বিংহামটন : চারঋতুর রঙিন শহর


হাবিব রহমান , আপডেট করা হয়েছে : 27-08-2025

বিংহামটন : চারঋতুর রঙিন শহর

সাসকুয়াহানা আর চেনাঙ্গো নদীর স্রোত মিলেছে যেখানে, সেখানেই জন্ম নিয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এক কাব্যিক নগরী বিংহামটন। পাহাড়ের সবুজ ঢালে আর নদীর স্বচ্ছ জলে ঘেরা এই শহর যেন প্রকৃতি ও মানুষের মিলিত শিল্পকর্ম।

শহরটি গড়ে উঠেছে পাঁচটি বরো ঘিরে-সাউথ সাইড, ফার্স্ট ওয়ার্ড, ইস্ট সাইড, ওয়েস্ট সাইড আর ডাউনটাউন। প্রতিটি বরো যেন জীবনের আলাদা অধ্যায়। সাউথ সাইডের শান্ত আবাসিকতা, ফার্স্ট ওয়ার্ডের ঐতিহ্যের টান, ইস্ট সাইডের ব্যস্ত জনজীবন, ওয়েস্ট সাইডের ছায়াময় সবুজ, আর ডাউনটাউনের শিল্প-সংস্কৃতির উচ্ছ্বাস-সব মিলে গড়ে তুলেছে বিংহামটনের প্রাণচিত্র। কেবল বরো নয়, শহরটিকে ঘিরে রেখেছে তিন কাউন্টি-ব্রুম, টিওগা আর ডেলাওয়ার। ব্রুমের ইতিহাস আর ঐশ্বর্য, টিওগার প্রান্তরের শান্ত সৌন্দর্য আর ডেলাওয়ারের পাহাড়ি দৃশ্য-সব মিলে শহরটিকে দিয়েছে বৈচিত্র্যময় রূপ।

বিংহামটন পরিচিত ‘ভ্যালি অব অপরচুনিটি’ নামে। কারণ এখানে রয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি আর জীবনের অসংখ্য সম্ভাবনা। বিংহামটন ইউনিভার্সিটির বুদ্ধিবৃত্তিক আলো, ডাউনটাউনের থিয়েটার আর জাদুঘরের শিল্পচর্চা, কিংবা পার্কের সবুজ প্রান্তর-সবই যেন জীবনের রঙে ভরিয়ে রাখে এই শহরকে। বিংহামটনের বরো আর কাউন্টিগুলো আসলে আলাদা আলাদা সুর, যা মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক বিশাল সিম্ফনি। নদীর কলতান, পাহাড়ের ছায়া আর মানুষের হাসি-সব মিলিয়ে বিংহামটন আজ কেবল একটি শহর নয়, বরং এক কবিতা, এক স্বপ্ন, এক অবিরাম যাত্রা। ব্যস্ত নগরজীবনের কোলাহল থেকে পালাতে চাইলে এই শহর প্রকৃতি আর সৌন্দর্যের এক অপূর্ব আশ্রয়। পাহাড়, নদী, সবুজ প্রকৃতি আর শান্ত পরিবেশের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা বিংহামটন যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক খোলা বই।

এ প্রকৃতির টানে নিউইয়র্কের কোলাহল ছেড়ে যখন বিংহামটনের পথে এলাম, তখনো জানতাম না প্রকৃতি আমাকে এমন গভীর আবেগে ভাসাবে। বন্ধু সাংবাদিক শিবলী চৌধুরীর বাড়ি-বিংহামটনের হিলক্রেস্ট হাইটসে। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এটি এক দৃষ্টিনন্দন আবাস। বাড়িটি যেন আকাশের সঙ্গে নিত‍্য আলাপন করে। রাত নামলে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারা খচিত আকাশের নিচে মনে হয়, পৃথিবী যেন একটু ধীরে শ্বাস নিচ্ছে।

বিংহামটনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো এর পাহাড়চূড়ার দৃশ্য। ওপর উঠলেই মেলে সবুজের সমুদ্র, দূরে কুয়াশায় মোড়া উপত্যকা আর দিগন্তছোঁয়া আকাশ। ভোরবেলায় সূর্যের আলো যখন কুয়াশার বুক চিরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন পাহাড়চূড়া হয়ে ওঠে রূপকথার মতো সুন্দর। বিংহামটনের বুক চিড়ে বয়ে চলা দুই নদী-সাসকুয়ানা ও চেনাঙ্গোর ধারে বসে সকালের সূর্যোদয় কিংবা সন্ধ্যার সূর্যাস্ত দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। নীরব জলে প্রতিফলিত হয় পাহাড়ের ছবি, যেন প্রকৃতি নিজেই আঁকছে জলরঙের ক্যানভাস। বিংহামটনে প্রতিটি ঋতুই আলাদা রূপে ধরা দেয়। বসন্তে ফোটে ফুলের বাহার, গ্রীষ্মে সবুজের সমারোহ, শরতে রঙিন পাতার উজ্জ্বল সাজ আর শীতে নেমে আসে বরফের শুভ্রতা। চার ঋতুর এ বৈচিত্র্যে শহরটি প্রতিবারই নতুনভাবে মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুদের।

শুধু প্রকৃতি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিংহামটন হয়ে উঠছে প্রবাসী বাঙালিদের নতুন ঠিকানা। রাতে বন্ধু শিবলী চৌধুরি নিয়ে গেলো ওয়াশিংটন এভিনিউতে। এখনে গড়ে উঠেছে বাঙালি দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট আর গ্রোসারি স্টোর, যা প্রবাসীদের এনে দেয় মাতৃভূমির স্বাদ। অবাক হয়ে দেখলাম, এখানে এখন বাঙালির জীবনযাত্রার প্রাণচাঞ্চল্য। দোকান, রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি-সবকিছুর ভেতর জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঘ্রাণ। গরম চায়ের ধোঁয়া, ঝালমুড়ির ঝাঁজ, দেশি খাবারের টান-প্রবাসে থেকেও মনে হলো আমি দেশের মধ্যেই আছি। শিবলী সন্ধ্যায় আমাদের সম্মানে আয়োজন করলো এক বারবিকিউ। আগুনের লাল আভায় চারপাশ রঙিন হয়ে উঠল, হাসি-আড্ডায় ভরে উঠল পাহাড়চূড়া। সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল, নিজের বাগান থেকে আনা শাকসবজি দিয়ে বানানো খাবার। যেন প্রকৃতি আর আতিথেয়তা মিলেমিশে তৈরি করলো এক অনন্য অনুভব।

পাহাড় চূড়ার রাত

বিংহামটন দিনের বেলা সবুজ পাহাড়, দুই নদীর বুকে ইতিহাস আর শান্ত প্রবাসজীবনের গল্পে ভরা। কিন্তু রাত নামলেই এই শহরটি যেন পাল্টে যায় এক রূপকথার কবিতায়। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের শহরের দিকে তাকালে মনে হয়, ঝিকিমিকি আলোয় ভেসে যাচ্ছে সাসকুয়েহানা নদী। রুপালি চাঁদ তার জ্যোৎস্নায় নদীর বুক সাজিয়েছে যেন সোনার কারুকাজে। আর দূরের শহরটা? সে যেন তারার মালা পরে ঝলমল করছে পৃথিবীর কোলঘেঁষা আকাশে। শহরের আলো নিচে, আর ওপরে নক্ষত্রভরা আকাশ। দুপাশে পাহাড়ের ছায়া, আর চারপাশে ঝিঁঝিপোকার মৃদু সুর। মনে হচ্ছিল এ যেন কোনো নাট্যমঞ্চ, যেখানে প্রকৃতি পরিচালক আর আমরা দর্শক।

