১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১৯:৪৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে আবুল খায়ের ভূইয়া
তারা তো ক্ষমতায় থাকতে দেশ বিক্রিতে প্রস্তুত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৭-২০২৪
তারা তো ক্ষমতায় থাকতে দেশ বিক্রিতে প্রস্তুত আবুল খায়ের ভুইয়া


বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেছেন, তারাতো (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশ বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত। একসময়ে এই সরকারকে কিন্তু বিতাড়িত হতেই হবে রে ভাই..এই সরকার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নিষ্ঠুর স্বৈরাচার সরকার। নেই আইেনের শাসনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা। নেই বাক-স্বাধীনতা। এই অবস্থানের বিরুদ্ধে আমরা দলমত নির্বিশেষে জনগণকে ঐকবদ্ধ করতে পেরেছি-এটাই আমাদের সফলতা। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় সমসাময়িক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের সাথে সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

দেশ: আপনারা একদফা দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে থেমে গেছেন। বিএনপি এখন আর কোনো কর্মসূচিই দিচ্ছে না..

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : হা হা হা..কে বলছে কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। আন্দোলন তো করেছে বিএনপি। আন্দোলনেরতো একটা সারাগামা আছে। বললেই কি আন্দোলন উঠানো যায়? গত বছরে ২৮ অক্টোবরের পর দল একটু বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। বহু নেতাকর্মীকে তো কারাগার থেকে বের করলাম। এই তো কয়েকদিন আগেও তো মুক্ত করলাম ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। 

দেশ : বলা হচ্ছে বিএনপি এখন দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে কোনো কর্মসূচিতে আগ্রহ নেই..সে-ই দাবি থেকে সরে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে..

আবুল খায়ের ভূঁইয়া: না প্রশ্নই আসে না। আন্দোলন থেকে আমরা সরবো কেনো? হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে) ক্ষমতায় রেখে আমরা কোনো নির্বাচনেই যাবো না..। এই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে না তাতো প্রত্যেকদিনই বোঝা যাচ্ছে। এবং এই অপকর্মগুলি করার জন্য যে মাফিয়া চক্রটি প্রশাসন থেকে নিয়ে সবাইকে ব্যবহার করেছে তা এখন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলি করতে গিয়ে তারা মহা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। একেক জন যে কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিন দিন। এগুলি করতে গিয়ে তারা মহাদুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে। তারা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে তাতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। 

প্রত্যেকটি সংস্থার প্রধানের দিকে খেয়াল করুন। প্রত্যেকটি সেক্টরে একটা দুর্নীতির মহাউৎসব যেনো দেখা দিয়েছে। একটা ড্রাইভারও শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। কি যে বেহাল দশা..সব কিছু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। এখন দেখা যাবে দেশটার পুরো মেরুদণ্ড কোন সময় দেখবেন ভেঙ্গেই পড়েছে। এখন আলু পেঁয়াজ-রসুনের দাম তো লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের তো জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাই নেই। তারাতো কারো কথাই শুনে না। তারা শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনেও রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে। এটাতে নাকি বিরোধী দল উস্কানি দিচ্ছে। কেউ যদি কোনো সত্য কথা বলে তাহলে এতে তারা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। ষড়যন্ত্র তো তারা করেছে। ষড়যন্ত্র করেই তারা ক্ষমতায় আছে। 

দেশ: বলা হয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতা ও গ্রহযোগ্যতা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। একারণে আপনাদের কণ্ঠ হারিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি এরকম কি-না?

