৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন


এমপি-নেতাদের পালানো টেরই পাননি হাসিনা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৮-২০২৪
এমপি-নেতাদের পালানো টেরই পাননি হাসিনা শেখ হাসিনা


আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা ধরনের কৌতুহলের পাশাপাশি একটি প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে। জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে, কেনো কিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদ থেকে পদত্যাগের আগে ভাগেই একান্ত ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী, দলের নেতাসহ বেশ কয়েকজন তথাকথিত শুভানুধ্যায়ীরা আগে-ভাগেই দেশ ছেড়ে পালাতে থাকেন? কে তাদের আগে ভাগে জানিয়ে দিয়েছিল যে আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা? কেনো এমন আশঙ্কার খরব শেখ হাসিনা ঘুনাক্ষরেও টের পেলেন না? কার ভরসায় তিনি কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ পুরো ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে চলে গেলেন। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর খবর বেরুচ্ছে যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর তার মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন না। দেশ ছেড়ে পালানোর শুরুর কর্মকান্ডে রীতিমত হিড়িক পড়েছে। কেউ দেশ ছাড়ছেন একান্ত আপনজনকেই একা ফেলে। কেউ আবার শক্ত চ্যানের ম্যানেজ করে সপরিবারেই দেশ ছেগে চলে যাচ্ছেন। এই সব তালিকায় শুধু মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালীই নয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও আছেন, যারা একসময়ে পুরো দেশ দাবড়িয়ে বেড়িয়েছিলেন।

পালানো শুরু হয় জুলাই থেকে 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের বড় অংশ জুলাইতেই দেশ ত্যাগ শুরু করতে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পুরো জুলাই মাসে রাজধানী ধীরে ধীরে অচল হয়ে যেতে থাকে তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) একর পর এক স্বতঃস্ফূর্ত কর্মসূচি কারণে। জানা গেছে, এসব দেখে অতি বুদ্ধিমান কৌশলী মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের একটি অংশ পালানো শুরু করেন। পুরো জুলাইতে তারা সটকে পড়েন। অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগের একটি বড়ো অংশ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তাদের সরকার আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের সাথে পেরে উঠতে পারবে না। কেননা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছিল বিশ্বের অন্যতম দুই শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে ইউরোপী ইউনিয়নও (ইইউ) বিবৃতিতে জাতীয় নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বিবৃতি দেয়। আর তাই ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপ হতে বাধ্য, আর তাতে শেখ হাসিনা কোনো ভাবে টিকবেন না। সেজন্য তারা জুলাইতেই একে একে পালাতি প্রতিযোগিতা নামেন। 

এখন কিভাবে দেশত্যাগ হচ্ছে

তবে প্রশ্ন হচ্ছে এখন কিভাবে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদে করে চলে যাচ্ছেন মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ওইসব শীর্ষ নেতারা? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সেইসব শীর্ষ নেতারা আগে ভাগেই দেশ ছাড়া পরিকল্পনা নিয়ে রেখিছিলেন। বিভিন্ন ধরনের পথ করে রেখেছিলেন বৈধ উপায় অবলম্বন বা নানান ধরননের কৌশল করে। কাগজপত্র সঠিক থাকায় কারণে কারো কারো পক্ষে দেশ ছাড়ার পথে কোনো আইন কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। বিপুল অর্থ বৈভব হয়েছে। এখন বাংলাদেশে আর থাকার দরকার নেই। এমন মতের অধিকারী মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ওইসব শীর্ষ নেতারা তাদের বিদেশ থাকা বা সেকেন্ড হোমের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও কি আগে ভাগেই জানতেন যে তাদের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবেই বা হতে যাচ্ছে? কৌতুহল জাগছে সব মহলে এই বলে যে হাসিনা সরকারের পতন হবে এটা এসব নেতারা জানতেন। আর এইজন্যই কি পট-পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পথটি শেখ হাসিনার আগেই বাতলিয়ে রেখেছিলেন তারা?

শেখ হাসিনা কি জানতেন না?

প্রশ্ন হচ্ছে আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেই হবে? ক্ষমতা ছাড়তে হবে? এমনটা কি শেখ হাসিনা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি? তিলে তিলে ১৭ বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে দলের লোকজনকে নিয়োগ-পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ধরনের আস্কারা দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে রেখেছিলেন বলে যে খবর শোনা তা-রই বা কি হলো? কেনো এসব প্রশাসনের লোকজনসহ মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের একটি অংশের এভাবে দেশ ছাড়ার খবরটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কানে তুললেন না? এ ব্যাপারে প্রশাসনের একজন শীর্ষ নেতারা দেশ প্রতিনিধির কাছে পাল্টা জানতে চান, কে কা-কে জানাবে? সব্বাইতো পালাতে ব্যস্ত, দেষ ছাড়তেই ব্যস্ত ছিল। মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের একটি বড়ো অংশই বুঝে গেছে যে তাদের সরকার আর ক্ষমতা থাকছে না। তাই যে যার মতো ছুটে পালিয়েছে, এবং কারো কারো মতে, পালানোর সব পথ আগেভাগেই করে রেখেছিল। আবার কারো কারো মতে, মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের পালানোর খবরটি শেখ হাসিনার কানে আসেনি বা জানায়নি কেউ পাছে নিজের যাওয়া আটকে যায়। আবার কারো কারো মতে দেশ দলের প্রভাবশালীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে- এমন খবর যখন শেখ হাসিনার কানে এসেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, তার আর করারই কিছু ছিল না। 

শেষ কথা

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় শেষের দিকে অর্থ্যাৎ ৪-৬ আগস্ট প্রায় ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনায় ২৩ দিনে শুধু ঢাকায় অন্তত ২৮৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামির সংখ্যা প্রায় দুই হাজার বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। অন্যদিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে সাড়ে চার লাখ। বলা হচ্ছে যে গত ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো হয়। আর এসব মামলায় প্রায় ৩ হাজার ৫৮ জনকে গ্রেপ্তারও করে ফেলা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে পুরো দেশজুড়ে এমন আন্দোলনের অবস্থা আগে ভাগেই টের পার দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগের নেতারা। জানা গেছে ওই সময়ে দেশের এমন অবস্থা টের পেয়ে দলের লোকেরা পালিয়ে যাওয়ার হিড়িকের কারণে রাজনৈতিকভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করা যায়নি। অন্যদিকে শেখ হাসিনাও মাঠের অবস্থা টের করতে পারেননি বা তাকে অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে বা পালিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি একা পড়ে যান। পাননি সঠিক তথ্যইটি তার হাতে গড়া দলীয় ব্যানারের প্রশাসনকে।

শেয়ার করুন