দেশ এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 27-08-2025

দেশ এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত

নির্বাচন আয়োজনে ইসির ব্যস্ততা ব্যাপক। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে তৎপরতা কম নয়। ইতিমধ্যে ইসলামপন্থী দলগুলোর কেউ কেউ ৩০০ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছেন। সম্ভাব্য আওয়ামী লীগবিহীন এ নির্বাচনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিও। জানা গেছে, ইতোমধ্যে শতাধিক প্রার্থীকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য। বাকিগুলো নিয়েও চলছে চূড়ান্তকরণের চেষ্টা। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশ এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। 

সরকারের চেষ্টায় দেশ যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরতে গত রোববার থেকে কক্সবাজারে তিনদিনের আন্তর্জাতিক সংলাপ ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ : টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতর যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়েছেন জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সক্রিয় সব স্টেকহোল্ডারসহ অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি। সম্মেলনের প্রথম দিনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল সরাসরি বিদেশি অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজেদের অভিজ্ঞতা, নির্যাতনের কাহিনী ও প্রত্যাবাসনের আকাক্সক্ষা তুলে ধরেন। গতকাল সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য সাতদফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আছি। এক বছর আগে আমরা এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তাদের একমাত্র স্বদেশ মায়ানমার। আট বছর ধরে বাংলাদেশ তাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যার মূলোৎপাটন হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, নতুবা এ অঞ্চল দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। তিনি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন, খাদ্য সহায়তা জোরদার এবং রোহিঙ্গাদের মনোবল ধরে রাখতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। 

ড. ইউনূস উত্থাপিত সাতদফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- 

রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন, দাতাদের অব্যাহত সমর্থন, মায়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা, গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি ত্বরান্বিত করা।

জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি সভায় মন্তব্য করেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যই এ সমস্যার সমাধান জরুরি। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি জানান, তাদের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে, তবে সমাধানের জন্য মায়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। আয়োজক সূত্র জানায়, এই সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যকর রূপরেখা প্রণয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফান্ড গঠন, গণহত্যার বিচার, খাদ্য ও মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গাদের মানসিক শক্তি ও মনোবল বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। 

এদিকে নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। তবে নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে। শত শত রোহিঙ্গা হাতে পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়ে এই আওয়াজ তোলেন। তাদের সবার কণ্ঠে ছিল ফিরে যাওয়ার আকুতি। উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ৭টি ক্যাম্পসহ অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই পালিত হয়েছে এ দিবস। পৃথক সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গা নেতারা তুলে ধরেন একাধিক দাবি। মায়ানমারে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ৮ বছর পূর্তিতে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশে দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন বেলা ১১টায় বিভিন্ন ক্যাম্পে একযোগে সমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি হয়েছে উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর বর্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বালুর মাঠে।

এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সকাল থেকেই পালিত হয় নানা কর্মসূচি। নিহত স্বজনদের স্মরণের মাধ্যমে সমাবেশে পূর্ণ হয়ে ওঠে ক্যাম্প। জমায়েত মাঠ ছাড়িয়ে পাহাড়েও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সেøাগানে উচ্চারিত হয় একটাই দাবি-নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে, নাগরিক অধিকার নিয়ে মায়ানমারে প্রত্যাবাসন।

বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর নতুন করে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ। শুধু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন করে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)