ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ অসাংবিধানিক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 30-07-2025

ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ অসাংবিধানিক

সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ইউএস ৯ম সার্কিট কোর্ট অব আপিলের তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল গত ২৩ জুলাই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে স্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, এ আদেশ মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর নাগরিকত্ব ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই বিচারপতি রোনাল্ড গুল্ড ও মাইকেল হকিন্স তাদের দেওয়া রায়ে উল্লেখ করেন, জন্মস্থান অনুসারে নাগরিকত্বের অধিকার সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে সুরক্ষিত এবং এতে হস্তক্ষেপ করার যে কোনো প্রচেষ্টা অসাংবিধানিক। আদালত আরো ব্যাখ্যা করে, নিম্ন আদালতের জারি করা জাতীয় নিষেধাজ্ঞা আইনত যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয় ছিল। যদি নিষেধাজ্ঞাটি আংশিকভাবে কার্যকর হতো, তাহলে বাদী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রশাসনিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতো এবং সামাজিক সেবা বিতরণ ও নাগরিকত্ব যাচাই ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে তিনি ঘোষণা দেন যে, যদি কোনো শিশুর পিতা-মাতা ‘অবৈধ’ বা ‘অস্থায়ী’ অভিবাসী হন, তাহলে সে শিশু যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না। এ আদেশ দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক নীতি ও আইনি প্রথাকে চ্যালেঞ্জ জানায়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয় একাধিক আইনি প্রতিরোধ।

নিউ হ্যাম্পশায়ারের ফেডারেল বিচারক জোসেফ ল্যাপ্লান্তে ক্লাস অ্যাকশন মামলার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের একটি শ্রেণি হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং বলেন, তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা একটি ‘অপূরণীয় ক্ষতি’। তার আদেশের পর আরো কয়েকটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হওয়া থেকে স্থগিত করে। ৯ম সার্কিট কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে বিচারপতি রোনাল্ড গুল্ড বলেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর অধীনে স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সরাসরি ১৮৯৮ সালের ঐতিহাসিক ইউ এস বনাম কিম আর্ক মামলার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে। সে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের পিতা-মাতা অভিবাসী হলেও তারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকারী। বিচারপতি গুল্ড বলেন, ‘এ রায় অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং তা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।’

বিচারপতি গুল্ড আরো বলেন, সর্বজনীন নিষেধাজ্ঞা জরুরি ছিল কারণ আংশিক নিষেধাজ্ঞা দিলে বাদী রাজ্যগুলো প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এবং আইনি জটিলতায় পড়তো। এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন বিচারপতি মাইকেল হকিন্স, যিনি রায়ে বলেন, ‘এ আদেশ ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ তবে বিচারপতি প্যাট্রিক বুমাটাই, যিনি ট্রাম্পের মনোনীত, রায়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় বাদী অঙ্গরাজ্যগুলোর যথাযথ আইনি অধিকার নেই (স্ট্যান্ডিং নেই), তাই এ মুহূর্তে আদালতের পক্ষে মূল বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ প্রতিকার চাওয়ার যুক্তিগুলো বিচারিকভাবে খতিয়ে দেখা উচিত, কারণ তা সর্বজনীন নিষেধাজ্ঞা জারির একটি গোপন পথ হয়ে উঠতে পারে। তবে তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সাংবিধানিকতা নিয়ে সরাসরি মত দেননি।

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিল, ১৪তম সংশোধনীর ‘বিষয় হলো এখতিয়ার’ বাক্যাংশের মানে, কেবল তারাই নাগরিক হবেন, যাদের পিতা-মাতা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কিন্তু আদালতের মতে, এ ব্যাখ্যা সংবিধানের ভাষাকে বিকৃত করে এবং যুগান্তকারী রায় ও আইনি রীতিনীতিকে অস্বীকার করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে নিউ হ্যাম্পশায়ারের মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে আদেশটিকে সরাসরি ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।

বাদী চারটি স্টেট ওয়াশিংটন, আরিজোনা, ইলিনয় ও ওরেগন ফেডারেল আদালতে যুক্তি দেয় যে, যদি এ আদেশ কিছু রাজ্যে কার্যকর হয়, তবে তা নাগরিকত্ব যাচাই এবং সামাজিক সেবায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এ কারণেই তারা সর্বজনীন নিষেধাজ্ঞার দাবি জানায় এবং আদালত তা মেনে নেয়। এ রায়ের পর ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে দুটি আইনি পথ খোলা রয়েছে: প্রথমত, ৯ম সার্কিটের পূর্ণ বেঞ্চে রিভিউ চাওয়া; দ্বিতীয়ত, সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা। তবে এখনো পর্যন্ত হোয়াইট হাউজ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে এই রায় নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

৯ম সার্কিট কোর্টের এই রায় শুধু ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একটি বাধাই নয়, বরং এটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সাংবিধানিক অধিকারের একটি শক্তিশালী পুনঃনিশ্চয়ন। এ রায় প্রমাণ করে, মার্কিন সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে এবং যে কোনো সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ আদালতের কঠোর নজরদারির বাইরে থাকতে পারে না। যদিও সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও আপাতত এ রায়ের ফলে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার আইনি ভিত্তিতে পুনরায় সুরক্ষিত হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রায় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও নাগরিকত্ব নীতিমালায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)