আবুল খায়ের ভূইয়া: শোনেন, হারিয়ে যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগেও আমাদের ছাত্রদলের দু-জনকে গুম করে ফেলা হয়েছে। আমরা তো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার করার আন্দোলনের ফসল তুলে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এইতো সেদিনও কর্মসূচি দিয়েছি। রাজনীতিতে তো একেক সময় একেটা সারেগামা থাকে রে ভাই..একবার উঠে একবার নামে। গোল তো প্রত্যেক খেলায় হয় না..। এক সময় গোল করার সুযোগ হয়। মাঠ তো ছাড়া হচ্ছে না। মাঠে না থাকলে গোল দিতে পারবেন কিভাবে? আমরা তো মাঠ ছাড়ছি না। আমরা যখন যে ঘটবে সেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছি। সেজন্য আমরা জনসভা করি। সেটার জন্য যা যা করার তা করছি। এভাবে এক সময় এই আন্দোলনকে সময়মতা কাজে লাগাবো। 

দেশ: সরকার যে বলছে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার তৎপর। এব্যাপারে সরকারের ওপর আপনাদের আস্থা কেমন?

আবুল খায়ের ভূইয়া : এতো দুর্নীতি যে যারে ধরে সেখান থেকেই আরেকটা বেরিয়ে আসে। এসব দুর্নীতিবাজদের তো সরকার ধরেনি। এগুলি প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাহসী সাংবাদিকরা বের করে আনছে। এগুলি বের হওয়ার পর সরকারতো নিরুপায়। হলমার্ক, ইসলামি ব্যাংকের দুনীতি বলেন..। এসব নিয়ে তদন্ত হয়েছে কিন্তু এর রির্পোট আজও প্রকাশ পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুটপাট হলো। রিজার্ভ চুরি হলো। তা প্রকাশও হলো না। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা কান্ডের তদন্ত হলো। আজও রিপোর্ট প্রকাশিত হলো না। 

দেশ: আপনারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন মনে করে নেতাকর্মীরা হতাশ..এটা কি ঠিক?

আবুল খায়ের ভূইয়া: আপনি যদি প্রশ্নটা গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা থেকে করেন তাহলে বলবো আন্দোলন সফল। আমরা সারা দেশ থেকে এসে ঢাকাতে হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে) তো উৎক্ষাত করতে পারবো না। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের জনগণকে ঐকবদ্ধ করে সমমনা রাজনতিক দলগুলি নিয়ে ভোটাধিকার রক্ষার জন্য ডাক দিয়েছি। জনগণ আমাদের কথা শুনেছে। ৯৫ ভাগ ভোটার ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। এটাই তো আন্দোলনের বড়ো সফলতা। কিন্তু এদের তো বিন্দুমাত্র লাজ-লজ্জা নেই। ক্ষমতা আকড়িয়ে আছে নির্লজ্জভাবে। তারাতো ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশ বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত। একসময়ে এই সরকারকে কিন্তু বিতাড়িত হতেই হবে রে ভাই..এই সরকার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নিষ্ঠুর স্বৈরাচার সরকার। নেই আইেনের শাসনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা। নেই বাক-স্বাধীনতা। এই অবস্থান বিরুদ্ধে আমরা দলমত নির্বিশেষে জনগণকে ঐকবদ্ধ করতে পেরেছি-এটাই আমাদের সফলতা। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে আমরা ব্যর্থ। একপক্ষ তো চায় আমরা দা-বটি, লাঠি-সোটা নিয়ে সরকারকে উৎখাত করি। লেবাননের মতো এক সাইড আমরা দখল করবো। আমরা চাই গণতান্ত্রিক মানুষকে ঐকবদ্ধ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনে মাঠে নামতে। কিন্তু এই সরকার তো প্রতিবাদের ভাষাতো বোঝে না। একারণে তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে এবং সব্বোর্চ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমি নিজেও মামলার শিকার হয়েছি। আসলে যে কোনো স্বৈরাচারের আচরণই এমন হয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই আন্দোলনই শেষ। এর মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। এরপর বোধ হয় আর আন্দোলন করা লাগবে না। এটা নিয়ে নেতাকর্মীদের একটা বড়ো ধরনের আশা ছিল। তবে এই আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণ অংশ নিয়েছিল। এটাই আমাদের সফলতা। 

শেয়ার করুন