিপাবলিকান এ নীতির বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এটি মূলত আইন ভঙ্গকারী মানুষদের জন্য। টেক্সাস অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটন এক বিবৃতিতে বলেন, এ পরিকল্পনা সংবিধান লঙ্ঘন করছে এবং টেক্সাস ও আমাদের দেশের ক্ষতি করছে-এমন অবৈধ অভিবাসন দুর্যোগকে আরো খারাপ করছে।

শেয়ার করুন