৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:০১:০০ পূর্বাহ্ন


স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন


যানজটের শহরে শুন্যে ভেসে মানুষ এখন যাতায়াত করবে ঢাকায়। মেট্রোরেল। ঠিক শুন্যে ভেসে নয়। তবে অনেকটাই অমনই। যা এর আগে বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা গেলেও বাংলাদেশে ছিল স্বপ্ন। সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর দিয়াবাড়িতে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আংশিকভাবে  উদ্বোধন  করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ওই মেট্রোতে নিজে টিকেট ক্রয় করে ট্রেনে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যান।

এর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ছয় মাসের ব্যবধানে দেশের যোগাযোগের ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হল। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 


মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন/ছবি সংগৃহীত 


এ উপলক্ষ্যে উত্তরা প্রান্তরে আয়োজিত দিয়াবাড়ি খেলার মাঠে একটি নাগরিক সমাবেশে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, এটিই বড় কথা।’ সবাইকে মেট্রোরেলের সঠিক সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এ মেট্রোরেল সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। যাতে মেট্রোরেলের কোনো কিছু নষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি সবাইকে তা ব্যবহারে যত্নশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই মেট্রোরেল পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণ সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল। সে জন্য সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

 এরপর বুধবার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে উত্তরা উত্তর সেক্টর থেকে ছেড়ে যায়। এর আগে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সংরক্ষিত কোচের দরজায় ফিতা কেটে ট্রেনে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। 

এদিকে মেট্রো ট্রেনের অভ্যন্তরে অন্যান্য কোচে আগে থেকেই আসন গ্রহণকারী ২০০ জন আমন্ত্রিত অতিথির সঙ্গে যাত্রাপথে কুশল বিনিময় করেন।   

 আগামীকাল (২৯ ডিসেম্বর) থেকে সাধারণ মানুষ মেট্রোরেলে চড়া শুরু করতে পারবেন। 


মেট্রোরেলের  একটি স্টেশন  /ছবি সংগৃহীত 


প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত কোনো স্টপেজ ছাড়াই চলাচল করবে মেট্রো ট্রেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) মেট্রো রেল স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহনের জন্য ৩০টি ডাবল ডেকার বাস পরিচালনা করবে। 

এর মধ্যে ২০টি বাস ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও গুলিস্তান হয়ে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে এবং ১০টি বাস উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে আবদুল্লাহপুর হয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ির উত্তর স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করবে।

সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মেট্রোরেল নির্মাণ করছে এবং প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। ২০১৬ সালে এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় সেকশন এবং মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত তৃতীয় সেকশন পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।

তবে আশা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে।  প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয়টি বগি বিশিষ্ট ১০ সেট ট্রেন চলবে।  ১০-সেটের ট্রেনের কোনটিতে কখনো সমস্যা দেখা দিলে সহায়ক হিসেবে থাকা বাকি দুটি বিকল্প হিসেবে চলবে। আপাতত এই রুটে ধীরগতিতে ট্রেন চলবে।

তবে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চলাচল শুরু হলে প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে একটি করে ট্রেন চলবে। ট্রেন কোন স্টেশনে কতক্ষণ থাকবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে দশ মিনিট করে দাড়াবে বলে জানা গেছে। 


মেট্রোরেলের স্টেশন/ছবি সংগৃহীত 


প্রতিটি স্টেশনে, যাত্রীদের বোর্ডিং এবং নামা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি অপেক্ষা করবে। প্রতিটি ট্রেন ২,৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে বাঁকযুক্ত এলাকায় গতি কম হবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। যানজট নিরসনে রাজধানীজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্পের বিবরণে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন, যা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নগরীর আগারগাঁও পয়েন্টে এলিভেটেড ভায়াডাক্টের প্রথম অংশ এবং এমআরটি লাইন-৬ এর নয়টি স্টেশনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।



মোট ২২,০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) প্রায় ১৬,৬০০ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে প্রদান করেছে। তথ্যসূত্র বাসস। 



শেয়ার করুন