৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫৭:৩৮ পূর্বাহ্ন


উদ্বোধক ও প্রধান ছিলেন ড. আবু জাফর মাহমুদ
বর্ণাঢ্য ব্রুকলিন মেলা আগামী নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
বর্ণাঢ্য ব্রুকলিন মেলা আগামী নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করছেন ড. আবু জাফর মাহমুদ


নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত একালাগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম এলাকা ছিলো এস্টোরিয়া এবং ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাডোনাল্ড। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই দুটো এলাকা। কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। নিউইয়র্কেও হয়েছে তাই। এখন নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা অনেকগুলো। তবে এর মধ্যে ব্রুকলীন এখনো অন্যতম। এই এলাকার প্রথম বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের নাম ছিলো লিটল বাংলাদেশ। সেই লিটল বাংলাদেশ থেকেই প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলওম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শাহানা হানিফ। কাকতালিয় ব্যাপার হচ্ছে লিটল বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। আর তার মেয়েই প্রথম কাউন্সিলওম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১৯ মে আয়োজিত বাংলাদেশ মেলাও যেন মানুষের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতিতে এক খন্ড লিটল বাংলাদেশে পরিণত হয়। প্রশংসিত হয়েছেন মেলার আয়োজক কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস, কনভেনর গোল্ডেন এজ হোক কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, মেলার উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ড. আবু জাফর মাহমুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল আজিম, কুইন্স ডোমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরীসহ অন্যান্য আয়োজকবৃন্দ। এই মেলায় কম্যুনিটিতে অবদানের জন্য বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ‘ব্রুকলিন মেলা’। এবারও মেলায় সবমিলিয়ে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ২০ হাজারের ওপরে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি তাদের সাংগঠনিক সাফল্য দেখিয়েছে। রোববার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর, পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগেস এর প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, এই বর্ণাঢ্য মেলা আমাদের আগামী নেতৃত্বের উজ্জ্বলতা বহন করছে। এটি ব্রুকলিন মেলা হলেও এটি সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটি তথা দক্ষিণ এশিয়ার মেলা। মেলায় এর বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। গোটা জনগনগোষ্ঠির মধ্যে একতা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আয়োজক সংগঠক বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম। মেলার মূল মঞ্চে সঞ্চালক ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল ও বাংলাদেশি আমেরিকান ফেন্ডশীপ সোসাইটির সেক্রেটারি, সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর প্রেসিডেন্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকজয়ী শ্যুটার এস এম ফেরদৌস। 

 ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর প্রেসিডেন্ট ডিওর ফল, অ্যামব্যাসেডর জেরি কবেনা আডিনক্রা, থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর ইন্টারন্যাশনাল কো অর্ডিনেটর সেরিঙ্গে বারা নাদিয়ে। মেলায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক গঞ্জালেস, ৬৬ প্রিসেক্টের কমান্ডিং অফিসার কেনেন হ্যারাটে, ক্যাপ্টেন ক্রিস্টোফার জোসেফ, কমিউনিটি অ্যাফেয়য়ার্স ৫ বরো’র ডেপুটি কমান্ডার রিচার্ড টেইলর, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ৬৬ প্রিসেক্টের সার্জেন্ট উইং চ্যাং, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জেমস, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অল বরো সার্জেন্ট আব্দুল লতিফ, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি, সেক্রেটারি মোহাম্মদ বাবুল, সাউথ এশিয়ান আসাল’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ করিম, সার্জেন্ট তাকি, মাইমুনাটিস হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডগলাস জ্যাবলান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল আজিম, কুইন্স ডোমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট এবাদ চৌধুরী।

মেলায় স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস’র স্টলে আসেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির নেতৃত্বাস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। তারা ডেমোক্র্যাট রাজনীতির এই নতুন প্লাটফরমে যুক্ত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান অতিথি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ মেলার উচ্ছসিত ২০ হাজারের বেশি দর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন, হাজারো মানুষের এই উত্তাল জনস্রোতে, লক্ষ স্বপ্নের জন্ম দিতে পারে। আমি জন্মগতভাবে যোদ্ধা। বিশাল সমাবেশে আমার জাতির মাঝে অন্তত. একটি বার্তা আমি পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে কতটা সতর্ক। সন্তানেরা স্কুলে কাদের সঙ্গে মেলামেলা করছে, আমাদের পরিবার বহুজাতিক সমাজে কাদের সঙ্গে মিশছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকাও আমাদের যুদ্ধ্ তারা যেন অন্য কিছুতে হারিয়ে না যায় তা আমাদের মনে রাখতে হবে। মানুষ হিসেবে সব মানুষের প্রতিই আমাদের ভালোবাসা আছে। কিন্তু এই যুদ্ধের কথাটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি নতুন সংগঠন পিপল আপ এর পথচলা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এই সংগঠন গড়ে তুলেছি, এর মাধ্যমে দুজন স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বারকে এনডোর্স করেছি। ধাপে ধাপে আমরা নিউইয়র্কের সকল জাতিগোষ্ঠির মাঝে আমাদের স্বকীয়তা নিয়েই মূলধারায় নেতৃত্ব করার আশা রাখি। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বঙ্গোপসাগরের পাড়ে জন্মেছি। আজ আটলান্টিকের পাড়ে এসে আমরা মাথা তুলেছি। আমরা এই নিউইয়র্কের সকল ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের সাক্ষর রেখেছি। নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগে, ব্যবসায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ সকল ক্ষেত্রেই আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি এটি আমাদের গর্বের বিষয়।

কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ বলেন, আমি আপনাদেরই মেয়ে। এখানেই আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আপনাদের কারণেই আমি আজ কাউন্সিলওম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সিটি কাউন্সিলে ৫১ জন প্রতিনিধির মধ্যে আমরা মাত্র ২ জন মুসলিম প্রতিনিধি। আমাদের আরো মুসলিম প্রতিনিধি প্রয়োজন। আপনারা আপনারা সন্তানদের যোগ্য করে গড়ে তুলেন, যেভাবে আমার বাবা মা আমাকে গড়ে তুলেছে। আমি আমার বাবা এবং মাকে গর্বিত। আপনাদের সন্তানরাও যেন আপনারাদের নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে, তাদের সেইভাবে গড়ে তুলেন।

আহবায়ক শাহ নেওয়াজ বলেন, আমি সব সময় ব্রুকলীন মেলার সাথে ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।

এটর্নী মঈন চৌধুরীও সব সময় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

নূরুল আজিম সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ব্রুকলীন মেলায় সব সময় আমার সহযোগিতা থাকে, আগামীতেও থাকবে।

মেলা মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, বাউল কালা মিয়া, ত্রিনিয়া হাসান, রানু নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, শামীম সিদ্দিকী, অনিক রাজসহ প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা। 

অনুষ্ঠানে মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ এস এম রেজা, কো চেয়ারম্যান আবছার উদ্দিন, আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, প্রধান উপদেষ্টা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, উপদেষ্টা মনির আহমদ কামাল, কামাল হোসেন মিঠু, প্রধান সমন্বয়ক নূরুল আজিম, সমন্বয়ক আহসান হাবিব, সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দি, সালেহ মানিক, প্রফেসর আজাদ, মোহাম্মদ হাসানসহ মেলার সকল পৃষ্ঠপোষক ও আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শতাধিক গণ্যমাণ্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলায় গোটা চার্চ এভিনিউতে বসেছিল বিভিন্ন পণ্য সামগ্রির ৭০টি স্টল। ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রবাসের আঞ্চলিক সন্দ্বীপ সোসাইটির আয়োজনে মেলায় উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শকদের জন্য সাস্বাদু খাবার, পানীয় ও চা পরিবেশন। তারা মেলার শৃংখলা রক্ষা ও অতিথি আপ্যায়ণের ক্ষেত্রে অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

 স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্দ্বীপ সোসাইটি ও সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর সকল নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা তাদের তৎপরতা দিয়ে প্রমাণ করেছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য সদা প্রস্তুত। তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ, অ্যালগ্রা হোম কেয়ারসহ জয় বাংলাদেশ, জেবিটিভি ও দ্য বে ওয়েভ এর সকল র্কর্মী সার্বক্ষণিক মেলায় উপস্থিত থেকে আন্করিকতার প্রমাণ রেখেছেন, এটি আমার গৌরবের অংশ। তিনি সকল সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে মেলার অংশ হওয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।

শেয়ার করুন