৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৪:০৩ অপরাহ্ন


মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্ত অবস্থানে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্ত অবস্থানে বিএনপি বিএনপির দলীয় পতাকা


মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অবিচল থাকার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এই চেতনাকে ধারণ করে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই চেতনায় বিশ্বাসী সাচ্চা জাতীয়তাবাদীদের বিজয়ী করে করে আনতে চায় দলটি। 

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী দলমত নির্বিশেষে সকলকে একসাথে নিয়ে আগামী বাংলাদেশ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। দেশের ভেতরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক দল হিসাবে দলটি তাদের পুরোনো ইমেজকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। 

বিএনপি’র একটি সূত্র জানায়, দলটির হাইকমান্ড মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পারিস্পাশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য দলটিকে তার অতীত ইমেজকে পুনরুদ্ধারে সবধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। হাই কমান্ড মনে করেন, দলের উদার গণতান্ত্রিক আসাম্প্রদায়িক ইমেজকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। 

হাইকমান্ড মনে করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ভেতরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি’কে বাংলাদেশের একটি স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী দল প্রচার করে গেছে। এমনকি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রতিবেশী দেশ ভারতের তৃণমূল থেকে ক্ষমতাসীন মহল পর্যন্ত ধারণা দেয়া হয় যে, বিএনপি একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি। আর সেসময়ে একাজে ভারতের একশ্রেণীর প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সুচারুভাবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলি এই ধারণা দিয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি বিএনপি’র ছায়াতলে আছে। অন্যদিকে দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থাকতে পতিত আওয়ামী লীগ বিএনপি’কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি হিসাবে প্রচার করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অভিযোগ আছে তারা কোটি কোটি খরচ করে বানোয়াট উদ্ভট কাহিনী বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টারী বা তথ্যচিত্র তৈরি করে বিদেশী মিশনের কাছে তুলে ধরতো। আর এসব ডকুমেন্টারী বা তথ্যচিত্র দেখিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের বোঝানো হতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি মৌলবাদের স্বর্গরাজ্যে। একারণে বিএনপি এখন চায় তাদের পুরোনো ইমেজকে তুলে ধরতে। যে-ই ইমেজের কারণে ৯০’এর গণঅভুত্থানে দলটির পেছনে ছাত্র-জনতার স্রোত ছিলো অভাবনীয়।

 স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে বিএনপি’কে মতে করা হতো এটি আওয়ামী লীগের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অন্যতম একটি অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক দল। কেননা স্বাধীনতার পরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ্য হয়ে হিন্দু-মুসলমানসহ সবধর্মের মানুষ মনে করতো বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক আসাম্পদায়িক দল। যে দলটি’র বিরাট একটি অংশ দেশের ভেতরেই অবস্থান নিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এই বিএনপি’র বিরুদ্ধে মৌলবাদী গন্ধ লাগিয়ে দিয়ে দেশের ভেতর বাইরে একঘরে করে রাখার চক্রান্ত হয়েছে অতীতে- যা থেকে বিএনপি’র হাইকমান্ড এখন মুক্তির পথ খুঁজছে। বিশেষ করে ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীকারী জামায়াতে ইসলামের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি তার পুরোনো ইমেজ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক দল হিসাবে পরিচিত পাওয়ার বিষয়টি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। আর এসময়েই উদার গণতান্ত্রিক ভারধারায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি বড়ো অংশ বিএনপি থেকে ধীরে ধীরে সরে যায়। বলা যায়, দেশে বিদেশে বিএনপি হয়ে পড়ে বন্ধু ছাড়া বলা যায় মিত্রহীন। কেননা বিএনপি’কে সারা বিশ্বে তুলে ধরা হয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে।

এখন বিএনপি বদলাতে চায়

বিএনপি যে এখন দলটিকে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক দল হিসাবে তুলে ধরতে চায় তার বেশ কয়েকটি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা গেলো শিক্ষার্থীরা বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের দাবি তুলেছে। এব্যাপারে বিএনপি ঘোরতর আপত্তি রযেছে বলে মনে করে। বলা হচ্ছে, বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিলের ব্যাপারে মতামতকে যুক্তিসংগত মনে করছে না বিএনপি। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ হতে হবে বা থাকবে বাংলাদেশের ভিত্তি। সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেয়া হয়ে তাতে এমনটাই দেখা গেলো বিএনবি এই চেতনাকেই লালন করছে। এই জন্য খসড়ায় বলা হয়েছে যে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত উপযুক্ত বিচার করতে হবে। 

খসরায় দেখা গেলো বিএনপি ‘জাতীয় ঐকমত্যের ঘোষণাপত্রে সাতচল্লিশে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি শুরু করে একাত্তরে জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যা খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। অর্থ্যাৎ বিএনপি’র হাই কমান্ড এখান থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তাদের দল মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায়ই পথ চলবে। এই বিএনপি’র নেতারা এখন সরাসরি বলেছেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জামায়াতিকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়েছেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপি’র পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এমন অবস্থান আগে কম দেখা যেতো।

শেষ কথা

বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করেন, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন জিয়াউর রহমান । তবে দীর্ঘ সময় ধরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি’র সে-ই ইমেজকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু বিএনপি’র নেতারা এখন মনে করেন রাজনৈতিক অঙ্গনে জনগণের মধ্যে এখন আশা দলটি তার পুরোনো ইমেজ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সব ধর্মের জন্য একটি সেরা রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল হবে। এ ধারণার পাশাপাশি বাংলাদেশকে সারা বিশ্ব একটি অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক দল হিসাবেও প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। বিএনপি একারণে মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অবিচল থাকতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। একটি সূত্র জানায়, বিএনপি’র নেতারা মনে করেন এব্যাপারে ধীরে ধীরে বিশ্বস্ততা ও আস্থার সাথে তাদের পুরোনো ইমেজকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক সুবিধা পাবে দলটি। এতোদিন না পেরে ওইসব দলমত বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল, মতসহ বিশিষ্টজনেরা আওয়ামী ঘরণা হিসাবে পরিচয় দিতে হতো বাধ্য হতো। কিন্তু বিএনপি যদি তা-দের অতীতের সে-ই ইমেজকে ফিরিয়ে আনতে পারে, সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল, মতসহ বিশিষ্টজনেরা আওয়ামী ঘরণা হিসাবে পরিচয় দিতে হতো বাধ্য হতো তারা এখন বিএনপি’র ছায়াতলে চলে আসবে। অন্যদিকে কোনঢাসা হয়ে পড়বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলমতের শক্তি ও সমর্থকরা।

শেয়ার করুন