পাহাড় চূড়ায় ভোর

ভোর মানেই নতুন দিনের সূচনা, নতুন আলোয় স্নান করা এক পৃথিবী। আর যদি সেই ভোর দেখা যায় পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে, তবে সেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে অপূর্ব, অনন্য, হৃদয়স্পর্শী। শান্ত পাহাড়ের কোলে ঘেরা শিবলীর বাড়িটি যেন প্রকৃতির আঁচলে রাখা এক টুকরো শিল্পকর্ম। রাতের নিস্তব্ধতা পার করে যখন ভোরের আলো উঁকি দিলো, চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো এক জাদুকরী আবহ। কুয়াশায় মোড়া পাহাড়ের বুক তখন মনে হচ্ছিল রূপকথার দেশ। ধীরে ধীরে সূর্যের প্রথম রশ্মি কুয়াশার দেওয়াল ভেদ করে ছড়িয়ে পড়লো পাহাড়ের গায়ে। আলোর স্পর্শে সবুজ পাহাড় হয়ে উঠলো আরো মোহনীয়, আকাশে মিশলো সোনালি আভা। প্রকৃতির এই দৃশ্য যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস-যেখানে রঙ, আলো আর কুয়াশা মিলেমিশে এক অনন্য ছবি এঁকেছে। ভোরের সেই মুহূর্তে পাহাড়চূড়ার নীরবতা ভেঙে পাখিদের কলতান ধ্বনিত হচ্ছিল চারপাশে। হালকা বাতাস মুখে এনে দিচ্ছিল সতেজতার ছোঁয়া। মনে হচ্ছিল এ যেন শুধু একটি সকাল নয়, বরং জীবনের এক নতুন জন্ম।

পাহাড়ের বুক ভরে ছিল কুয়াশার সাদা চাদর। হঠাৎই পূর্ব দিগন্তে উঁকি দিলো সূর্য। তার প্রথম আলো কুয়াশা ভেদ করে ছড়িয়ে পড়লো পাহাড়চূড়ায়। মুহূর্তেই প্রকৃতি যেন এক শিল্পীর তুলি হয়ে আঁকলো সোনালি ক্যানভাস। পাহাড়চূড়ার সেই ভোরে মনে হলো, এটাই হয়তো জীবনের সবচেয়ে নিখাদ প্রশান্তি। বাতাস ছিল শিশিরভেজা, গাছের পাতায় জমে থাকা ফোঁটাগুলো ঝলমল করছিল সূর্যের আলোয়। আমার মন ভরে উঠেছিল এক অদ্ভুত মায়ায়, এক অবর্ণনীয় শান্তিতে। বিংহামটনের পাহাড়চূড়ার এ ভোর আমার কাছে হয়ে থাকলো এক চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। চোখে দেখা দৃশ্য নয় শুধু, হৃদয়ে গেথে রাখা এক অপূর্ব অনুভূতি। প্রকৃতির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করা গেল জীবনের প্রতিটি ভোর আসলে একেকটি আশীর্বাদ, একেকটি নতুন কবিতা।

নদীর নাম সাসকুয়াহানা

সকালে বন্ধু কায়েস চৌধুরি নিয়ে এলো সাসকুয়াহালা নদী দেখাতে। আপস্টেট নিউইয়র্কের বুক চিরে বয়ে চলা সাসকুয়াহানা নদী প্রকৃতির এক অনন্য দান। পাহাড়ের কোল থেকে জন্ম নিয়ে এই নদী কেবল শহরকে ঘিরেই রাখেনি, দিয়েছে তার সৌন্দর্যের সি ্নগ্ধতা আর জীবনের সুর। নদীর তীরে দাঁড়ালে মনে হয়, সময় যেন থেমে গেছে তার শান্ত স্রোতের ভেতর।

সকালের আলো নদীর জলে পড়লে জলরাশির উপর তৈরি হয় হাজারো সোনালি ঝিলিক। দূরে জেলেরা তাদের নৌকা ভাসায়, মাছ ধরার ছিপ ফেলে থাকে কেউ কেউ। নদীর তীরঘেঁষে ছুটে যায় পাখির সারি আর বাতাসে ভেসে আসে বুনো ফুলের গন্ধ। গ্রীষ্মের দিনে নদীর শীতলতা, শরতে পাতাঝরার প্রতিচ্ছবি, কিংবা শীতে বরফের স্তর-প্রতিটি ঋতুতেই সাসকুয়াহানা হয়ে ওঠে ভ্রমণকারীর নতুন আবিষ্কার। বিংহামটন শহরের জীবনধারা এই নদীর সঙ্গেই মিশে আছে। নদীর ধারে ছোট ছোট পার্ক, হাঁটার পথ আর বেঞ্চিতে বসে থাকা মানুষজনের চোখে মেলে এক শান্ত প্রশান্তি। পরিবার নিয়ে পিকনিক, প্রেমিক-প্রেমিকার নির্জন আলাপ কিংবা একলা পথিকের নিরিবিলি বসে থাকা-সবকিছুতেই সাসকুয়াহানা যেন আপনজন হয়ে ওঠে।

