ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ : জোনায়েদ সাকি


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-08-2025

ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ : জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বারবার শহীদের কথা বলি, কারণ পুরনো বন্দোবস্ত জায়গা করে নেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হবে আমাদের এই রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ।

শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিল সহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৪ আগস্ট সোমবার, ঢাকার মিরপুর ১০ আইডিয়াল গার্লস স্কুলের পাশে সমাবেশ, মোমবাতি প্রজ্বলন, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও স্মৃতিচারণের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কথা ছিল, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলো হাহাকার করে বিচার প্রক্রিয়া কত দূর ভেবে। একটা রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র হয়ে উঠছে কিনা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারছে কিনা তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার দেওয়ার সক্ষমতা ওপর।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আমাদের শহীদ এবং যারা আহত তারা এই জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন, আমাদের দেশের মানুষ মৃত নয়, তারা অন্যায়ের বিরোধিতা করে ও শেষপর্যন্ত লড়াই করে খুনীদেরকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করে গেছেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, যখন মিরপুর ১০ দখল হয়ে গিয়েছিল, তখন অন্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে শহীদ শাকিলরা জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রতিরোধ সমরে খালি হাতে লড়াই সংগঠিত করেছিলেন তারা। আওয়ামী পুলিশ ও গুণ্ডাবাহিনী সশস্ত্র একসাথে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেখানে। ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তিন দিন কোমায় থাকার পর শহীদ শাকিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সবার আগে কর্তব্য ছিল শহীদদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে বড় মাহেন্দ্রক্ষণ ৫ আগস্ট আবার আসছে। আমরা এখনও জানি না শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাবো কিনা, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখব কিনা, তাদের পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া নিশ্চিত হবে কিনা, সমস্ত আহতের চিকিৎসা ও জীবনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে সেটা দেখব কিনা। এটা এই সরকারের ব্যর্থতা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জুলাই-আগস্ট মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচির শেষ দিনে মিরপুরে এই আয়োজনে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, শহীদ জুলফিকার শাকিল নিজেকে বহু আগে থেকেই এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। লড়াই চলাকালে শহীদ শাকিলের লেখা কবিতা পড়লে মনে হয়, তিনি তার আত্মাহুতিকে নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন। যে কারণে শাকিলরা এভাবে জীবন দিয়ে গেলেন, সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা শপথ করেছি। শহীদ শাকিলরা জীবন দিয়ে জীবনকে অতিক্রম করেছেন। সমস্ত শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। আহত ও শহীদ পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নিতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, বহু মানুষ যে সময় ফ্যাসিবাদের দৌরাত্ম্যে হতাশ হয়ে পড়েছিল, তখন শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিল পরিবর্তনের রাজনীতিতে যুক্ত হন। যে নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধ্ব তিনি জীবন দিয়েছেন, তার হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

শহীদ শাকিলের স্কুল আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মতো যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলেই আমরা গণঅভ্যুত্থানে মানুষের বিজয় দেখেছি।

গণসংহতি আন্দোলনের মিরপুর পল্লবী থানার সদস্য সচিব প্রদীপ রায় বলেন, আমরা যেখানে চাঁদবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম, সেখানে এখন চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা নাগরিকের মর্যাদা দেওয়ার জন্য রাজনীতি করছি।

দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সভায় আপনারা যে আলাপই করেন না কেন, সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ বুঝে তার মর্যাদার জীবন আর তার পাওনা অধিকার। এই অধিকার আদায়ের জন্য যে সংস্কার দরকার, সেটাই আমাদেরকে করতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের নেতা ইয়াসিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলীফ দেওয়ান ও সৈকত মল্লিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য হাসান আশরাফ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরী; বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় স্কুল বিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইরান ও আশরাফুল আলম সোহেল, ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাঁকন বিশ্বাস; বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, মিরপুরের সংগঠক রতন তালুকদার; বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু রায়হান খান। কেন্দ্রীয় সংগঠক সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, মিরপুর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক রতন তালুকদার, রুপনগর থানার সংগঠক লুৎফর নাহার সুমনা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা, অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মাহবুব রতন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)