ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত নির্বাসন নীতি ফেডারেল আদালতের স্থগিত


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 03-09-2025

ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত নির্বাসন নীতি ফেডারেল আদালতের স্থগিত

ট্রাম্প প্রশাসনের বহুল আলোচিত দ্রুত নির্বাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ফেডারেল আদালত স্থগিত করেছেন। গত ২৯ আগস্ট শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার রায়ে বিচারক জিয়া কাব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, সরকার এ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে অভিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া বা ডিউ প্রসেসকে লঙ্ঘন করছে। মামলায় বলা হয়, দ্রুত নির্বাসনের সম্প্রসারণ অভিবাসীদের ন্যায্য শুনানি থেকে বঞ্চিত করছে। এমনকি যারা বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, পরিবার গড়েছেন বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন তাদেরও হঠাৎ করে নির্বাসনের ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। অভিবাসন অধিকারকর্মীরা এ রায়কে একটি বড় আইনি বিজয় হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, আদালত প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব করেছে। দ্রুত নির্বাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নয়। ১৯৯৬ সালের অভিবাসন সংস্কার আইনের পর থেকে সীমান্তে ধরা পড়া অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চালু হয়। এটি কেবল সীমান্তবর্তী ১০০ মাইলের ভেতরে ধরা পড়া এবং দুই সপ্তাহের কম সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প প্রশাসন একটি নতুন নির্দেশনা জারি করে এ নীতির ব্যাপক সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, গত দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এমন, যে কোনো স্থানে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদেরও এখন থেকে দ্রুত নির্বাসনের আওতায় আনা হবে। এর ফলে লাখো মানুষ বিচারকের সামনে হাজির হওয়ার আগেই বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েন।

বিচারক জিয়া কাব তার রায়ে বলেন, আদালত দ্রুত নির্বাসনের আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে না। তবে যখন সরকারের এ নীতি দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করে, তখন তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। বর্তমান নীতিমালা সেই মানদণ্ড পূরণ করছে না। ফলে জানুয়ারির নির্দেশনা এবং তার বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসন এ রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক বিবৃতিতে জানায়, আদালত প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে অস্বীকার করছে। তাদের দাবি, যেসব অবৈধ অভিবাসী দুই বছরের কম সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের নির্বাসনের পূর্ণ অধিকার সরকারের রয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ম্যান্ডেট ছিল দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও নির্বাসন করা। আইন, তথ্য এবং সাধারণ বোধ-সবকিছুই সরকারের পক্ষে।

এ নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অভিবাসনভিত্তিক সংগঠন মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক। এসিএলইউয়ের অভিবাসী অধিকার প্রকল্পের সিনিয়র আইনজীবী আনন্দ বলাকৃষ্ণন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি হাজারো মানুষকে অবিচারপূর্ণ ও ভুলভ্রান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার শিকার করেছে। আদালতের রায় প্রমাণ করেছে-কারো ভবিষ্যৎ যদি ঝুঁকির মুখে থাকে, তবে তাকে ন্যায্য শুনানির সুযোগ দিতে হবে। মেক দ্য রোড নিউইয়র্কের সহ-আইন পরিচালক হ্যারল্ড সোলিস মন্তব্য করেন, এ নীতি আমাদের সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। আদালতের সিদ্ধান্ত সে অবিচার থামিয়েছে। আমরা এ লড়াই চালিয়ে যাবো।

এসিএলইউ ডিসির আইনজীবী অদিতি শাহ বলেন, এ রায় স্মরণ করিয়ে দেয়-যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া বা ডিউ প্রসেসের কোনো বিকল্প নেই। এ নীতি কার্যকর হলে হাজারো মানুষকে ভুলভাবে নির্বাসিত করা হতো। নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক ডোনা লাইবারম্যান বলেন, এটি ছিল চরমপন্থী ও অমানবিক নীতি। আদালতের রায় অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ, আশ্রয়ের নিয়ম কঠোরকরণ, আদালত প্রাঙ্গণে অভিবাসন আটক অভিযান-সবকিছুই তার বৃহত্তর কৌশলের অংশ। দ্রুত নির্বাসনের সম্প্রসারণ ছিল সে পরিকল্পনার একটি মূল স্তম্ভ। কিন্তু আদালতের রায়ে এ উদ্যোগ এখন কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে।

বিষয়টি এখন আপিল কোর্টে গড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ঐতিহাসিক মামলা হয়ে উঠতে পারে। আইনজীবীরা বলছেন, এ রায় আপাতত অভিবাসীদের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে। যারা গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তারা অন্তত এখনই নির্বাসনের ঝুঁকিতে নেই। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। ভবিষ্যতে এ নীতি আবারও কার্যকর হতে পারে। ইমিগ্র্যান্ট অধিকারকর্মীদের মতে, এ নীতি কার্যকর হলে শুধু অভিবাসীরাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনি কাঠামোও দুর্বল হয়ে পড়বে। যদি সরকার একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করতে পারে, তবে একসময় সবার জন্যই সে ঝুঁকি তৈরি হবে।

২৯ আগস্টের শুক্রবারের রায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান বারবার আদালতের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। একদিকে সরকার বলছে এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়, অন্যদিকে অধিকারকর্মীরা বলছেন এটি মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার লড়াই। বিষয়টি এখানেই শেষ হচ্ছে না। এটি আপিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে এ নীতি টিকবে কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তবে আপাতত বলা যায়, অভিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)