অলটাইম সরকারি দলে থাকা জাতীয় পার্টিতে গৃহবিবাদ চরমে। ৫ আগস্টের পর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা দলটি এমনিতেই ‘স্বৈরাচারের দোসর’ উপাধি লাভ করে ইতিমধ্যে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এরপর নানা সময়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করতে যেয়ে আক্রমণেরও শিকার আলোচিত দলটি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত হলেও অলটাইম সরকারি দলের পার্ট থাকা জাতীয় পার্টিকে তেমন কোনো অবস্থায় পড়তে হয়নি। এরপরও তাদের ওপর দিয়ে ঝামেলা একেবারেই কম যায়নি। মামলা-মোকদ্দমায়ও পড়েছেন কেউ। কিন্তু এরই মধ্যে বছরখানেক সময় কেটে যাওয়ার পর এবার গৃহবিবাদ চরমে উঠছে। আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে সংসদে থাকার সময়ও দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল। এবার প্রকাশ্যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আসন্ন জাতীয় পার্টির (জাপা) দশম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দলের শীর্ষ নেতাদের দুটি পক্ষের চলা উত্তেজনার মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এতে করে দলটির মধ্যে ইতিমধ্যে দুই ভাগ হয়ে যাবার ইঙ্গিত মিলেছে। কেননা ইতিমধ্যে বহিষ্কৃত তিন নেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন পক্ষকে স্বেচ্ছাচারিতা ও অগণতান্ত্রিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
এদিকে গত ৭ জুলাই দলের নতুন মহাসচিব নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানায় দলটি। ঘণ্টাখানেক পর দলের জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় পার্টির গত ২৫ জুনের মতবিনিময় সভায় জেলা, মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনেন এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ওই তিন নেতাকে সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে অব্যাহতি পাওয়ার কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন। এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিয়োগকে চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। মো. মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানীকর আচরণ। জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হতে হবে। দলে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি। তারা জাতীয় পার্টির ত্যাগী, আদর্শবান নেতা-কর্মীদের প্রতি অন্যায় ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।