জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 16-07-2025

জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন

জঙ্গিবাদ নিয়ে বাংলাদেশের সতর্ক থাকা উচিত বলে মার্কিনীদের নয়া পরামর্শে রাজনৈদিক অঙ্গনে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তার সময়ে কি এমন ঘটনা ঘটে গেলো বা ঘটে যাচ্ছে যে মার্কিনীরা সরকারকে বহুল আলোচিত জঙ্গিবাদ ইস্যুকেই আবার সামনে আনলেন?

কি বললেন মার্কিন দূত

গত সপ্তাহে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাত করতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডিন। এতে তিনি বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, যেকোনো দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে এ সংক্রান্ত্র এজেন্সিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, সমন্বয় ও তথ্য শেয়ারকরণ অত্যন্ত জরুরি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস

মেগান বোল্ডিনের এমন বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো জঙ্গিবাদ নেই। তবে মাঝে মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল মিটিং-মিছিলের চেষ্টা করে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, যে কোনো ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ঢাকার বারিধারা ডিপ্লোমেটিক এরিয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সেখানে কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।

নেপথ্যে কি

বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডিন এমন কথা বলেছেন। এর অন্যতম হলো তিনি যখন এমন মন্তব্য করেন তখন তার কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে একটি ইসলামী দল বিরাট সমাবেশ করে। বাংলাদেশের ওই ইসলামী দলটি হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় গত মাসের শেষে দিকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশস্থল থেকে নেতাকর্মীদের বিস্তৃতি আশপাশের এলাকা রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন, শাহবাগ ও টিএসসি মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। কারো কারো মতে, রাজধানীর বুকে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনে এই দলটির বিশাল সমাবেশ ভারতের পত্রপত্রিকায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করলেও বার্তা দেয় নেগেটিভ। 

এদিকে আগামী ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ‘জাতীয় সমাবেশ’ করতে যাচ্ছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয় যে ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ হবে। এর আগে জামায়াত কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয়ভাবে সমাবেশ করেনি। কিন্তু তারপরে নানান ধরনের সন্দেহের তীর দলটির বিরুদ্ধে। ভারতের প্রচারণা আছে বাংলাদেমে জামায়াত হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক।

মালয়েশিয়ায় জঙ্গিবাদে বাংলাদেশ

এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাজধানীতে আরেকটি ইসলামী দলের সমাবেশ আয়োজনের খবরের পরপরই স্পর্শকারত ও-ই খবর ফলাও করে প্রচার পায়। দেশে বিদেশে ফলাও করে প্রচার হয় যে, জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করেছে। মালয়েশিয়ায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি এসব শ্রমিকেরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর কাছে অর্থ পাঠাতেন বলে দাবি করেছেন দেশটির পুলিশ প্রধান খালিদ ইসমাইল। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত এপ্রিল থেকে পরিচালিত একাধিক অভিযানে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। তাঁরা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কাজ করছিলেন।

আবার জঙ্গিবাদের অভিযোগের নেপথ্যে কি?

কারো কারো মতে, এসব ঘটনোরও অনেক আগে বিশেষ করে বাংলাদেশে সম্প্রতি আরও কয়েকটি ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অলোচিত হতে থাকে দেশটিতে আবারও জঙ্গিবাদের অভয়াশ্রম হতে যাচ্ছে কি-না? ওই দিকে কেউ বাংলাদেকে নিয়ে যাচ্ছে কি-না সেব্যাপারে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আছে। কেননা বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ৫ই অগাস্টের পট পরিবর্তনের পর জঙ্গিবাদের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত শত শত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বলা হয় এই সংখ্যা তিন শতাধিক। প্রচার আছে জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে সন্দেহভাজন, বিচারাধীন, এমনকি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিও রয়েছেন। আরও অভিযোগ হচ্ছে জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা বিগত সরকারের সময়ে উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, আনসারুলল্লাহ বাংলা টিম, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া, আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরীর, হামজা ব্রিগেড, ইমাম মাহমুদের কাফেলা, কেএনএফ এবং আল্লার দলের সদস্য।

অন্যদিকে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের প্রকাশ্যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খবর পশ্চিমাদের বেশ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আর এসব বিষয়গুলি মাথায় রেখেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডিনের ওই ধরনের সর্তক থাকার পরামর্শ কি-না তা সময় বলে দেবে। এখন দেখা যাবে সামনের দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কিভাবে তা মোকাবেলা করেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)