৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২৫:১২ অপরাহ্ন


এবার টিউলিপকাণ্ডে আওয়ামী লীগে হতাশা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
এবার টিউলিপকাণ্ডে আওয়ামী লীগে হতাশা ড. মূহাম্মদ ইউনূস ও টিউলিপ সিদ্দিক


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চান যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক-এমন খবরে হতবাক হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যদিও টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের কেউই না তারপরে-ও এমন খবরে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি বিব্রত-ও করেছে তাদের। কারো মতে, এটা বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এক ধরনের লজ্জাজনকও। 

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ। সম্প্রতি সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এদিকে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান করতে চান যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। এজন্য অধ্যাপক ইউনূসের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরের সময় তাঁর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কি আছে চিঠিতে

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় যে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে লেখা চিঠিতে চলমান বিতর্ক নিয়ে আলোচনা চান টিউলিপ। তাই আসছে সপ্তাহে অধ্যাপক ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় তাঁর সাক্ষাৎ চান টিউলিপ। লন্ডন সফরে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। চিঠিতে টিউলিপ আশা প্রকাশ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ‘দুদকের দ্বারা সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে’ সহায়তা করবে। টিউলিপ লিখেছেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। লন্ডনে জন্মেছি। এক দশক ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পদ বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। বাংলাদেশের প্রতি আমার হৃদয়ের টান রয়েছে। তবে এটা সেই দেশ নয়, যেখানে আমি জন্মেছি, বসবাস করেছি বা নিজের পেশাজীবন গড়ে তুলেছি।’

টিউলিপের কোনো চিঠি পাইনি

এদিকে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠি নিয়ে দেশ-বিদেশে জোর আলোচনা চললেও সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো চিঠি না পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ৮জুন রোববার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্ট দিয়েছেন। শফিকুল আলম লিখেছেন: ‘সরকার এখনো এ ধরনের কোনো চিঠি পায়নি। আমরা এমন কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না যা আমরা দেখিনি।’

অতএব দেখা হচ্ছে না

এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সর্বশেষ খবরে বলা হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক চিঠি দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি। 

তাহলে কি দাঁড়ালো শেষ-মেষ

অতএব সার্বিক খবরে যা-ই জানা যা-ক না কেনো একথা সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে যে কি হতে কি হচ্ছে? যদিও টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের কেউই না তারপরেও বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে লজ্জিত করেছে। বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, যার (টিউলিপ) খালা (শেখ হাসিনা) দিনের পর দিন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নাজেহালের মধ্যে রাখতেন তা-রই কাছে এমন ধরনা দেয়ার খবর খুবই অশ্বস্তিকর ও অপমান জনক। তাদের প্রশ্ন, নিজের খালার (শেখ হাসিনা) দ্বারা দিনের পর দিন এমন নোবেল একজন নোবেল বিজয়ীর প্রতি যে অবিচার অপমানজনক কার্যকলাপ চালানো হযেছিল তা-র বিরুদ্ধে কি টিউলিপ কখনো মুখ খুলেছিলেন? অথচ তার খালার আমলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড.অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কতই অভিযোগ আনা হয়েছিল। আর এসব অভিযোগের জন্য কখনো সামান্যতম প্রমাণ সামনে আনা হয়নি।

তবুও, বছরের পর বছর ধরে ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অপমানিত করা হয়েছে। ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে বারবার প্রতিবাদও জানানো হয়েছে, বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে ওই সময়ে বিশ্বের আটজন উদ্বিগ্ন নাগরিক, শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৮৩ ব্যক্তি ড. ইউনূসের পক্ষে যে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক টু-শব্দও করেননি।

অথচ এখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান করতে চান যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। জানা গেছে, এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দারুণ হতাশা প্রকাশ করছে। কেননা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিয়েছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালানো পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পুত্র সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের তথ‍্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়- এমন খবরেও তারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এখন টিউলিপ আওয়ামী লীগের কেউই না হলেও শেখ পরিবারের একজন হিসাবে এমন খবরে তাদেরকে আরও হতাশ করলো..।

শেয়ার করুন