ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কবলে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 25-06-2025

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কবলে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আর্থিক সংকট নাজুক করবে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে গেছে। অচিরেই জ্বালানি তেলের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যানো জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাবে। ইরানসহ যুদ্ধ এলাকার দেশগুলো বিশ্বের প্রধান জ্বালানি উৎপাদক এবং রফতানিকারক দেশ। ইরান নিজেই বিশ্বের ৯ শতাংশ তেলসম্পদের অধিকারী। পারস্য উপসাগর এবং ওমান সাগর সংযুক্তকারী হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি সম্পদ সরবরাহ হয়। 

যুদ্ধের কোনো পর্যায়ে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানিসহ বাণিজ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। করোনা উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি এখনো রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের অভিঘাত উত্তরণের সংগ্রামে আছে। অধিকাংশ অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। এই সময়ে ইরান ইসরায়েল সংঘাত মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। 

এমনিতেই ক্রমাগত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ায় জ্বালানি খাত আছে তীব্র জ্বালানি সংকটে। চাহিদা মতো জ্বালানি সরবরাহ করার সক্ষমতা না থাকায় বিপুল বিদ্যুৎ উপাদান ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না, বরং একতরফা চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদন না করেও বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে বিদ্যুতের। ফলশ্রুতিতে বিপিডিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

২০০০-২০২৫ ক্রমপুঞ্জিত ব্যর্থতা আর দুর্নীতির কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা সংকটে। নিজেদের কয়লাসম্পদ মাটির নিচে। আদৌ কয়লা উত্তোলন করা হবে কিনা সন্দেহ। ভূমিতে এবং সাগরে বিপুল গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে আমদানির ঝুঁকি নেওয়ায় সংকট আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজিসহ দৈনিক সরবরাহ ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিন নিজেদের উৎপাদন কমছে। ২০৩০ পর্যন্ত নিজেদের উৎপাদন বিশাল আকারে বৃদ্ধি বা এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা সীমিত। এমনি অবস্থায় ইরান ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ মহাবিপদে পড়বে। উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানির সামর্থ থাকবে না। আবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে কাতার ওমান থেকে এলএনজি সরবরাহ চেইন ব্যাহত হবে। উভয় সংকট সমাসন্ন। 

এমনিতেই বাংলাদেশের ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ সাগরে স্থাপিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল জ্বালানি সরবরাহে নিরবচ্ছিন্ন সমাধান না। এমতাবস্তায় বাংলাদেশকে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে হবে, ছাতক এবং টেংরাটিলায় জরুরি ভিত্তিতে খনন করতে হবে। দেশজুড়ে নিবিড় সিসমিক সার্ভে করে পেট্রোলিয়াম সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস নির্ভরতা কমানোর জন্য নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যথাশিগগির উৎপাদনে আনতে হবে, সর্বোচ্চ প্রণোদনা দিয়ে সৌর বিদ্যুতের অবদান বাড়াতে হবে। 

দেশ এখন নির্বাচনের মহাসড়কে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলকে জ্বালানিনিরাপত্তা বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)