১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০১:৫৩:৪৬ পূর্বাহ্ন


সমঝাতা ভেঙ্গে যাওয়ায় কি এনসিপির এতো ক্ষোভ?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৫
সমঝাতা ভেঙ্গে যাওয়ায় কি এনসিপির এতো ক্ষোভ? এনসিপির লগো


অন্তবর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) খুঁজছেন- নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের করা মন্তব্য নিয়ে এখনো আলোচনার ঝড়। এনসিপি এ-ও দাবি করছে যে, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের নামের তালিকা তাদের হাতে রয়েছে। কে কোন দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিরাপদে সরে পড়তে চাইছেন, তা অবিলম্বে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।

আগে দেখা যাক আরও কি বলা হচ্ছে

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছে। এরপর এনিয়ে যখন দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা সমালোচনা তখনও এনসিপি নেতারা বলছেন, সেফ এক্সিট নিয়ে নাহিদ ইসলাম যা বলেছেন তা অজানা গোপন কিছু নয়। বরং বিষয়গুলো একেবারেই দৃশ্যমান। যতই দিন যাচ্ছে কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা পরিষ্কার হচ্ছে। তারা রীতিমতো একটি রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে উঠছেন। হয়তো তারা ধরেই নিয়েছেন নিশ্চিতভাবে তাদের পছন্দের দল ক্ষমতায় আসছে। অথচ তারা শত শত লাশের উপরে পা দিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছেন।

এনসিপি কেনো এমন করছে?

২৪-এর জুলাই যোদ্ধাদের ইমেজে গড়া এনসিপির এধরনের বক্তব্য পুরো দেশ যেমন নড়েচড়ে বসেছে তেমনি একটি পক্ষ বেশ পুলকিত। এক কাতারে আছে ২৪-এর জুলাইযোদ্ধারা যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তারাই। অন্যদিকে ২৪-এর জুলাই যোদ্ধারা যখন এমন বক্তব্য দিচ্ছে তখন তাদেরই আরেকজন বলেছেন যিনি এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, এ ইন্টেরিম গভর্নমেন্টও আজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। 

সরকারের সাথে গোপন সমঝোতা ভেঙ্গে গেছে?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেনো এমন কথা বলছেন এনসিপির নেতারা? কেনো বলা হচ্ছে এ ইন্টেরিম গভর্নমেন্টও আজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। কেনো বলা হচ্ছে দলীয় আজ্ঞাবহ ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি? বরং অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা ছাত্র-নেতৃত্ব নিয়ে সরকার গঠিত হলে আজকের পরিণতি দেখতে হতো না। কেনোইবা এখন তাদের কণ্ঠে আফসোস এই বলে যে, ২৪-এর জুলাইযোদ্ধারা পুরোনো রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের হাতে রীতিমতো প্রতারিত হচ্ছে। রাজপথে রক্ত দিয়ে তারা নতুন সূর্যোদয়ের সূচনা করেছিল। কিন্তু খোদ অন্তর্বর্তী সরকারই পথ ভুলে বিপরীত দিকে হাঁটছে।

আসল কারণ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৪-এর জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ সংশ্লিষ্টরা ফ্যাসিবাদের পতনের পরপর বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ভেবেছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্ততপক্ষে তার জাতীয় আন্তর্জাতিক ইমেজে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে ৫ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত টেনে নেবে সংস্কারের দোহাই দিয়ে। এই পাঁচ বছরে দলটি শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ধীরে ধীরে বিএনপি’র মতো দলকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে মাইনাস বা অন্যরকম একটি নিষ্ক্রিয় দলে পরিণত করা হবে। কিন্তু এর বিপরীতে এনসিপি’কে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সমর্থন দেওয়া হবে। এতে করে আগামীতে ২৪-এর জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে এনসিপি সরকার গঠন করবে। এর পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ও একইসাথে বিএনপি’র মধ্যে থাকাও প্রভাবশালী নেতাদের এনসিপিতে ভেড়ানো হবে। মোট কথা রাষ্ট্র ক্ষমতা এনসিপি’র হাতেই থাকবে-এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই নতুন এই দলটি এগুচ্ছিল। জানা গেছে, এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এনসিপি পুরো দেশ বেশ ভালোভাবে দাবড়িয়ে বেড়ায়। এনসিপির নেতাকর্মীরাও দেখাতে শুরু করে অতীতে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলির মতো অহমিকা বা দাপট। একইসাথে ওই রাজনৈতিক দলের পীড়াপীড়িতেই এনসিপি ডাকসু নির্বাচনের দাবিকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এনসিপি’র ছাত্রসংগঠনটির ভরাডুবি ডেকে আনে। কারো কারো মতে, এসব নানান ধরনের হতাশার মধ্যে জাতীয় আন্তর্জাতিকতার পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে এনসিপি আসলে পিছিয়ে পড়ে। এখানেও এনসিপির নেতারা আশা করেছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা তাদের পাশে থাকবে। কিন্তু তাদের আশা এখন গুড়েবালি বলেই অনেকে মনে করেন। আর সেই থেকেই এনসিপি’র নেতাদের কণ্ঠে এখন এসব কথা ধ্বনিত হচ্ছে। এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

শেয়ার করুন