নিউইয়র্ক স্টেট কারাগারে বন্দি অবস্থায় কয়েক শ মানুষের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই ঘটনা অজ্ঞাত বা গোপন রাখা হচ্ছে। বন্দিদের মৃত্যুর ঘটনা গোপন বা অজ্ঞাত রাখা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও কারাগারে বন্দির মৃত্যু ঘটলে তদন্ত হওয়ার কথা। অনেক সময় চিকিৎসাগত কারণে বন্দিদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক ঘটনা প্রকাশিত হয় না এবং তাদের মৃত্যুর কারণ প্রায়ই জানানো হয় না বা গোপন রাখা হয়। এ ধরনের ব্যর্থতা কেবল বন্দিদের অধিকার লঙ্ঘন ও কারাগার ব্যবস্থার সুশাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং পরিবারের কাছে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য এক অজানা উদ্বেগ তৈরি করে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাপক সংস্কারের দাবি উঠেছে।
জর্জ লিনিয়াকোসের মৃত্যুর ঘটনা। যিনি ৬৭ বছর বয়সে মারা যান। তা তদন্ত বা গণমাধ্যম, জনসাধারণ অথবা বাইরের সংস্থাগুলোর কাছে রিপোর্ট করা হয়নি। তার মৃত্যুর সরকারি কারণ এখনো রিপোর্ট করা হয়নি হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে, যা নিউইয়র্ক স্টেটের ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনস অ্যান্ড কমিউনিটি সুপারভিশনের দ্বারা প্রকাশিত নথির মধ্যে রয়েছে, যা পাবলিক ইনফরমেশন ল’ অনুযায়ী অর্জন করেছে গণমাধ্যম ।
নিউইয়র্ক স্টেট কমিশন অব কারেকশন এবং স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস আইন অনুযায়ী কারাগারে আটক ব্যক্তিদের মৃত্যুর তদন্ত করা বাধ্যতামূলক। তবে যেসব বন্দিকে চিকিৎসাগত বা সহানুভূতির ভিত্তিতে মুক্তি দেওয়া হয়, যাদের মৃত্যু অনিবার্য, তাদের মৃত্যু রিপোর্ট বা বাইরের তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রাজ্য আইন বা সংস্থার নিয়মে নেই। ২০১০ সালের ৭ জুন, ৬৭ বছর বয়সী জর্জ লিনিয়াকোস, যিনি শিশুদের সঙ্গে যৌন আচরণের অভিযোগে ২৫ বছর কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন, চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ এখনও প্রতিবেদন করা হয়নি বলে স্টেট কারাগারের দফতর থেকে জানানো হয়েছে। এটাই একমাত্র ঘটনা নয়: নিউইয়র্ক স্টেট কারাগারে বন্দি থাকা অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এমনভাবে গোপন রাখা হচ্ছে, যাতে বাহ্যিক তদন্ত বা রিপোর্ট প্রকাশ না পায়। একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৬৯টি মৃত্যুর কারণ ‘অজ্ঞাত, গোপন অথবা অনুসন্ধানাধীন’ রাখা হয়েছে।
নিউইয়র্ক স্টেট কারাগারে ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৪৮ জন বন্দি চিকিৎসার পর মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৭৮ জনের মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত হলেও ৩৪ জনের মৃত্যু প্রতিবেদন করা হয়নি, ২৪ জনের মৃত্যুর কারণ গোপন রাখা হয়েছে, এবং ৯টি মৃত্যুর তদন্ত এখনো চলছে। একদিকে যেখানে প্রমাণিত মৃত্যুর কারণ জানানো হচ্ছে না, অন্যদিকে একাধিক বন্দি মৃত্যুর পরও কোনো প্রতিবেদন ছাড়া বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের তদন্তও করা হয়নি।
ক্রিস্টোফার রিপলি নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবক ২০১৩ সালে মারা যান, তার পরিবার দাবি করেন যে তাকে কারাগারে ক্যানসার চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তার মৃত্যুর পর তার চিকিৎসা সম্পর্কিত কোনো তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি। ক্রিস্টোফারের মা, জেনিফার মার্টিনেজ বলেন, ওরা আমার ছেলেকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে, কিন্তু মৃত্যুর পর তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের আইনপ্রণেতারা, বিশেষ করে ক্রাইম এবং কারেকশন কমিটির চেয়ারপারসন জুলিয়া সালাজার, এ রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে নতুন আইন প্রণয়নের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেন, এভাবে বন্দিদের মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাত রাখা বা গোপন রাখা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যারা কারাগারে আছেন, তারা আমাদের সমাজের সদস্য, তাদের পরিবারের জন্য তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেট কারাগারের মধ্যে বন্দিদের মৃত্যুর অজ্ঞাত ও গোপনীয়তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন অংশবিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তা সঠিকভাবে তদন্ত করা হোক এবং ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। কারাগারে বন্দিদের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন এবং তাদের পরিবারের জন্য সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শুধু এভাবে দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব, যা কারাগার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।