৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:০৯:৪০ পূর্বাহ্ন


এমরি ইউনিভার্সিটি ও শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে মুসলিমবিরোধী বৈষম্য অভিযোগে সমঝোতা চুক্তি সই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
এমরি ইউনিভার্সিটি ও শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে মুসলিমবিরোধী বৈষম্য অভিযোগে সমঝোতা চুক্তি সই ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এমরি ইউনিভার্সিটিতে প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জানাতে প্রতিবাদে অংশ নেন ছাত্র-শিক্ষকরা


যুক্তরাষ্ট্র ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের অফিস অব সিভিল রাইটস (ওসিআর) এমরি ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে দায়ের করা মুসলিম এবং প্যালেস্টাইনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগে একটি সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। এ অভিযোগগুলো গাজার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় ওঠে। বৃহস্পতিবার এমরি ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাষ্ট্র ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের অফিস অব সিভিল রাইটস (ওসিআর) যৌথভাবে এই সমঝোতা চুক্তি ঘোষণা করেছে। সিভিল রাইটস অফিস জানায়, তাদের তদন্তে এমরি ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে জাতিগত পরিচয় (বিশেষত প্যালেস্টাইনি, আরব বা মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে) বৈষম্য এবং শত্রুতামূলক পরিবেশ তৈরি হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। তদন্তে দেখা যায় যে, এপ্রিলের প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার এবং সহিংসতার দৃশ্যগুলো জনসমক্ষে আসার কারণে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরো অস্থির হয়ে ওঠে। সমঝোতা চুক্তিতে এমরি ইউনিভার্সিটি ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টের টাইটেল-৬-এর আওতায় তাদের জাতিগত পরিচয়, বিশেষত প্যালেস্টাইনি এবং মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ সমাধান করার জন্য কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করবে বলে অঙ্গীকার করে স্বাক্ষর করেছে।

এমরি ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তার ক্যাম্পাসে মুসলিম, প্যালেস্টাইনি এবং আরব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের ওপর গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত, গাজার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশের সময়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহিংসতাকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। সিভিল রাইটস অ্যাক্টের আওতায় করা সমঝোতা চুক্তি, যা বৈষম্য রোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়, প্রকৃতপক্ষে একটি মাত্র ফরমালিটি হিসেবে দেখা যায়, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সঠিক সহায়তা প্রদানে অক্ষম ছিল। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিবাদ করছিল, এমরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা এবং দেরি করা পদক্ষেপ তাদের বিরুদ্ধে আরো সহিংসতা এবং বৈষম্যের পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আস্থা ও বিশ্বাসকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা সংশোধনের বিষয়টি শুধু আচার-ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটি প্রকৃত পরিবর্তন বা কার্যকরি পদক্ষেপের অভাবকেই প্রতিফলিত করে, যা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় এর অক্ষমতা প্রদর্শন করে।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এমরি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ইসলামোফোবিয়া, তীব্র প্যালেস্টাইনি এবং আরব বৈষম্যের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। এই অভিযোগগুলো ক্যাম্পাসে গাজার যুদ্ধের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশের পর উঠে আসে। এমরি ইউনিভার্সিটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে জানিয়েছে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য ও হ্যারাসমেন্ট রোধে তাদের নীতি এবং প্রক্রিয়া সংশোধন করবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, অ-বৈষম্যমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

সমঝোতা চুক্তির শর্তাবলি : (১) বৈষম্য নীতিমালা পর্যালোচনা: বিশ্ববিদ্যালয় তার বৈষম্য ও হ্যারাসমেন্ট নীতিমালা ও প্রক্রিয়া সংশোধন করবে, যাতে সব অফিস সঠিকভাবে এবং কার্যকরভাবে টাইটেল-৬ অনুসরণ করে সেগুলোর মধ্যে হ্যারাসমেন্টের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্যকেও নির্দেশ করবে। 

(২) প্রতিবাদ সম্পর্কিত নীতিমালা পরিবর্তন : ক্যাম্পাসের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও অন্যান্য প্রকাশ্য কার্যক্রমের জন্য প্রযোজ্য নীতিমালা সংশোধন করা হবে, যাতে প্রতিবাদগুলোর ওপর বৈষম্যহীনভাবে আইনপ্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় এবং প্রতিবাদী ছাত্রদের বিরুদ্ধে বহিরাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়। 

(৩) অভিযোগ পর্যালোচনা : ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে জাতিগত বা ধর্মীয় বৈষম্যসংক্রান্ত সব অভিযোগ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং

(৪) প্রশিক্ষণ ও ক্লাইমেট সার্ভে : বার্ষিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালানো হবে যেখানে শিক্ষার্থীদের, কর্মচারীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বৈষম্য ও হ্যারাসমেন্ট সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট সার্ভে চালানো হবে যাতে জানানো হয় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রমে বৈষম্য বা হ্যারাসমেন্ট অনুভব করেছেন কি না। এমরি ইউনিভার্সিটির বিবৃতিতে জানায়, এমরি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের বৈষম্য বা বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য করে না এবং এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের, শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সমর্থনমূলক পরিবেশ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউএস অফিস অব সিভিল রাইটস অফিসের বক্তব্য : সিভিল রাইটস অফিসের সহকারী সচিব ক্যাথরিন ই. লাহমন বলেছেন, এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি আজকের দিনে তাদের একটি নিরাপদ ও বৈষম্যহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে, যা তাদের পুরো শিক্ষাবিষয়ক সম্প্রদায়ের প্রাপ্য।

এমরি ইউনিভার্সিটি ও মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিভিল রাইটস অফিসের মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি, যদিও সিভিল রাইটস অ্যাক্টের আওতায় বৈষম্য রোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এই ধরনের বৈষম্য ঘটেছিল এবং কেন এমরি বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগে পদক্ষেপ নেননি? বিশেষত, ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহিংসতার ঘটনা এবং মুসলিম, প্যালেস্টাইনি ও আরব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য যে কী পরিমাণ গুরুতর ছিল, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর একটি গুরুতর দায়িত্ব ছিল, যে কোনো প্রতিবাদ বা মতপ্রকাশের ঘটনা ঘটে, সেখানে যেন কোনো ধরণের জাতিগত বা ধর্মীয় বৈষম্য না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে। কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিবাদ করছিলেন, তখন সেই প্রতিবাদে সহিংসতা এবং বৈষম্যের সৃষ্টি হওয়া এবং তা প্রতিরোধে এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্যতা স্পষ্ট। সমঝোতা চুক্তি একটি প্রযুক্তিগত সমাধান হলেও এটি শিক্ষার্থীদের কাছে আরো ক্ষোভ এবং আস্থাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, কেননা তারা দেখতে পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি সঠিক এবং সময়োপযোগী সহায়তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল, বৈষম্য নির্মূলের জন্য আরো কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা আর কোনো ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার না হন। চুক্তির শর্তাবলি পর্যালোচনা করে, এটা স্পষ্ট যে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ফরমালিটি পূরণের জন্য এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বশীলতা এখনো অনেক দূরে।

শেয়ার করুন