সন্ধ্যার সময় নদীর তীরে দাঁড়ানো এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন রঙ ছড়ায়, তার প্রতিফলন নদীর বুক জুড়ে আঁকে আগুনরঙা আলপনা। হালকা হাওয়া বয়ে যায়, জলে ঢেউ খেলে ওঠে, আর হৃদয় ভরে ওঠে এক অদ্ভুত শান্তিতে। মনে হয়, জীবন যতই ব্যস্ত হোক, নদী শেখায় স্থিরতা, শেখায় গভীরতার পাঠ। সাসকুয়াহানা শুধু একটি নদী নয়, এ যেন প্রকৃতি আর জীবনের কবিতা, যেখানে প্রতিটি স্রোত বয়ে আনে সৌন্দর্য, প্রশান্তি আর সময়ের চিরন্তন সুর।

ওয়েগো ও টায়োগা হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট : ইতিহাসের রঙিন পথে একদিন

আপস্টেট নিউইয়র্কের ছোট্ট শহর ওয়েগো। সাসকুয়াহানা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই শহর যেন সময়ের আঁকা ক্যানভাস। তারই প্রাণকেন্দ্র হলো ওয়েগো ও টায়োগা হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট। এখানে পা রাখলেই মনে হবে ইতিহাস কানে কানে কথা বলছে। আলিঙ্গন করছে আপনাকে। এ ওয়েগো ও টায়োগা ডিস্টিক্ট ১৯০০ শতাব্দীর স্থাপত্যকলার জীবন্ত দৃষ্টান্ত। সময়ের সেতুবন্ধন-যেখানে অতীত ও বর্তমান হাত ধরে হাঁটে। আর ভ্রমণকারী প্রতিটি পদক্ষেপে ইতিহাসের অমূল্য ছোঁয়া পায়। এখানে হালকা বাতাসে দোলা দেয় পুরোনো বিল্ডিংগুলোর ছায়া। প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি দোকান, প্রতিটি ইটপাথরই যেন শতবর্ষের গল্প ফিসফিস করে বলে যায়।

এই ডিস্ট্রিক্টে হাঁটলেই চোখে পড়বে নান্দনিক স্থাপত্য-Italianate, Beaux-Arts, Greek Revival কিংবা Gothic Revival। প্রতিটি ভবন যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কবিতা। ঊনিশ শতকের রূপসী নগরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো ব্যাংক ভবন, ১৮২৮ সালের Owego Academy, Village Firehouse কিংবা Riverow কমপ্লেক্স।

সাসকুয়াহানা নদী এখানে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। তার কোলঘেঁষে হাঁটার সময় রাস্তার দুপাশে চোখে পড়বে ছোট্ট দোকান, গ্যালারি, বইয়ের দোকান আর কফিশপ। মনে হয়, শহরের প্রতিটি ইট, প্রতিটি জানালা, প্রতিটি দরজা এখনো গল্প বলে যাচ্ছে অতীতের। নদীর তীর ধরে যখন হাঁটবেন মনে হবে সাসকুয়াহানা নদীর শান্ত ধারা যেন আপনাকে মৃদু সুরে গুনগুনিয়ে বলছে ‘এসো, ইতিহাসের পথে হাঁটো, শোনো শতবর্ষের গল্প।’

ওয়েগো ও টায়োগা হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্টে পা রাখলেই মনে হবে আপনি কোনো সময়ের কুয়াশা ভেদ করে ফিরে গিয়েছেন ঊনিশ শতকের রঙিন শহরে। এখানে প্রতিটি দেওয়াল, প্রতিটি জানালা, প্রতিটি দরজা যেন সময়ের আঁকা ক্যানভাস। এ জেলার বাড়িঘর বদলাতে হলে আজও অনুমতি নিতে হয় Preservation Commission থেকে। তাই পুরোনো দিনের আবহ অক্ষুণ্ন রয়ে গেছে। এখানকার কাফেতে বসে কফির কাপে চুমুক দিলে মনে হবে সময় যেন থেমে গেছে আর আপনি ইতিহাসের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছেন। ভ্রমণপিপাসুর কাছে ওয়েগো ও টায়োগা হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট মানে হলো এক রূপকথার ভ্রমণ-

