যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের দেওয়া ‘টিপসের ওপর কর’ তুলে দেবেন এবং এ পদক্ষেপটি তার সাম্প্রতিক ফেডারেল বাজেটে অন্তর্ভুক্তও করেছেন। যদিও এ ঘোষণাটি কর্মজীবী মানুষদের আকৃষ্ট করার একটি প্রচারমূলক কৌশল হিসেবেই বেশি বিবেচিত হচ্ছে, কারণ বাজেটের অন্যান্য অংশবিশেষ করে মেডিকেইড কাটা রেস্তোরাঁ কর্মীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। টিপসের ওপর কর না থাকা মূলত উচ্চ আয়ের রেস্তোরাঁ কর্মীদের উপকার করবে। কারণ জাতীয়ভাবে দুই-তৃতীয়াংশ রেস্তোরাঁ কর্মী এমন জায়গায় কাজ করেন যেখানে তাদের আয় করযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায় না। ফলে তারা এই করছাড় সুবিধার আওতায় পড়েন না। অন্যদিকে যারা পড়ে থাকেন, তাদের জন্যও এটি সীমিত মাত্রায় উপকারে আসবে। কারণ এই ছাড় শুধু ২৫ হাজার ডলারের মধ্যে প্রযোজ্য এবং এটি একটি ডিডাকশন, ফলে পে-রোল ট্যাক্স এখনো প্রযোজ্য থাকবে।
তবে সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, ট্রাম্পের বাজেটে থাকা চরম কাটছাঁটের ফলে রেস্তোরাঁ কর্মীরা যারা ইতোমধ্যেই ন্যূনতম মজুরির নিচে কাজ করছেন, তারা স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তার মতো মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রে টিপড শ্রমিকদের জন্য ফেডারেল সাব-মিনিমাম মজুরি মাত্র ২ ১৩ ডলার, যা ১৯৯১ সাল থেকে বাড়ানো হয়নি। এর ফলে এ শ্রমিকরা গরিবি রেখার নিচে দ্বিগুণ হারে বাস করেন এবং খাদ্যসংক্রান্ত সহায়তা (স্ন্যাপ) ও মেডিকেইডের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ট্রাম্পের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, স্ন্যাপ ও মেডিকেইড দুই খাতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হবে। এর ফলে রেস্তোরাঁ ও আতিথেয়তা খাতের ১২ লক্ষাধিক শ্রমিক তাদের স্বাস্থ্যসেবা হারাতে পারেন। বিষয়টি শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং সার্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। কারণ অনেক শ্রমিক অসুস্থ অবস্থাতেও কাজে যেতে বাধ্য হন, যা রেস্তোরাঁর গ্রাহকদের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে।
নিউইয়র্কে এখন এ সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে। নিউইয়র্ক স্টেটের ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা একটি বিলের সহপ্রণেতা হয়েছেন, যার মাধ্যমে স্টেট জুড়ে টিপড শ্রমিকদের জন্য সাব-মিনিমাম মজুরি বিলুপ্ত করা হবে এবং সব শ্রমিকের জন্য একটি একক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে, তার সঙ্গে টিপস থাকবে তার বাইরে এমন একটি বিল পাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আইনটি শুধু অর্থনৈতিক ন্যায় নিশ্চিত করবে না, বরং এক ঐতিহাসিক অন্যায় যার শিকড় দাসপ্রথার যুগেতা সংশোধনের পথে একটি সাহসী পদক্ষেপ হবে।
এ মুহূর্তে যখন জীবনের খরচ বাড়ছে ও সাধারণ মানুষের আয় স্থবির, তখন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো আরো বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটরা যদি এই আইন পাস করতে পারেন, তবে তা শুধু টিপড কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নেই অবদান রাখবে না, বরং স্পষ্ট বার্তা দেবে-ডেমোক্রেটিক পার্টি শ্রমজীবী মানুষের পার্টি, যেখানে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের বাজেট কেবল ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করে।
এ মুহূর্তে নিউইয়র্কের আইনপ্রণেতাদের সামনে একটি বিরল সুযোগ বলে রেস্তোরাঁ কর্মী মনে করেন। একদিকে শ্রমিকবান্ধব নীতির মাধ্যমে টিপড কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, অন্যদিকে ট্রাম্পের ভ্রান্ত ও লোকদেখানো প্রচারকে কার্যত প্রতিহত করা।