ফেডারেল প্লাজায় হাজিরা দিতে এসে আইসের হাতে গ্রেফতার


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 11-06-2025

ফেডারেল প্লাজায় হাজিরা দিতে এসে আইসের হাতে গ্রেফতার

ম্যানহাটনের লোয়ার ম্যানহাটনে অবস্থিত ২৬ ফেডারেল প্লাজা অভিবাসন দফতরে গত ৪ জুন নিয়মিত হাজিরা দিতে এসে একাধিক অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। বিকেলে ঘটনাটি ঘটার পর শহরে তীব্র উদ্বেগ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা ‘ইনটেনসিভ সুপারভিশন অ্যাপিয়ারেন্স প্রোগ্রাম’-এর আওতায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন। নিউইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপ জানিয়েছে, যাদের অনেকের চূড়ান্ত নির্বাসনের আদেশ রয়েছে এবং পায়ে ‘অ্যাংকল মনিটর’ লাগানো ছিল-তাদেরই টার্গেট করেছে আইস। এটি কার্যত একটি ফাঁদ বলে মন্তব্য করেন নিউইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপের ইমিগ্র্যান্ট প্রোটেকশন ইউনিটের সুপারভাইজিং অ্যাটর্নি অ্যালিসন কাটলার। তিনি বলেন, মানুষ নিয়ম মেনে হাজিরা দিতে এসে নিজেই শিকার হয়ে যাচ্ছে।

নিউইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপের সিনিয়র অ্যাটর্নি বেঞ্জামিন রেমি জানান, তিনি নিজে একজন অভিবাসী নারীর গ্রেফতারের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন, যিনি নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, নারীটি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছিলেন, কিন্তু আইস কর্মকর্তারা হঠাৎ তাকে মাটিতে ফেলে দেন। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার সন্তান, আমার সন্তান।’ এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ছিল। গ্রেফতারের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদামাটা পোশাক ও মুখোশ পরা আইস এজেন্টরা হাতকড়া পরানো অবস্থায় অভিবাসীদের বিল্ডিং থেকে বের করে নিয়ে যান। এক নারীকে মাটিতে হাঁটু গেড়ে কাঁদতে দেখা যায়, যখন তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

আইস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ‘আইনের শাসন কার্যকর করছে’। সংস্থার মতে, গত দুই বছরে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তারা জরুরি নির্বাসনের আওতাভুক্ত। ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোএম বলেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ নীতি বাতিল করে এখন আবার আইন মেনে কাজ করা হচ্ছে। আইস দাবি করে, ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিদিন ৩ হাজার অভিবাসী গ্রেফতারের লক্ষ্যস্থির করেছে, যেখানে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৬৫৬ জন গ্রেফতার করা হচ্ছে।

এই ঘটনার পর নিউইয়র্কে অভিবাসীদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসন অধিকারকর্মী নাভিদ হাসান বলেন, প্রতিদিন নির্বাসনের চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় ম্যানহাটনের মতো জায়গায় এমন অভিযান অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের ফেডারেল প্রতিনিধি কোথায়? কেন তারা নিউইয়র্কের পক্ষে কথা বলছেন না? সম্প্রতি ২০ বছর বয়সী ভেনেজুয়েলান ছাত্র ডিলানকেও তার নিয়মিত আদালত শুনানির সময় আইস আটক করে, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, আমি চাই না মানুষ আদালতে যেতে ভয় পাক। তারা যদি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, তাহলে আরো জটিলতা তৈরি হবে। আমাদের প্রশাসন আইসের সঙ্গে কোনো বেসামরিক সহযোগিতা করেনি এবং করবেও না।

ম্যানহাটনের কেন্দ্রে এমন সহিংস ও আকস্মিক গ্রেফতার অভিযান অভিবাসন নীতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিয়ম মেনে চলা অভিবাসীদের এভাবে ‘টার্গেট’ করা অমানবিক ও বেআইনি। অভিবাসী সম্প্রদায়ের একটাই প্রশ্ন যে আইন মেনে চললে যদি এমন পরিণতি হয়, তবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)