১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১২:৪৮ পূর্বাহ্ন


আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগনের সমর্থন চাই, চাই সকলের সহযোগিতা- তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৫
আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগনের সমর্থন চাই, চাই সকলের সহযোগিতা- তারেক রহমান


জাতীয় নির্বাচনে জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত’ করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানালেন তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে দলের বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘‘ মাফিয়া প্রধানের পালানোর পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসে্ছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়ত ঘনিয়ে আসছে। তাই দলকে কোনো ব্যক্তি নয় বরং দলকে এব্যাপারে ধীরে ধীরে আপনারা প্রস্তুত করুন। সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খীদের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, আপনারা যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখুন।”

একসঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক বলেন,‘‘ আমি গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়ে বলতে চাই, বিএনপি শুধুমাত্র আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়।আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যে সরকার আপনার কাছে, আপনাদের কাছে তথা দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।”

‘‘ আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগনের সমর্থন চাই, চাই সকলের সহযোগিতা।”

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের এলডি ভবন প্রাঙ্গনে বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু হয় যাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।

এই বর্ধিত সভায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভাচুয়ারি প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

২০১৮ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয় যেখানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেছিলেন।

‘শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিএনপি প্রশ্রয় দে্বে না’

তারেক বলেন, ‘‘ আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই.. তিনি বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দলের প্রতি আপনার, আপনাদের প্রতিটি নেতা-কর্মীর দীর্ঘদিনের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।”

‘‘ তারপরেও যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ জনগনই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য। বিএনপি জনগনকে বিশ্বাস করে, জনগনও বিএনপিকে বিশ্বাস করে।সুতরাং আপনার প্রতি আপনাদের প্রতি বিএনপির প্রতি জনগনের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে আপনারা জনগনের সঙ্গে থাকুন, জনগনকে সঙ্গে রাখুন।”

‘‘ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশের গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে, গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্খ বিপন্ন হয়।”

‘ভোটের বিকল্প নাই’

তারেক বলেন, ‘‘ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগনের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নাই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগনের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন।”

‘‘এই লক্ষে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বার বার জনগনের ভোটে জনগনের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠার করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।”

‘নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টাদের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর’

তারেক বলেন, ‘‘ বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা পোষন করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগনের জন্য হতাশার কারণও হয়ে উঠেছে।”

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্ম পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে।”

‘নির্বাচন বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশকে পূনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। একে সশ্সাত করার জন্য ইতিমধ্যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্ত পিছলে রাজপথে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।”

‘‘ জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি আজ দেশের কৃষক- শ্রমিক-জনতা, আলেম-উলামা-পীর-মাশায়েক তথা সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন আপনাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে তাদেরকে সর্তক থাকার আহ্বান এবং অনুরোধ জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘‘ যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমেনি। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগনের মাঝে এক ধরনের ধূম্রজ্বাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।

‘স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ সারাদেশে খুন-হত্যা-ধর্ষন-চুরি-ছিনতাই-রাহজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান সরকার এখনো মনে হয় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাংখিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেনো দেশের পরিস্থিতি কেনো আরও ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগনের কাছে বোধগম্য নয়।”

‘‘ গণতন্ত্রকামী জনগন মনে করেন, স্থানীয় নির্বাবন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পূনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থান আকাংখা বিরোধী, গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না, বিএনপি পা দিতে পারে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পূনর্বাসনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন।

‘‘ অবিলম্বে আগামী দিনগুলোর জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের ‍সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”

‘নতুন দলের আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে’

তারেক বলেন, ‘‘ গণহত্যাকারী মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এই পর্যন্ত বেশ অনেকগুলো নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানাই।”

তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহন কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগন। সুতরাং প্রতিটি দলের অংশগ্রহন একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত  রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পূঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতিমষ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয়ে্ছে।”

‘‘ নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের্ প্রতি আরও সর্তকতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।”

‘গণহত্যাকারীদের বিচার করবে বিএনপি।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘বিএনপি জনগনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আগামী নির্বাচনে বিএনপি জনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পূনর্বাসনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন।

‘‘ অবিলম্বে আগামী দিনগুলোর জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের ‍সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”

‘৩১ দফা : বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার সনদ’

তিনি বলেন, ‘‘ একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়।’

‘‘ সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেই সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রয়েছে। এমনটি এই ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।”

প্রধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর কর্ম অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে তৃণমূল নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন।

বর্ধিত সভার মূল মঞ্চে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বসেন। ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হন স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন।



শেয়ার করুন