অবশেষে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার যে প্রয়োজনীয়তা সেটার পূর্ণতা পেতে চলেছে। হাসিনা সরকারের আমলে বারবার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার আবেদন নাকচ হওয়ার পর রীতিমতো হতাশ ছিলেন খালেদা জিয়া ও তার পরিবার। একই সঙ্গে বিএনপিও সরকারের সমালোচনায় ছিলেন সোচ্চার। দেশ-বিদেশেও এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় পতিত হাসিনা সরকারের। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার করেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতায় গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর পরই তার মামলা থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করেন। এদিকে প্রায় ১৭ বছর পর বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব সচল হয়েছে। এখন লেনদেন করতে কোনো বাধা নেই।
একই সঙ্গে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার দ্বারও উন্মোচিত হয়। অসুস্থ খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। কিন্তু দেশেই চিকিৎসা করানো ভিন্ন উপায় ছিল না।
বিএনপি সূত্র জানায়, লিভার প্রতিস্থাপনসহ জটিল সমস্যাগুলোর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড, পরিবারের সদস্য ও দল থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির একটি মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে চিকিৎসা করাবেন তিনি। এর আগে চেকআপ করে খালেদা জিয়ার জটিলতাগুলো কমানো হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে যাবেন। তবে কোথায়, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তা চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি জানান, দেড় মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। কয়েকদিন ধরে তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। তাকে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। সিসিইউ সুবিধার কেবিনে তার চিকিৎসা চলছে। তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে সহসাই তাকে নিয়ে উড়াল দেবে বিমান বিদেশে চিকিৎসার জন্য।
খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক হিসাব দীর্ঘ ১৭ বছর পর সচল
দীর্ঘ ১৭ বছর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক হিসাব সচল করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা (সিআইসি) থেকে গত ১৯ আগস্ট সোমবার খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক হিসাব সচল করার বিষয়ে একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরামর্শ করার পর এনবিআরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মিত খরচ চালানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহিদ মইনুল রোডের শাখা থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলতে পারতেন তিনি। প্রথমদিকে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ টাকা। পরে টাকার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছিল। এরপর নির্বাচনে জিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে তার হিসাব খুলে দেওয়া হয়।