যেখানে নদীর ধারা ছন্দ হয়ে বাজে,

স্থাপত্য হয় কবিতা,

আর জীবন হয়ে ওঠে স্মৃতির অমূল্য সঞ্চয়।

ওয়েগো ও টায়োগা শুধু একটি হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট নয়-এটি ইতিহাসের সঙ্গে, নদীর সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে এক চিরন্তন প্রেমকাহিনি।

টিউগা রিভার ওয়াকওয়ে

হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক ভ্রমন শেষ করে আমরা গেলাম টিউগা রিভার ওয়াকওয়েতে। বিংহামটন শহর ঘিরে থাকা নদীগুলোই যেন এর প্রাণ। চেনাঙ্গো ও সাসকুয়াহানার পাশাপাশি টিউগা নদীও শহরকে দিয়েছে অনন্য সৌন্দর্য। আর সেই নদীর কোলঘেঁষে নির্মিত হয়েছে মনোমুগ্ধকর টিউগা রিভার ওয়াকওয়ে, যা এখন স্থানীয়দের কাছে বিনোদন, বিশ্রাম আর সৌন্দর্য উপভোগের এক অপরিহার্য ঠিকানা।

দিনের শুরুতে এখানকার পথজুড়ে দেখা মেলে দৌড়বিদদের ছুটন্ত ছন্দ। দুপুরে পরিবার আর শিশুদের নির্ভার হাঁটা আর সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের কোমল আলোয় ভেসে ওঠা সোনালি আকাশ-সব মিলে টিউগা রিভার ওয়াকওয়ে হয়ে ওঠে সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া এক জাদুকরী প্রেক্ষাপট। সাইক্লিস্ট, হাঁটাহাঁটি প্রেমী কিংবা নিঃসঙ্গ ভ্রমণকারী-সবাইকে সমান টানে এই ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়ের ধারে বসানো বেঞ্চগুলো যেন পথিকদের ডাকে, ‘এসো, একটু থেমে নদীর স্রোতের গান শোনো।’ বাতাসে মিশে থাকে গাছের পাতার ফিসফিসানি, দূরের শহরের কোলাহল মিলিয়ে যায় নদীর কলতানে।

স্থানীয় প্রশাসনের যত্নে পরিচ্ছন্ন এই রিভার ওয়াক এখন শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, বরং ছোট ছোট সাংস্কৃতিক আয়োজন ও কমিউনিটি ইভেন্টেরও প্রাণকেন্দ্র। ফলে বিংহামটনের সামাজিক জীবনে এর প্রভাবও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। প্রকৃতি, সুস্থতা আর সামাজিক বন্ধনের মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠা টিউগা রিভার ওয়াকওয়ে আজ শুধু একটি পথ নয়-এটি বিংহামটনের হৃদস্পন্দন। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে নদী, আকাশ আর মানুষের প্রাণ একসঙ্গে মিশে যায় কাবি‍্যক ছন্দে। প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে বিংহামটন শুধু একটি শহর নয়, বরং এক প্রশান্তির ঠিকানা। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা কিংবা নদীর ধারে নির্জনে বসে থাকা সবকিছু মিলিয়ে বিংহামটন ভ্রমণকারীর মনে রেখে যায় এক চিরন্তন স্মৃতি। বিংহামটন তাই আমার কাছে শুধু এক ভ্রমণের নাম নয়, বরং হৃদয়ের গভীরে লেখা এক রোমান্টিক কবিতা। পাহাড়চূড়ার ভোর, প্রবাসের আকাশে বাঙালি জীবনের আলো আর সাংবাদিক কায়েস চৌধুরীর বন্ধুত্বের উষ্ণতা সব মিলিয়ে দুদিন হয়ে উঠলো জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

নিউইয়র্ক ২৫ আগস্ট, ২০২৫ সাল


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)