নিউইয়র্কের কুইন্সে মুসলিম নারীকে সাবওয়েতে মারধর


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 25-06-2025

নিউইয়র্কের কুইন্সে মুসলিম নারীকে সাবওয়েতে মারধর

নিউইয়র্ক নগরের সাবওয়েতে ৫৫ বছর বয়সী নারী হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ওই নারী বলেন, ‘তুমি কি মুসলিম’ প্রশ্ন করার পরই তাকে মারধর করেছেন হামলাকারী। নিউইয়র্কের ডব্লিউএবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমটি ওই নারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে।

গত ১৮ জুন ভোরে নিউইয়র্ক নগরের কুইন্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী যখন সাবওয়েতে ট্রেনে উঠছিলেন, তখন ৩৪ বছর বয়সী নাভেদ দুরানি নামের ওই হামলাকারী তার খুব কাছাকাছি চলে আসেন। ওই নারী বলেন, ‘তিনি (হামলাকারী) আমাকে বললেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি কি মুসলিম?’

হামলার শিকার নারী বলেন, ‘আমি বললাম, হ্যাঁ। তখনই ওই ব্যক্তি আমাকে লাথি-ঘুসি মারতে শুরু করেন, সব দিক থেকে আঘাত করেন।’ ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার পরপরই হামলা শুরু হয়। পরবর্তী স্টেশনে যাওয়া পর্যন্ত হামলা চলে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামার পর নাভেদ দুরানি পালিয়ে যান। ওই নারী বলেন, ‘আমি শুধু বলছিলাম, থামুন থামুন। কিন্তু হামলাকারী থামেননি। আমি বুঝতেই পারিনি, কী হচ্ছে।’ নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নাভেদ দুরানি মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি ওই নারীর মুখ, মাথা ও ঘাড়ে ঘুসি ও লাথি মেরেছেন।

ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, দুরানি ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি মুসলিম কি না। পরে তাকে মারধর করে পালিয়ে যান। দুজন নারী যাত্রী ও সাবওয়ে কন্ডাক্টরের সহায়তায় পুলিশ দুরানিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগ ইনডিপেনডেন্টকে জানিয়েছে, ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধ ও আক্রমণের অভিযোগে দুরানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত নারী মাথায় চোট পেয়েছেন। হামলায় তার নাক ভেঙে গেছে এবং তিনি সারা শরীরে আঘাত পেয়েছেন। ওই নারী বলেন, ‘এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আগে কখনো এমন কিছু ঘটেনি। আমি কীভাবে তার (হামলাকারীর) মুখ ভুলতে পারি?’

ওই নারীর চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা, বাসাভাড়া ও খাবার কেনার মতো জরুরি খরচ মেটাতে ‘গো ফান্ড মি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা নিজেকে ওই নারীর সন্তান উল্লেখ করে পেজে লিখেছেন, ‘তিনি (ওই নারী) শুধু নিজের ও তার পরিবারের দুজন সদস্যের ভরণপোষণের চেষ্টা করছিলেন। একজন ব্যক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মুসলিম কি না। তিনি শান্তভাবে ‘হ্যাঁ’ বলার পরপরই লোকটি আচমকা তাকে হিংস্রভাবে আঘাত করেন।’

ওই নারী ‘শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন’ বলে জানিয়েছেন তহবিল সংগ্রহকারী। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করা হলেও ‘শুধু ন্যায়বিচার পেলেই মানসিক আঘাত দূর হয় না, চিকিৎসার খরচও কমানো সম্ভব নয়।’ তহবিল সংগ্রাহক আরও বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো, ওষুধ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ অনেক বেশি। তার চেয়েও খারাপ কথা হলো, মাথায় আঘাতের লক্ষণ এখনো যাচ্ছে না। এর ফলে তিনি কাজে ফিরতে পারছেন না। এজন্য নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাড় করতে পারছেন না। বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও ন্যূনতম জীবনযাত্রার খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।’

কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কাটজ এ বিষয়ে বলেন, নাভেদ দুর্নি মুসলিম নারীকে ট্রেনে মারধরের ঘটনায় ঘৃণাজনিত অপরাধসহ একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। মুসলিম সম্প্রদায় কিংবা অন্য যে কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও সহিংসতা আমরা সহ্য করবো না। আমাদের বৈচিত্র‍্যই আমাদের শক্তি এবং যারা এই বৈচিত্র্যের ওপর আঘাত হানবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত নাভেদ দুর্নির বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রির হামলা, দ্বিতীয় ডিগ্রির হামলা, প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রিসহ মোট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সর্বোচ্চ দণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

বিচারক মাইকেল কাটজ দুর্নিকে জামিন না দিয়ে রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৬ জুন কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে অনুষ্ঠিত হবে। মামলাটির তদন্ত করছে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির হেইট ক্রাইম ব্যুরো। মামলাটি পরিচালনা করছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মাইকেল ব্রোভনার এবং মেজর ক্রাইমস বিভাগের নির্বাহী সহকারী অ্যাটর্নি শন ক্লার্ক।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)