৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৫:৫২ পূর্বাহ্ন


কঠিন ষড়যন্ত্রের মুখে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
কঠিন ষড়যন্ত্রের মুখে বিএনপি


কঠিন ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছে বিএনপি। বিএনপি’র বিরুদ্ধে এধরনের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কাজ করছে মাঠের সক্রিয় আরেকটি রাজনৈতিক দল। যারা দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি’র ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত। বিএনপি’কে ত্রয়োদশ নির্বাচনের বাইরে রাখার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলাই দলটির আসল চক্রান্ত। একাজে কৌশলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোমলমতি নেতাদের ব্যবহার করা হচ্ছে চক্রান্তকারী দলটি। রাজনৈতিক মাঠে সম্প্রতি অনুসন্ধান করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

ষড়যন্ত্রকারী দলটির লক্ষ্য

রাজনৈতিক মাঠে সম্প্রতি অনুসন্ধান করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে চক্রান্তকারী দলের ব্যাপারে। জানা গেছে, ষড়যন্ত্রকারী দলটি দু’টি লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। একটি হচ্ছে দেশে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরো দেরিতে আয়োজনের ব্যবস্থা করা। এটি করা গেলেও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তাদের আশা। আরেকটি লক্ষ্য হলো বিএনপি’র সাথে চলা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক দলগুলিকে যুগপৎ অবস্থান থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া বা রাখা। এতে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে একা হয়ে যাবে। যেনো বিএনপি বাধ্য হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা দলটির সাথেই জোটে আগ্রহী হয়ে ভবিষ্যতে তাদেরকে নির্বাচনসহ ক্ষমতার শরিক করতে পারে। 

ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে বিএনপি’র চোখেও

রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং তা যে এই দলকে ঘিরেই হচ্ছে তা ইতোমধ্যে খোদ বিএনপি’র হাইকমান্ড টের পেয়ে গেছে। জানা গেছে, এমন ষড়যন্ত্র টের পেয়েই বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা বা চক্রান্ত করতে যাবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। তিনি সর্তক করে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘এটা কেউ চিন্তাও করবেন না।’ বলেন, একবার বিরাজনীতিকরণের ‘মাইনাস টু’ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আবারও ওই ফর্মুলার মতো ওই রাস্তায় যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না। যদিও এব্যাপারে বিএনপি’র মহাসচিব আর বিস্তারিত কিছু বলেননি। এদিকে দেশে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ‘খেলা’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন গত ১১ নভেম্বর সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক খেলা চলছে বাংলাদেশে। শীর্ষ নেতাদের এতোটুকু বক্তব্যেই অনেক কিছুর আভাস মিলেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে..। 

ষড়যন্ত্র রুখতে বিএনপি’র পাল্টা কৌশল

জানা গেছে,বিএনপি’র বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রের খবরে বিএনপি’র হাই কমান্ড দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। বলা যায় সর্তক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের যেসব উদার গণতান্ত্রিক দলগুলি নিয়ে রাজনীতির মাঠে পথ চলছে তাদের কারো কারো সাথে ষড়যন্ত্রকারী দলটি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে কাছে টানতে দফায় দফায় প্রচেষ্টা চালায়। তার মধ্যে একটি ছিল আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে এদের জন্য আসন ছেড়ে দেয়া, পাশাপাশি আর্থিকভাবে সাহায্যও করা। নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে ব্যাপক অর্থের যোগানের প্রতিশ্রুতিও তাদের দেয়া হয়। এবং এর পাশাপাশি বিএনপি’র বিরুদ্ধে লিপ্ত থাকা ওই ষড়যন্ত্রকারী দলটি ক্ষমতায় গেলে আরো ভালো কিছু দেয়ার প্রতিশ্রুত দিয়েছিল বিএনপি’র সাথে বিভিন্ন ভাবে চলা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সেসব উদার গণতান্ত্রিক শরিকদের। তবে ষড়যন্ত্রকারী দলটি’র এমন তৎপরতা বিএনপি’র হাই কমান্ড টের পেয়ে যায়। 

এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর ছয় নেতাকে এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিএনপির দেওয়া চিঠি দেয়ার বিষয়টি হচ্ছে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার অন্যতম একটি কৌশলী পদক্ষেপ। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে যে, ২২ অক্টোবর সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য ছয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনা-সংবলিত চিঠি দেয় বিএনপি। এই ছয় নেতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে উল্লেখ করে চিঠিতে তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়। ওই ছয় নেতা হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি দেওয়া হয়। জানা গেছে, নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে মাঠে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যে ফাটল ধরানো চেষ্টা রুখে দিয়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কারা এই ষড়যন্ত্রকারী ও খায়েশ?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষড়যন্ত্রকারী দলটি এক সময়ে বিএনপি’র সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছিল এবং ক্ষমতার শরিকও করেছিল। সেই দলটির সাথে দীর্ঘদিন ধরে দহরম-মহরমের কারণে বিএনপি’র কপালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দেয়ার অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমা বিশ্বে। নষ্ট হয় একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্কও। কালিমা লেপন করা হয় যে, বিএনপি নামের দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি। 

এদিকে বিস্তারিতভাবে খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ষড়যন্ত্রকারী দলটির গোপন খায়েশ। তারা এখন মনে করছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ক্ষমতা কার্যত তাদের হাতে। তাই বিএনপি’কে টেক্কা নিয়ে প্রতিবেশী একটি দেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেই ওই দেশটিরই সহায়তায় পতিত আওয়ামী লীগকে গোপনে সাহায্য সহযোগিতা করা। যেনো তাদের নির্বাচনী ভোট বাক্স ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হওয়া..। একাজটি তারা সূচারুভাবে করতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে বিএনপি থেকে বিছিন্ন করে ফেলার গোপন চক্রান্তে করে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি’র এসব শরিক দলগুলোকে নিয়ে একটি অন্য প্লাটফর্ম করারও অভিপ্রায় ওই ষড়যন্ত্রকারী দলটির। একাজে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোমলমতি ছাত্র নেতাদের ব্যবহারও করে যাচ্ছে চক্রান্তকারী দলটি।

শেয়ার করুন