৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৪:৪০ অপরাহ্ন


কিংবদন্তি কংগ্রেসম্যান চার্লস র‍্যাঞ্জেল প্রয়াত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
কিংবদন্তি কংগ্রেসম্যান চার্লস র‍্যাঞ্জেল প্রয়াত প্রয়াত কংগ্রেসম্যান চার্লস র‍্যাঞ্জেল


নিউ ইয়র্ক সিটির হার্লেম এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করা ডেমোক্র্যাটিক নেতা চার্লস র‍্যাঞ্জেল গত ২৬ মে সোমবার ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজের মুখপাত্র মিশেল স্টেন্ট এক বিবৃতিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে বলেন, র‍্যাঞ্জেল ছিলেন হার্লেম সম্প্রদায়ের দৃঢ় কণ্ঠস্বর, যিনি কংগ্রেসে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধিত্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হচুল, যিনি নিউ ইয়র্কে দুদিনের শোক ঘোষণা করেছেন।

চার্লস র‍্যাঞ্জেল, যিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন ‘চার্লি’ নামে, ১৯৭০ সালে প্রথমবার কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। তখন নতুন পুনর্বিন্যস্ত হার্লেমের ১৩ নম্বর কংগ্রেসনাল জেলা কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে একজন শক্তিশালী আইনপ্রণেতার উত্থান ঘটায়। এর আগেই তিনি কোরিয়ান যুদ্ধের একজন ভেটেরান হিসেবে সেবা দিয়েছেন। যদিও তিনি হাই স্কুল থেকে বাদ পড়েছিলেন, তবে পরে জি.আই. বিলের সহায়তায় নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট জনস ইউনিভার্সিটি থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। হার্লেমের লেনক্স অ্যাভিনিউয়ের প্রতি তার দীর্ঘ সম্পর্ক এবং এলাকার প্রতি অঙ্গীকারের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন ‘লায়ন অফ লেনক্স অ্যাভিনিউ’ নামে।

র‍্যাঞ্জেল১৯৭০ সালে হার্লেমের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ অ্যাডাম ক্লেটন পাওয়েলকে পরাজিত করে কংগ্রেসে প্রবেশ করেন। এরপর চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি নিজেও হয়ে ওঠেন আমেরিকান রাজনীতির এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন কংগ্রেসিয়নাল ব্ল্যাক ককাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নিউ ইয়র্ক ডেলিগেশনের ডীন এবং ২০০৭ সালে ইতিহাসের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে প্রভাবশালী ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির চেয়ারম্যান হন।

র‍্যাঞ্জেল আইন প্রণয়নের সাফল্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় এম্পাওয়ারমেন্ট জোন কর্মসূচি, নিম্ন আয়ের পরিবারদের জন্য আবাসন কর ছাড় এবং ২০১০ সালের অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্টের (ওবামাকেয়ার) রূপদান, যার সময় তিনি ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি কংগ্রেসে ৪০টিরও বেশি বিল এবং প্রস্তাবনার স্পন্সর ছিলেন, যা পরবর্তীতে আইন হিসেবে প্রণীত হয়।

সিনেটর চাক শুমার বলেন, চার্লি র‍্যাঞ্জেল ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি, একজন বিশ্বস্ত বন্ধু, এবং এমন একজন যিনি তার জনগণের পক্ষে কখনোই লড়াই থামাননি। তার কীর্তি অগণন, কিন্তু তার আসল উত্তরাধিকার-এই দেশকে আরও ন্যায়বিচারময় ও মানবিক করা।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস টুইটারে লিখেছেন, একজন প্রিয় বন্ধু এবং সাহসী নেতা হারানোর শোক বয়ে বেড়াচ্ছি। বিশিষ্ট অধিকারকর্মী রেভারেন্ড আল শার্পটন র‍্যাঞ্জেলকে আখ্যা দিয়েছেন একজন পথপ্রদর্শক আইনপ্রণেতা এবং আমেরিকান রাজনীতির অটল শক্তি হিসেবে।

প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, চার্লি ছিলেন আমার মেন্টর ও বন্ধু। তার হৃদয়ে ছিল হার্লেমের আগুন এবং আত্মায় ছিল আনন্দ, যা কোনো যুদ্ধে ম্লান হয়নি। তিনি কখনোই ভুলে যাননি তিনি কোথা থেকে এসেছেন।

চার্লস র‍্যাঞ্জেল ছিলেন গ্যাং অফ ফোর-এর শেষ জীবিত সদস্য। এই গোষ্ঠীর অন্য তিন সদস্য-ডেভিড ডিঙ্কিন্স, পার্সি সাটন ও বাসিল প্যাটারসন ছিলেন নিউ ইয়র্কের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনীতির পথিকৃৎ।

২০১৭ সালে র‍্যাঞ্জেল কংগ্রেস থেকে অবসর নেন। তার উত্তরসূরী অ্যাড্রিয়ানো এস্পাইলাট প্রথম ডোমিনিকান-আমেরিকান কংগ্রেসম্যান হিসেবে নির্বাচিত হলেও, র‍্যাঞ্জেল প্রকাশ্যে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন যে হার্লেম থেকে কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, বস্টনের মানুষেরা কি মেনে নেবে, কোনো দিন আর একজন আইরিশ কংগ্রেসম্যান থাকবে না?

কংগ্রেসিয়নাল ব্ল্যাক ককাসের ৬১ জন সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, চার্লস র‍্যাঞ্জেল আমাদের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যার উত্তরাধিকার গড়ে উঠেছে ন্যায়, সমতা এবং অদম্য নেতৃত্বের ওপর। তিনি শান্তিতে বিশ্রাম করুন। তার স্ত্রী আলমা র‍্যাঞ্জেল ২০২৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।

শেয়ার করুন