সংস্কার হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 09-07-2025

সংস্কার হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন এবং সরকার পরিবর্তনের বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নির্বাচন এবং সরকার পরিবর্তন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য স্থাপিত হলো না। যতই দিন যাচ্ছে দেশের সচেতন মহল ‘ঘর পোড়া গরুর মতো সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছে’। ঐকমত্য কমিশন জানে রাজনৈতিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল (যাদের সিংহ ভাগের তৃণমূলে অস্তিত্ব নেই) নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে নিত্যনতুন প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের মতো বিভাজিত সমাজে কখনো নিরঙ্কুশ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। এমতাবস্থায় যতটুকু ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে দ্রুত ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনী ট্রেনকে গতিশীল করা। দুঃখের বিষয় যে সরকারের ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ চালু থাকা অবস্থায় কিছু প্রান্তিক দল চটকদার বিষয়াদি সামনে নিয়ে এসে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে। এই ধরনের আচরণ দুঃখজনক। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট মব সংস্কৃতি চলছে। এটির পরিণতি কিন্তু সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই আত্মঘাতী হবে। প্রবীণ ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা গলায় জড়িয়ে অপদস্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্রিয়ার কিন্তু সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটনের সূত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটবে অবসম্ভাবি। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা সংকটে পড়বে। গণতন্ত্র, বৈষম্যবিরোধী সমাজব্যবস্থা, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সুদূর পরাহত হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণার জন্য যখন রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় তখন কয়েকটি প্রান্তিক দলের উচিত হবে না স্বতন্ত্রভাবে সড়কে নিজেদের ভাবাদর্শ নিয়ে আন্দোলন করার। ফলশ্রুতিতে ঐক্যে ফাটল ধরবে, অরাজকতাকে অজুহাত করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলা হবে।

বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বলতেই হবে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে বিএনপি বর্তমানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। জামাত ছাড়া অন্যান্য সক্রিয় দল সম্মিলিতভাবেও অবাধ, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনে একটি দুটি আসনে জয়ের স্বভাবনা নেই। তাই সংগত কারণেই বিএনপি কখনো ভোটার সমানুপাতিক হারে সংসদের উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি নির্বাচন মেনে নিবে না। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বিষয়ে সবার সম্মতি আছে, নির্বাচন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়েও সম্মতি হয়েছে, একই ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সরকার প্রধান থাকবে না এই বিষয়েও সম্মতি হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যাতে একক ক্ষমতাশালী হয়ে স্বৈরাচারী না হয়ে উঠে সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির বিষয়ে সম্মতি যথেষ্ট। আরো একটি বিষয় এখানে প্রণিধানযোগ্য। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিলে তাদের উপর আস্থা রাখতেই হবে। নির্বাচিত সরকারের নির্বাহী ক্ষমতাকে সীমিত করা কোনোমতেই কাঙ্ক্ষিত হবে না। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ যেমন নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রধান মনোনয়নে সংসদে প্রনিধিত্বকারী সরকারি দল এবং বিরোধীদলের প্রধানের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনে কারো অসম্মতি থাকার কারণ দেখি না। একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচন বিষয়েও ঐকমত্য প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে সংবিধান সংস্কার নির্বাচিত সংসদে হতে হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সব কর্মকাণ্ড পরবর্তী সংসদে অনুমোদন করতে হবে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতা ছাড়াও অনেক পুলিশ সদস্য নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ইনডেমনিটি দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার রুদ্ধ করা যাবে না। এছাড়া এ সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক মতবাদের কারণে নির্মম হত্যা ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়গুলো একসময় বিচারের আওতায় আসবে। 

যা হোক সব দলের সম্মতির ভিত্তিকে যেসব সংস্কার অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সম্পাদন সম্ভব সেগুলো সম্পাদন করা উচিত। অনুরোধ করবো চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করে সরকার যেন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে গ্রিন সিগন্যাল প্রদান করে। একই সঙ্গে সরকার এবং সেনা বাহিনী প্রধানের অঙ্গীকারেরভিত্তিকে মব লিনচিং অবিলম্বে শূন্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক মত এবং পথকে সমান গুরুত্ব এবং স্পেস দিতে হবে। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য টিকে থাকার সংগ্রাম আদৌ সহজ হবে না। নির্বাচনে আগে সরকারি প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন হবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)