সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপি’র মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগ থেকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশের এনার্জি সেক্টরে তৌফিক ই ইলাহী একজন আলোচিত নাম। বিদ্যুৎ খাতে যেসব অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠেছে এবং এর আগেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে তার অন্যতম হোতা এ জ্বালানি উপদেষ্টা। অনেক বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অন্যতম কারিগর এই জ্বালানি উপদেষ্টা।
দায়িত্ব গ্রহণের সপ্তাহ তিনেকের মাথায় এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে যেখানেই হাত দেওয়া হচ্ছে, সেখানেই দুর্নীতি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গত ২৮ আগস্ট পেট্রোবাংলায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ও অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের দুর্নীতির পথ ছেড়ে সঠিকভাবে সেবা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালনি বিষয়ক উপদেষ্টা।
ফাওজুল কবির খান বলেন, সচিব কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তারা যতই দক্ষ হোন না কেন, দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ছাত্রদের সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার অধীনে যেসব কোম্পানি আছে, অচিরেই সেগুলোর সচিব ও চেয়ারম্যান বদলে দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব কোম্পানি পুনর্গঠন হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বেশি বেশি পাওয়ার প্ল্যান্ট আর বেশি দামে জ্বালানি কেনা নয়, সাধারণ মানুষের সেবা কতটা নিশ্চিত হলো, তার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হবে।
ফাওজুল কবির বলেন, আমি কর্মজীবনের শুরুতে শুল্ক বিভাগে কাজ করেছি। এরপর ইডকলে কাজ করেছি। বিদ্যুৎ সচিব হিসেবেও কাজ করেছি। আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।
তৌফিক-ই-এলাহীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ
সালেক সুফি : গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ সময়ব্যাপী জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত জ্বালানি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণকালীন সময়ে তিনি জ্বালানি সচিব থাকায় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর সঙ্গে জ্বালানি সেক্টর নিয়ে নানা আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে।
জাদরেল এই আমলার সঙ্গে সামনাসামনি কারো বিতর্ক করার সাহস না থাকলেও তার ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বহুবার জনসমক্ষে বিতর্ক হয়েছে। বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল অকসিডেন্টাল কর্তৃক মাগুরছড়া গ্যাস কূপ খননের সময় বিস্ফোরণ ঘটার সময় থেকেই। পরবর্তিতে দুর্বল কোম্পানি নাইকো রিসৌর্সকে অবৈধভাবে ফেনী, ছাতক টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে কাজ দেয়ার বিষয়েও প্রতিবাদ করেছি। দেশের কয়লা এবং গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন বিষয়ে তার উন্ন্যাসিকতার বিষয়টিও নানা আলোচনায় প্রতিবাদ করেছি।
এমনকি এলএনজি আমদানি নিয়েও তার দর্শনের সঙ্গে একমত ছিলাম না। তিনি প্রচন্ড ক্ষমতাশালী তাই প্রতিটি আলোচনায় তিনি তার মতবাদ চাপিয়ে দিয়েছেন। আজ যে জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মহাসংকট তার অন্যতম প্রধান কারণ তার ভুল পরামর্শ। অনেকেই বলবেন তার কারণেই সাগরে গ্যাস অনুসদ্ধান প্রলম্বিত হয়েছে। সীমিত ধারণা নিয়ে উনি বলেছেন কয়লা উত্তোলন করলে বাংলাদেশে মহাপ্রলয় হবে। গ্যাস সংকটের সময় তার নেতৃত্বে শিল্পগুলোকে গ্যাস সংযোগ দেয়া নিয়েও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। আদানী গ্রুপের সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি সম্পাদন বিষয়েও তার মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।
ভদ্র লোক মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রাখার জন্য অনেক শ্রদ্ধা করতাম। অস্বীকার করবো না সিদ্ধান্ত প্রদানে কুশলী তার নেতৃত্বের গুণাবলী ছিল। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টা হিসাবে তিনি জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরের পেশাদারিত্ব ধ্বংস করার ভূমিকার জন্য তাকে সম্মান জানাতে পারছি না। আশা করি যথাযথ পদ্ধতিতে তদন্ত করে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।