ট্রাম্পের নতুন আইনে বাড়তি ফি : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুযোগ বাতিল


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 23-07-2025

ট্রাম্পের নতুন আইনে বাড়তি ফি : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুযোগ বাতিল

২০২৫ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ আইন হিসেবে অনুমোদন করেছেন। এ আইনের মাধ্যমে দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থায় এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে। বিলটিতে বিপুল অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি এমন বেশ কিছু বিধান রয়েছে, যা অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ব্যয়বহুল ও অনেক বেশি সীমিত প্রবেশযোগ্য করে তুলেছে। এর একটি বড় পরিবর্তন হলো বহু অভিবাসন আবেদনের জন্য নতুন ও অতিরিক্ত ফি আরোপ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফি মওকুফের সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

এ আইনের অধীনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনকারীদের এখন ১০০ ডলার ফি দিতে হবে, যেখানে আগে এটি ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যাদের আবেদন বিচারাধীন রয়েছে, তাদের প্রতি বছর ১০০ ডলার করে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে, যতদিন না আবেদন নিষ্পত্তি হয়। এছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের প্রথমবার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ৫৫০ ডলার এবং পরে নবায়নের জন্য ২৭৫ ডলার দিতে হবে। আগে এসব খরচ ছিল তুলনামূলক অনেক কম। টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস)-এর আবেদন ফি ৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ ডলার করা হয়েছে। মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ‘প্যারোল’ আবেদন করতে এখন ১ হাজার ডলার দিতে হবে। এসব আবেদনেও কোনো ফি ছাড়ের সুযোগ নেই।

আইনটি শিশু অভিবাসীদের ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলবে। স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জুভেনাইল স্ট্যাটাস বা শিশু অভিবাসী সুরক্ষার আবেদন আগে বিনামূল্যে করা যেত, এখন এর জন্য ২৫০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ফি ছাড়ের আবেদন করা যাবে, তবে দরিদ্র শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য এটি একটি বড় আর্থিক প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে।

পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে অস্থায়ী ভিসা, যেমন-ছাত্র, কৃষিশ্রমিক, কর্মী ভিসার জন্য ২৫০ ডলারের নতুন একটি ‘ইন্টিগ্রিটি ফি’ আরোপ করা হয়েছে, যার জন্য কোনো ছাড় নেই। অন্যদিকে সীমান্তে আটক অননুমোদিত অভিবাসীদের জন্য ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে আগে এটি ছিল ৫০ থেকে ২৫০ ডলারের মধ্যে। অনুপস্থিতিতে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজির না হওয়ায় যেসব অভিবাসী পরে গ্রেফতার হন, তাদের ক্ষেত্রেও ৫ হাজার ডলার ফি ধার্য করা হয়েছে, যা ফি ছাড়যোগ্য নয়।

অভিবাসন আদালতে করা বিভিন্ন আবেদন, আপিল ও রিভিউয়ের ফিতেও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। গ্রিনকার্ড আবেদনের ফি ১ হাজার ৪৪০ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০০ ডলার হয়েছে। টিপিএস আবেদন ফি ৫০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০ ডলার। বিচারকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে এখন ৯০০ ডলার আর রিভিউ বা পুনঃশুনানির জন্যও ৯০০ ডলার ফি নির্ধারিত হয়েছে, যেখানে আগে এসব ফি ছিল ১১০ থেকে ১৪৫ ডলারের মধ্যে। যদিও কিছু আবেদন ফিতে ছাড় চাওয়া যেতে পারে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে অথবা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে।

এ আইন স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশ বা থাকার জন্য এখন অর্থনৈতিক সামর্থ্য একটি প্রধান শর্তে পরিণত হয়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিল কার্যত একটি ‘পে-টু-প্লে’ সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে শুধু আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরাই আইনি সুরক্ষা বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবে। ফলে হাজার হাজার দরিদ্র অভিবাসনপ্রার্থী, শিশু এবং শরণার্থীদের জন্য আইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সম্ভাবনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। মানবাধিকার কর্মীরা এই পরিস্থিতিকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে বিবেচনা করছেন। বিলটির আর্থিক ভার এবং নীতিগত দিক বিবেচনায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক আমূল পরিবর্তন এবং মানবিক মূল্যবোধ থেকে সরে আসার বার্তা দিচ্ছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)