৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৭:০৭ অপরাহ্ন


গোপনে যেকোনো চুক্তি করা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
গোপনে যেকোনো চুক্তি করা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথিবৃন্দ


অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী ড. ইউনুসের সরকার একদিকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসন, লুটপাট, অর্থ পাচার, নির্যাতন ও হত্যা-গুমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছেন, অপরদিকে শেখ হাসিনার আমলে সম্পাদিত দেশের স্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, গোপনে যেকোনো চুক্তি সম্পাদন করা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। আমরা অনেকদিন ধরেই চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। লং মার্চও করেছি। এই লড়াই এখন আরও জোরালো করতে হবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ একথা বলেন। 

বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের উদ্যোগে ১৩ মে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূরাজনৈতিক প্রশ্ন’ নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সূচনা বক্তব্যে ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, জনগণ প্রত্যাশা করেছিল রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে জনআকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথেই সরকার হাঁটবে। সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের অনুগত নয়; স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূরাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছেন যা তাদের এজেন্ডা হওয়া উচিত নয়। বরং অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে অন্যান্য বিষয়ে এই সরকারের আগ্রহ বেশি। তাঁরা রাখাইনের সাথে ‘মানবিক করিডোর’, লাভজনক চট্টগ্রাম নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনার জন্য আমিরাতের কোম্পানিকে প্রদান, চট্টগ্রাম ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগের নামে কাতারকে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির প্রস্তাব ইত্যাদি নানা ইস্যু নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে যার সাথে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন অধিকার নেই।

সভায় উপস্থিত অন্যান্য বক্তাগণ দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। একইসাথে নেতৃবৃন্দ সরকারের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সকল বাম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে জাতীয় ভিত্তিতে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু, কেন্দ্রীয় সদস্য হারুন উর রশিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য রাখেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সভাপতি এএসএম কামাল উদ্দিন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আসলাম খান, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহবায়ক নাসির উদ্দীন আহমেদ নাসু, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, জাতীয় গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য মাইকেল চাকমা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের জামশেদ আনোয়ার তপন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন কমরেড নজরুল ইসলাম।

শেয়ার করুন