কানাডা থেকে নিউইয়র্কে পর্যটক প্রবেশে বড় ধস


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 16-07-2025

কানাডা থেকে নিউইয়র্কে পর্যটক প্রবেশে বড় ধস

ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকেই কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও বাডুজ্যিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী স্টেটগুলোর পর্যটনখাত ও অর্থনীতিতে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক স্টেটে কানাডা থেকে পর্যটক ও যানবাহনের প্রবেশে ব্যাপক হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি এবং কড়া ইমিগ্রেশন আইন সীমান্তে তল্লাশি ও যাচাইকরণের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সীমান্ত পারাপারে জটিলতা ও বিলম্ব বেড়েছে। এছাড়াও কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার মতো ট্রাম্পের একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে কানাডিয়ান পর্যটকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের আগ্রহ কমেছে, যা নিউইয়র্কের মতো পর্যটননির্ভর রাজ্যে ছোট ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে কানাডা থেকে নিউইয়র্ক স্টেটে পর্যটক ও যানবাহন প্রবেশে প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি হ্রাস দেখা গেছে ওগডেন্সবার্গ-প্রেস্কট আন্তর্জাতিক সেতুতে, যেখানে ২৮ শতাংশ কম গাড়ি চলাচল করেছে। মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ প্রবণতার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিকেই দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করা, তাও গ্রীষ্মকালীন পর্যটন মৌসুম শুরুর ঠিক আগে, অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। আপস্টেট নিউইয়র্ক ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের সরাসরি শিকার এবং এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে বাফেলো থেকে ওগডেন্সবার্গ পর্যন্ত আমাদের পর্যটন অর্থনীতি চরম মূল্য দিচ্ছে। শুমার আরো বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি খরচ কমাচ্ছে না, বরং পরিবারের জন্য খরচ বাড়াচ্ছে এবং কানাডিয়ান পর্যটকদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে-যারা আমাদের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁয় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং হাজার হাজার চাকরি টিকেয়ে রাখে।

২০২৪ সালে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০.৪ মিলিয়ন ভ্রমণকারী প্রবেশ করেছিল, যারা বছরে প্রায় ২০.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন এবং এতে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি চাকরি সৃষ্টি বা রক্ষা পেয়েছে। কেবল বাফেলো শহরেই কানাডীয় পর্যটন মোট পর্যটন আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ, এবং সিরাকিউজ শহরের পর্যটন আয়ের ১৫ শতাংশ আসে কানাডিয়ানদের ব্যয়ে। নর্থ কান্ট্রি চেম্বার অব কমার্স পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৬৬ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কানাডিয়ান বুকিং হ্রাসের প্রভাব অনুভব করছে। শুমার সতর্ক করে বলেন, যদি কানাডা থেকে পর্যটন মাত্র ১০ শতাংশ হ্রাস পায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি এবং ১৪ হাজার চাকরি হ্রাস পেতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুতেই কানাডার ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া তিনি একাধিকবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানোর প্রস্তাব দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেন। এই উত্তেজনার ছায়া পড়েছে কানাডার সাম্প্রতিক নির্বাচনে, যেখানে লিবারেল পার্টিুর নেতা মার্ক কারনি ডানপন্থী পিয়েরে পয়লিভ্রেকে পরাজিত করেন। কারণ তার নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার পুরোনো সম্পর্ক এখন শেষ।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)