প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতাড়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আদালতের বিচারকদের ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে। গত ১১ জুলাই আরো ১৫ জন অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া বিচারকদের ১১ জুলাই ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়, তাদের চাকরির মেয়াদ ২২ জুলাই শেষ হচ্ছে এবং তারা অবিলম্বে ছুটিতে যাচ্ছেন।
এ বিচারকরা ম্যাসাচুসেটস, ইলিনয়, ওহাইও, টেক্সাস, নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন অভিবাসন আদালতে কর্মরত ছিলেন। বরখাস্তের কারণ হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। অভিবাসন বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী পেশাদার ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব প্রফেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (আইএফপিটিই ) জানিয়েছে, এই বিচারকরা তাদের দুই বছর মেয়াদি প্রবেশন পিরিয়ড শেষ করে স্থায়ী নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন। সাধারণভাবে, প্রবেশন শেষে ৯৪ শতাংশ বিচারককে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। আইএফপিটিই সভাপতি ম্যাট বিগস এই ছাঁটাইকে জনস্বার্থের পরিপন্থী ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যেখানে কংগ্রেস ৮০০ অভিবাসন বিচারক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে বিনা কারণে বিচারকদের বরখাস্ত করাটা এক ধরনের দ্বিচারিতা।
ছাঁটাই হওয়া এক বিচারক বলেন, আমি চেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত থেকে ন্যায়বিচার করি। যেহেতু আমি এখনো আছি, কিছু ভালো করার সুযোগ ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, তার কার্যকালীন সময়ে তিনি বিতাড়নের আদেশের পাশাপাশি কিছু অভিবাসীকে স্বস্তিও দিয়েছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালতগুলো বর্তমানে প্রায় ৪০ লক্ষ মামলার জটে ভুগছে। যদিও কংগ্রেস সম্প্রতি বিচার বিভাগকে অভিবাসন-বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু একজন নতুন বিচারক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে এক বছরেরও বেশি সময় লাগে।
এই বরখাস্ত নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে। ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও এড মার্কি এক চিঠিতে বিচারকদের ছাঁটাইয়ের পেছনে রাজনৈতিক আনুগত্য যেন কোনো মানদণ্ড না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন। তারা বলেন, পর্যালোচনাগুলো বিচারকদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে হওয়া উচিত, রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়। ছাঁটাইয়ের এই প্রবণতা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আদালতগুলোর ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ফ্লোরিডায় রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ্যে এসেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৭১টি অভিবাসন আদালত ও অ্যাডজুডিকেশন সেন্টারে প্রায় ৭০০ জন অভিবাসন বিচারক রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
মানবাধিকার সংগঠন এবং আইনজীবীরা বলছেন, অভিবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার নামে বিচারকদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা হুমকির মুখে পড়ছে। বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এই বরখাস্তগুলো নিয়ে এখনই স্বচ্ছ ও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার দাবি জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল।