শিক্ষাঙ্গনে নতুন নজরদারির আতঙ্ক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 06-08-2025

শিক্ষাঙ্গনে নতুন নজরদারির আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এখন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এই চুক্তি শিক্ষাঙ্গনে অ্যাকাডেমিক পুলিশ স্টেট গঠনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এ অংশীদারত্বের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি নজরদারি, অভিবাসী শিকার এবং রাজনৈতিক মতপ্রকাশ দমন করার এক ধরনের সহায়ক শক্তিতে রূপ নিচ্ছে বলে দাবি করছেন মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী নীতির মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি ২০২৯ সালের মধ্যে প্রতি বছর এক কোটি অভিবাসী বহিষ্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতাড়ন অভিযান হবে। এ লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিগ বিউটিফুল বিল নামক একটি বিল পাস করিয়েছে, যার মাধ্যমে আইসিই এবং সিবিপিকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বড় আর্থিক বরাদ্দ।

এই বরাদ্দের অংশ হিসেবে অভিবাসীদের ধরতে আইসিইএখন হাসপাতাল, আদালত, স্কুল এমনকি গির্জার মধ্যেও অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে সিবিপির কর্মকাণ্ডও আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে-তারা রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্মীয় পরিচয়, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে অভিবাসীদের টার্গেট করছে।

এদিকে ফ্লোরিডা গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ২০২৪ সালে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে রাজ্যের সব কাউন্টি পুলিশ বিভাগকে আইসিই-এর ২৮৭(জি ) প্রোগ্রামে যুক্ত হতে বাধ্য করেছেন। এর আওতায় স্থানীয় পুলিশরা অভিবাসন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। ইতোমধ্যেই ফ্লোরিডার ৩০০-এর বেশি সংস্থা এই প্রোগ্রামে যুক্ত হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ বিভাগও এই প্রোগ্রামে নাম লিখিয়েছে।

ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পুলিশ বিভাগ ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আইসিই-এর সঙ্গে তাদের ২৮৭(জি ) চুক্তি সম্পন্ন করে। চুক্তি অনুযায়ী, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পুলিশ এখন ক্যাম্পাসে অভিবাসীদের আটক, জিজ্ঞাসাবাদ এবং ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানোর ক্ষমতা পেয়েছে। অথচ ২০১২ সালে এ মডেলটি বন্ধ করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে। অন্যদিকে নিউইয়র্কের সেন্ট জনস ইউনিভার্সিটি সিবিপির সঙ্গে চুক্তি করে ইনস্টিটিউট ফর বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স স্টাডিস নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র চালু করছে, যেখানে বর্ডার নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং ট্রেনিং পরিচালিত হবে। এছাড়া সিবিপি কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সিমুলেশন ল্যাবেও কাজ করবেন, যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি দিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এ অংশীদারত্বের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও সহিংসতার অনুপ্রবেশ ঘটায়। ছাত্র সংগঠন ল্যাটিন আমেরিকান ল’ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এটি এমন এক সংস্থার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া, যাদের অতীতে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস রয়েছে। ১ হাজার জনের বেশি শিক্ষক ও ছাত্র একটি পিটিশনে এ চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাশের বলেন, এ চুক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী শিকড়কে আরো দৃঢ় করে তুলছে, যা এখন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পূর্ণ শক্তি দিয়ে চালিত হচ্ছে।

এছাড়া, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কেও (শুনি) কিছু শিক্ষক দাবি তুলেছেন যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে এবং ক্যাম্পাসে এমন নিরপেক্ষ স্থান নির্ধারণ করে যেখানে কোনো আইসিই এজেন্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না।

স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকরা একটি নতুন হুমকি আবিষ্কার করেছেন-একটি এন্টারপ্রাইস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজরদারি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণ করছে। এই বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শ্যাডো ড্রাগন নামক নজরদারি সফটওয়্যারের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। সর্বশেষ বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-টেরোরিজম আইন প্রয়োগ শুরু করেছে। ফলে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় শিক্ষার্থীকে এখন নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে কখনো ছিল মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ এবং নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, সেখানে এখন শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত কারণ তাদের তথ্য, পরিচয় এবং বিশ্বাস রাষ্ট্রীয় নজরদারির আওতায় চলে যাচ্ছে। অথচ এ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে শিক্ষকরাই। সিপেরো লোপেজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই রাষ্ট্রের দমনযন্ত্রের অংশ হতে পারে না। আমাদের এখন একজোট হয়ে এর বিরোধিতা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলছে, এটা কোনো সিনেমা নয় এটাই বাস্তব জীবন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)