কোটা আন্দোলনের দাবির সফল বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আজ থেকে ‘সর্বাত্মকভাবে রাজপথে’ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ‘নির্মম’ হামলার পর গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ জুলাই একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আজ (১৬ জুলাই) থেকে কোটাপ্রথা বাতিলের এই আন্দোলনে সব সময় মাঠে থেকে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। একই সাথে ছাত্রদল আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থীদেরকে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা মূল ইস্যু তথা অবৈধ ফ্যাসিবাদী এই সরকার হটিয়ে প্রকৃত চেতনা তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক একটি সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”
একই সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে ’অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রী ‘কটূক্তি’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগসহ পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই বুধবার সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে পর ছাত্রলীগের প্রতিবাদে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।
‘সাংগঠনিকভাবে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদল থাকবে’
কোটা আন্দোলনের ছাত্র দল রাজপথে থাকবে কিনা জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে ব্যানারে যেদিন থেকে সভা-সমাবেশ শুরু করছে তখন থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনের সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রদল সর্বাত্মকভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদলের কোনো তৎপরতা নেই, সাংগঠনিকভাবে আমাদের কোনো সস্পৃক্ততা নেই। আগামীতেও আমরা সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনে কোনো তৎপরতা করবো না। কিন্তু বরাবরের মতো অবশ্যই আমরা তাদের পাশে থাকবো।”
কিভাবে আছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনারা গতকাল নিউজ করেছেন, শহীদুল্লাহ হল ও কার্জন হলে হামলা হয়েছে সেখানে ছাত্রদলের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিলো। অধিকাংশ মিডিয়াতেও অনেক যে আহত হয়েছে তারও নিউজ করেছেন, বিগত সময়ে আপনাদের নিউজে এটা (আমাদের নেতা-কর্মীরা আছে) উঠে এসেছে। আপনাদের মাধ্যমে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, ছাত্রদল ক্রেডিট নিতে চাচ্ছে না। আমরা চাই, এই যৌক্তিক আন্দোলনের শেষ পরিণতি হোক। আমরাও চাই এই বৈষম্যমূলক কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা প্রথা বিলুপ্ত হোক, তাদের দাবি পূরণ হোক।”
কেনো সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে না জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘‘ আজকে আমরা যদি কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যানারে নেতা-কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি সেটাতে আন্দোলন ভিন্নখাতে চলে যাবে। সেজন্য আমাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের ইস্যুতে ছাত্র দল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেই সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করবে। এতে কে কি বললো আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা আমাদের মতো করে তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি, সর্বাত্মকভাবে তাদের পাশে রয়েছি, সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকব।” গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, গত ১৫ জুলাই দিনের বেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা হয়েছে, রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েওে হামলা হয়েছে। নির্মম এসব হামলার ঘটনা। এসব হামলায় একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, যুদ্ধের ভেতরে একটি আইন থাকে, ইন্টারন্যাশনাল হিউমেনেটিরিয়ান ’ল। সেটি হচ্ছে যে, যুদ্ধের মধ্যে হসপিটাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনি হামলা করতে পারবেন না। কিন্তু আমরা দেখেছি, ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করার পরে যারা আহত হয়েছে তাদের ঢাকা মেডিকেলের ইমাজেন্সিতে গিয়ে হামলা করেছে। এটি স্বাধীনতার পরে আমাদের ছাত্ররাজনীতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েছে। এটি শুধু আন্তর্জাতিক আইনের ব্যত্যয় শুধু হয়নি, একই সাথে ফোজদারি অপরাধও হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ‘ডোর টু ডোর’ গিয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের টর্চার করেছে, ‘রুম টু রুম’ গিয়ে টর্চার সেলে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ সম্পাদক। এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে গণঅভ্যুত্থান আপনারা দেখছেন সেখানে ছাত্র দল প্রথম থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, আমরা এই সমর্থন আরও দিয়ে যাবো। আমরা বিশ্বাস করি কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সফল হবে এবং খুনি হাসিনার যত বাধাই আসুক ইনশাল্লাহ এই আন্দোলন সফল হবে।
গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে করে কটূক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যে হিংসাত্মক কটূক্তি করেছেন আমরা ছাত্রদল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে এই রকম বক্তব্য প্রদানের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছি। কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের প্রতি ‘ঘৃণা ও ধিক্কার’ প্রকাশ করেন ছাত্রদল সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।