হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম গত ২০ মে এক সিনেট কমিটির শুনানিতে হেবিয়াস কর্পাস সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি আইনের ভুল ব্যাখ্যা জানান, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মেক্সিকো সীমান্তে কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি বলেন, যদিও হেবিয়াস কর্পাস একটি সাংবিধানিক অধিকার, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের অধিকার সাময়িকভাবে স্থগিত করা এবং তাদের বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। তবে সংবিধান ও ইতিহাস অনুযায়ী, নোয়েমের এই ব্যাখ্যাকে আইনবিশেষজ্ঞ ও সিনেটররা ভুল ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন।
সেক্রেটারি নোয়েমের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সিনেটর ম্যাগি হাসান, যিনি একজন প্রাক্তন আইনজীবী। তিনি বলেন, হেবিয়াস কর্পাস যুক্তরাষ্ট্রের একটি মৌলিক আইনি নীতি, যা সরকারকে বন্দি ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির করতে বাধ্য করে এবং তার আটকাদেশের বৈধতা প্রমাণ করতে বলে। এই অধিকারই আমেরিকাকে একটি মুক্ত সমাজে পরিণত করেছে, যা উত্তর কোরিয়ার মতো স্বৈরাচারী রাষ্ট্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে আলাদা করেছে।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এক সাক্ষাৎকারে জানান, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন পরিস্থিতিকে মোকাবিলার জন্য প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পথ খুঁজছে এবং হেবিয়াস কর্পাস স্থগিত করাকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে। মিলার বলেন, সংবিধানে বিদ্রোহ বা বিদেশি আক্রমণের সময় হেবিয়াস কর্পাস স্থগিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে এবং প্রশাসন এই বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
হেবিয়াস কর্পাস হলো এমন একটি আইনি রিট, যা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত যে কোনো ব্যক্তি, নাগরিক হোক বা অনাগরিক, ফেডারেল কোর্টে আবেদন করে দাবি করতে পারেন যদি মনে করেন তাকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে। এই রিটের মাধ্যমে আদালত সরকারকে বাধ্য করে আটকাদেশের বৈধতা প্রমাণ করতে। যদি বিচারক মনে করেন বন্দিত্ব অবৈধ, তবে তাকে মুক্তি দিতে হয়।
বিশেষ করে অভিবাসন মামলায়, অন্যসব আইনি পথ শেষ হওয়ার পর অভিবাসীরা হেবিয়াস কর্পাসের জন্য আবেদন করতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে অনেক অভিবাসীকে সাধারণ শুনানির সুযোগ না পেয়ে সরাসরি হেবিয়াস কর্পাসের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের ২০০১ সালের জাদ্ভিদস বনাম ডেভিস মামলার রায়ে বলা হয়েছে, যাদের বিতাড়নের চূড়ান্ত আদেশ রয়েছে, তাদের ছয় মাসের বেশি আটকে রাখা উচিত নয়, যদি না সরকার দেখাতে পারে শিগগির তাদের বিতাড়ন করা সম্ভব। করোনা মহামারির সময়ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে বহু অনাগরিক এই আইনি পথ গ্রহণ করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিকেল ওয়ান , সেকশন ৯, ক্লাউস ২ ধারা ২ অনুযায়ী, কেবল কংগ্রেসই হেবিয়াস কর্পাস স্থগিত করার ক্ষমতা রাখে- তা-ও শুধু বিদ্রোহ বা বিদেশি আক্রমণের মতো চরম পরিস্থিতিতে। ইতিহাসে মাত্র চারবার এই অধিকার স্থগিত করা হয়েছে: ১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধের সময়, ১৯০৫ সালে ফিলিপাইনের কিছু অঞ্চলে, ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার আক্রমণের পর হাওয়াইয়ে এবং সীমিতভাবে ২০০০ দশকে।
সিনেটর হাসান বলেন, হেবিয়াস কর্পাস এমন এক মৌলিক অধিকার যা সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করে এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রাখে। এই অধিকার সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে, তা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত হানতে পারে।
সংক্ষেপে, হেবিয়াস কর্পাস যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামোর একটি প্রধান স্তম্ভ। এটি এককভাবে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে স্থগিত করা সম্ভব নয় এবং এমন কোনো প্রচেষ্টা আদালত ও কংগ্রেসের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এই অধিকার রক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।