৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৮:০৫ অপরাহ্ন


স্মরণ-শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশে দেলোয়ার
ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউয়ের নাম দিদার অ্যাভিনিউ করার দাবি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউয়ের নাম দিদার অ্যাভিনিউ করার দাবি বক্তব্য রাখছেন জোহরান মামদানি


ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলামের পেশাগত সাহসিকতাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলাম অ্যাভিনিউ’ করার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ১ আগস্ট জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউসংলগ্ন মেজর মার্ক পার্কে শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশ হয়েছে। এ সমাবেশের আয়োজক সংগঠনের অন্যতম ‘জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার সিটির সম্ভাব্য মেয়র জোহরান মামদানির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই আহবান জানিয়েছেন। অর্থাৎ সামনের নভেম্বরের নির্বাচনে মামদানি যদি বিজয়ী হন, তাহলে যেন রাস্তার নামকরণের অনুরোধটি রক্ষা করেন। গত ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় মিডটাউন ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত একটি ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে বন্দুকধারী শ্যানে তামুরার উপর্যুপরি গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৬ বছর বয়েসী বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম। তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ৩১ জুলাই ব্রঙ্কসে পার্কচেস্টার জামে মসজিদে। সে সময় নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিশনার জেসিকা টিশ দিদারের কর্মনিষ্ঠা ও সাহসিকতার প্রশংসা উচ্চারণের পর মরণোত্তর পদোন্নতির ঘোষণা দেন। প্রথম গ্রেডের ডিটেকটিভ হিসেবে দিদারের মরণোত্তর পদোন্নতির এ অনুরোধ সর্বপ্রথম জানিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।

‘শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশ’-এ বক্তব্যকালে ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র প্রার্থী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি ডিটেকটিভ দিদারের কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা করে বলেন, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে উদাহরণ তৈরি করে গেলেন ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলাম, তাকে ধারণ করতে হবে আমাদের সবাইকে, তাহলেই তার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানানো হবে, আজকের এ সমাবেশে নয়, সামনের প্রতিটি দিন এবং ক্ষণে। জোহরান উল্লেখ করেন, এর মধ্য দিয়েই বহুজাতিক এ সমাজে তথা সারা আমেরিকায় নিজেদের পেশাদারিত্বে সততা-নিষ্ঠার প্রকাশ ঘটিয়ে কমিউনিটি হিসেবে আমরাও যে আমেরিকার উন্নয়ন অভিযাত্রায় নিরন্তরভাবে সরব রয়েছি তার জানান দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমি প্রথমে ফোন করেছিলাম এবং নিউইয়র্ক এসে তার বাসায় যাই। আমি তার স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তার বোন আমাকে একটি প্রশ্ন করেছিল। আর সেই প্রশ্নটি ছিল-আমি এখন ভাইয়া ডাকবো কাকে? ঈদের সময় সে তার স্ত্রীর পাশাপাশি আমার জন্যই পোশাক ক্রয় করতো। এখন আমাকে ঈদে কে পোশাক ক্রয় করে দেবে? তার বাবার হাত আমি আমার হাতে নিয়েছি, আমি ফিল করেছি তার কী অবস্থা। তিনি সুরা আল বাকারার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আল্লাহ বলেছেন, তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। হয়তো সে পরীক্ষাই তিনি করছেন।

নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার বলেন, পেশাগতম দায়িত্ব পালনে দিদার ছিলেন সবার মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং উজ্জ্বলতম আমাদের কমিউনিটিতে। প্রতিদিনই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন এ সিটির নিরাপত্তার জন্যে। নগরবাসী, তথা এ দেশের নিরাপত্তা সুসংহত রাখার জন্য ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলামের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে। দিদার ছিলেন গৌরব আর অহংকারী আমেরিকান।

নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু ডিটেকটিভ দিদারের আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, দিদার ছিলেন উদীয়মান বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম তারকা।

এ সমাবেশের অন্যতম হোস্ট ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দিদারের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, ডিটেকটিভ দিদার ছিলেন আমাদের কমিউনিটির অহংকারের প্রতীক, এ সিটির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনরত অন্যদের জন্যে অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন সাহসী এ মানুষটি।

ইমাম ড. জাকির আহমেদ এবং শামসী আলী বলেছেন, মুসলিম আমেরিকানরা এই আমেরিকার সামগ্রিক নিরাপত্তায় জীবন বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠা করছেন না-দিদার তার অন্যতম উদাহরণ। এতদসত্ত্বেও মূলধারার মিডিয়াগুলো সুযোগ পেলেই মুসলিম আমেরিকানদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করতে দ্বিধা করে না। তারা উল্লেখ করেন, আমরা মুসলমানেরাও আমেরিকার অংশ এবং সে ভূমিকাতেই রয়েছি-এটা অস্বীকারের উপায় নেই।

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সংগঠন ‘বাপা’র সভাপতি এরশাদ সিদ্দিকী এবং সাবেক সভাপতি ক্যাপ্টেন করম চৌধুরী ডিটেকটিভ দিদাদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। তারা বলেছেন যে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত প্রতিটি সদস্যই সামগ্রিক নিরাপত্তায় নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা করেন না, দিদার ছিলেন তাদেরই একজন।

জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি প্রায় ২৫ বছর ধরে এ কমিউনিটিকে সার্ভিস দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছেন নিউইয়র্ক সিটির আগামী দিনের মেয়র জোহরান মামদানি, তার কাছে আমাদের দাবি দিদারুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউয়ের নামকরণ যেন দিদার অ্যাভিনিউ করা হয়। তিনি ধন্যবাদ জানান সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ভালোকে। কারণ ভালোও কমিউনিটির জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে।

সমাবেশে ইউএস সিনেটে বিরোধীদলীয় নেতা সিনেটর চাক শ্যুমারের প্রতিনিধি ছাড়াও দিদাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কথা বলেছেন কাউন্সিলওম্যান নাতাশা উইলিয়ামস, ভালোর প্রতিনিধি সামলা, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, মিলিন্ডা ক্যাটসের প্রতিনিধি রোকেয়া আক্তার প্রমুখ।

দিদাদের একজন আত্মীয় সমাবেশের আয়োজকসহ উপস্থিত সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সমাপনীতে ছিল মোমবাতি প্রজ্বালন এবং দিদাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ। সমগ্র অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ‘ভালো’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।

শেয়ার করুন