সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সবার সমর্থন পেয়েছে। হাসিনা সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। তবে ওই সরকারের ভুল কৌশলে বেশ কিছু নিরীহ প্রাণ ঝরে গেছে। নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও দুষ্কৃতকারীরা। এক পর্যায়ে সমাজবিরোধীরা সুযোগ নিয়ে জাতীয় সম্পদের ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছে।
এখন সবার দাবি সব মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি এবং দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনা। এ পদ্ধতিতে অবশ্যই ব্যর্থ মন্ত্রী উপদেষ্টারা তদন্তের আওতায় আসবে। কিন্তু কোটা আন্দোলনকারীরা কেন এখন একদফা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে? এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগও করেছেন।
আসলে শেখ হাসিনা সরকার দলের হাইব্রিড এবং সুবিধাবাদী আমলাদের দূষণে দূষিত। সংকট মুহূর্তে অনেকের মুখোশ খুলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের মধ্যেও দুষ্কৃতকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটে থাকতে পারে।
আমি বাস্তবতার আলোকে পরিস্থিতির যৌক্তিক সমাধান কামনা করছি। ছাত্রদের ৯ দফা আন্দোলন মুহূর্তে একদফায় রূপান্তরিত হয়ে মার্চ টু ঢাকার প্রেশারে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তবে এটাও ঠিক শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়াতে দেশের অর্থনীতিতে অশনিসঙ্কেত। সব উন্নয়নকাজ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপানকে উন্নয়নকাজে সম্পৃক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ভারসাম্য কেউ রক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কেউ সহ্য করতে পারবে না।
বরং হাইব্রিড মুক্ত দল, আমলাদের নিরঙ্কুশ প্রভাবমুক্ত সরকার আর দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রী-উপদেষ্টা নিয়ে শেখ হাসিনাই পারতো দেশকে বিপদমুক্ত করতে। সেটাই এখন শেষ ভরসা হতে পারে। কিন্তু হাসিনা কি পারবে দুষ্টু প্রভাব বিশেষত প্রতিবেশী দেশের প্রভাব মুক্ত হতে। সে সময়টুকুও পাননি তিনি কিছু ভুলের কারণে।
যাহোক আমি সব মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই, ব্যর্থ মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই। বর্তমান সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের ম্যান্ডেট প্রদানের ব্যবস্থা করে দেশের সার্বিক গতিপথ ঠিক করা ভীষণ জরুরি এবং সেটা যথাশিগগির। তবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় আমি হতবাক স্তম্ভিত।
আমার প্রিয় মাতৃভূমি শত নিরীহ প্রাণের বিসর্জনে বারুদ হয়ে জ্বলছে। কিছুতেই মানতে পারছি না শিশু-কিশোর যুবকদের কোমলমতি প্রাণহানি। আমি শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনের সমর্থক ছিলাম। নিরীহ ছাত্রদের বিরুদ্ধে যারা ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ করেছে তাদের বিচার এখন সময়ের দাবি। প্রতিটি মৃত্যুর বিচার চাই। স্বাধীন দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মানুষ কোনোভাবেই প্রতিবাদীদের গুলি করে হত্যা করতে পারে না। সরকারের ভ্রান্ত কৌশলের কারণেই দুষ্কৃতকারী চক্র ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ পেয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন করি, বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্র, সেতু ভবনের মতো স্থাপনাগুলো কেন সুরক্ষিত রাখা হয়নি। এগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানো যাবে না।
জামায়াত-শিবিরের ঘাড়ে দোষ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরা এতো শক্তি পেলো কোথায়? নাকি সরকারের ভেতর থেকেই অন্তর্ঘাত করা হয়েছে? এমন এক প্রশ্ন এখন সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে।
যাহোক বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সড়কে নেমে যে দাবি করেছে। সেটার বাস্তবায়নও হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের মাধ্যমে। তবে রাজনৈতিক সংকটে বলপ্রয়োগ ভুল ছিল, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রবাসে থেকে দেশের এমন পরিস্থিতিতে লজ্জা, ক্ষোভ, দুঃখ প্রকাশ করছি। সত্যিই হাসিনা সরকার দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছিল। যার খেসারত তারা গুনলো।