যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (৮২) ভয়াবহ ক্যানসারে আক্রান্ত। এরই মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে তার হাড় বা অস্থিমজ্জায়। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার এই সংক্রমণ ‘উচ্চ মাত্রার’। ১৮ মে জো বাইডেনের অফিস থেকে এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। খবরে প্রকাশ প্রস্রাবের সমস্যার কারণে গত সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পরীক্ষায় তার ক্যানসার ভয়াবহতা ধরা পড়েছে। একে ‘অধিক মাত্রায় আগ্রাসী’ সংক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্লেসন পরীক্ষায় ১০-এর মধ্যে তার স্কোর ৯। ক্যানসার রিসার্চ ইউকে বলছে, এর অর্থ তিনি উচ্চমাত্রায় আক্রান্ত। দ্রুততার সঙ্গে এই ক্যানসারের কোষ তার শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। এ অবস্থায় কী কী ধরনের চিকিৎসা নেওয়া যায় তা পর্যালোচনা করছেন বাইডেন ও তার পরিবার। তবে তার অফিস বলেছে এই ক্যানসার হরমোন-সংবেদী। এর অর্থ চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হতে পারে। বাইডেনের অফিস থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে জো বাইডেনের প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। ঘন ঘন প্রস্রাব হতে থাকে তার। এ অবস্থায় ১৬ মে তার প্রোস্টেট ক্যানসার বা মূত্রথলির ক্যানসার ধরা পড়ে। গ্লেসন মাত্রা ৯। এর অর্থ ক্যানসার তার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও এই সংক্রমণ অধিক মাত্রায় আগ্রাসী রূপ নিয়েছে তবু দৃশ্যত এটা হরমোন-সংবেদী হওয়ায় কার্যকর চিকিৎসা করা যাবে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির সব রাজনৈতিক মহল থেকে সমবেদনা ও সমর্থন পাচ্ছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি এবং ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প জো বাইডেনের মেডিকেল এই সমস্যার খবর শুনে বেদনাহত। তিনি লিখেছেন, জিল বাইডেন ও তার পরিবারের প্রতি আমাদের উষ্ণ ও সর্বোত্তম শুভ কামনা। আমরা জো বাইডেনের দ্রুত এবং সফল রোগমুক্তি কামনা করি। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস এক্সে লিখেছেন, বাইডেন পরিবারের জন্য তিনি এবং তার স্বামী ডগ এমহোফ প্রার্থনা করছেন। তিনি লিখেছেন, জো (বাইডেন) একজন যোদ্ধা। আমি জানি তিনি জীবনে এবং নেতৃত্বে সব সময় যে শক্তি ও আশাবাদ নিয়ে লড়াই করেছেন একই শক্তিতে তিনি এই সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। এক্সে এক পোস্টে জো বাইডেনের পুরো পরিবারের প্রতি প্রার্থনা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। উল্লেখ্য, বারাক ওবামার প্রেসিডেন্সির সময় জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওবামা এক্সে লিখেছেন, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য যুগান্তকারী চিকিৎসার জন্য জো বাইডেনের চেয়ে বেশি কেউ করেনি। আমি নিশ্চিত তিনি তার ট্রেডমার্ক সংকল্পের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। আমরা তার দ্রুত ও পুরোপুরি সুস্থতা কামনা করি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ক্যানসার গবেষণা বিষয়ক সরকারি একটি প্রোগ্রামের দায়িত্ব জো বাইডেনকে দিয়েছিলেন বারাক ওবামা।
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট স্বাস্থ্য ও বয়সের কারণে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। এ যাবৎ যত প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি বয়সী। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উইলিয়াম ডাহুট বলেছেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ক্যানসার খুবই আগ্রাসী। যদি কোনো ক্যানসার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আমরা মনে করি না যে, তা চিকিৎসায় ভালো হবে। তবে অনেক রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো সাড়া দেন। তারা চিকিৎসা নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে পারেন। জো বাইডেনের এই চিকিৎসায় তিনি হরমোন থেরাপি দেওয়ার কথা বলেছেন। এর ফলে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি ধীরগতিতে হবে। উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে ক্ষমতা বুঝে দেওয়ার পর থেকেই জনসম্মুখে তেমন একটা দেখা যায়নি সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে।
‘দুই মাসের মধ্যে মারা যেতে পারেন বাইডেন’: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মেগা) প্রচারণার প্রভাবশালী ব্যক্তি লরা লুমার দাবি করেছেন, ক্যানসারে আক্রান্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মারা যেতে পারেন।’ এই বিস্ফোরক দাবি তিনি করেছেন বাইডেনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘোষণার পর। এর আগে জানানো হয় যে, বাইডেন আগ্রাসী ধরনের প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত। এরপর এক্সে একাধিক পোস্টে লুমার দাবি করেন, জুলাই মাসেই আমি বলেছিলাম বাইডেন টার্মিনাল (মারণব্যাধি) রোগে আক্রান্ত। এখন সেটা প্রমাণিত হচ্ছে। তিনি আরো লিখেছেন, আমি মেডিকেল ইমারজেন্সির বিষয়ে সঠিক ছিলাম এবং যখন তিনি মারা যাবেন, তখনো প্রমাণ হবে আমি সঠিক ছিলাম। অনেকেই আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি রাখে। উল্লেখ্য, লুমার তার জুলাই ২০২৪ সালের একটি পোস্ট পুনরায় শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, বাইডেন মারা যাচ্ছেন। তিনি আরো লিখেছেন, বাইডেন টার্মিনাল ক্যানসারে আক্রান্ত। তার ভাই ফ্র্যাঙ্ক বাইডেন নিজেই একসময় মুখ ফস্কে তা বলে ফেলেছিলেন। পরবর্তী দুই মাসেই বাইডেন মারা যেতে পারেন। লুমার হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ‘চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড জালিয়াতির’ অভিযোগ তুলে আসছেন বলেও জানান। তার দাবি, গত বছর হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকদের সঙ্গে বাইডেনের একাধিক মধ্যরাতের বৈঠকের প্রমাণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, লগ চেক করুন, নিজেরাই দেখবেন। তিনি ২০২২ সালের একটি ভিডিওও শেয়ার করেন। সেখানে বাইডেন বলেছিলেন, আমার ক্যানসার আছে। তবে তখন হোয়াইট হাউস পরিষ্কার করেছিল, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার অতীতের ত্বকের ক্যানসারের কথা বলছিলেন, যা প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই অপসারণ করা হয়েছে। লুমারের আরও দাবি, পুরো প্রেসিডেন্সির মেয়াদকালে বাইডেন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তবে প্রশাসন তা গোপন রেখেছে। এটা হোয়াইট হাউস থেকে আসা সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। তিনি আরো বলেন, সবাই বলছে তারা চায় বাইডেন সেরে উঠুক। বাস্তবতা হচ্ছে তিনি আর সুস্থ হবেন না। আমাদের এখন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া উচিত।