ট্রাম্প প্রশাসন শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য গ্রিনকার্ড আবেদন প্রক্রিয়া আকস্মিকভাবে স্থগিত করেছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) বিভাগের একজন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই স্থগিতকরণ শুধু সেসব শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য প্রযোজ্য যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এই স্থগিতকরণ অস্থায়ী এবং ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) তাদের আবেদনকারীদের আরো যাচাই-বাছাই করতে চলেছে, যা ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারির নির্বাহী আদেশের আওতায় ‘সুদৃঢ় যাচাই’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে। এ ব্যাপারে তেমন কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি এবং নীতিগত পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। এ আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রশ্ন উঠেছে কেন ডিএইচএস শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছে।
শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য এই গ্রিনকার্ড আবেদন প্রক্রিয়ার স্থগিতকরণ বিষয়ে আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল এবং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ৮ এপ্রিল ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট, এর মাধ্যমে সরকারি নথি সংগ্রহের জন্য আবেদন করেছে। তারা চাচ্ছেন, ডিএইচএস এবং ইউএসসিআইএস থেকে এই স্থগিতকরণ এবং নতুন যাচাই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানানো হোক এবং কেন এই দুটি গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট করা হোক। গ্রিনকার্ড বা স্থায়ী বাসিন্দা কার্ড, এক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা একজন অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্বের পথে নিয়ে যায়। যেসব ব্যক্তি আশ্রয় বা শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, তারা এক বছর পর গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই কার্ড তাদের আইনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
শরণার্থীরা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদনের জন্য একটি কঠিন প্রক্রিয়া পার করতে হয়, যেখানে তাদের দেশে জাতিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক মতামত বা বিশেষ সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ভীতি দেখাতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে তাদের ব্যাপক নিরাপত্তা যাচাই করা হয়, যাতে তারা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না বা অপরাধমূলক ইতিহাস রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করা যায়। এদিকে আশ্রিতদের জন্যও একই ধরনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া রয়েছে, তবে তারা আইনি প্রক্রিয়া বা ইউএসসিআইএসে আবেদন করে তাদের স্ট্যাটাস লাভ করতে পারেন। তাদের জন্যও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয় এবং তাদের আবেদন পুরোপুরি যাচাই করা হয়। শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য গ্রিনকার্ড আবেদন প্রক্রিয়ার স্থগিতকরণ তাদের জন্য একটি বড় অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এ প্রক্রিয়া সাধারণত ১৪ থেকে ১৫ মাস সময় নেয় এবং স্থগিতকরণের কারণে আরো দীর্ঘসময় অপেক্ষা করা লাগবে, যার ফলে একটি বৃহৎ ব্যাকলগ তৈরি হতে পারে।
এই স্থগিতকরণের বিরুদ্ধে আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল এবং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি আইনি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছে। তারা ডিএইচএস, ইউএসসিআইএস থেকে আরো তথ্য জানতে চেয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো, শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য এই স্থগিতকরণ দ্রুত তুলে নেওয়া এবং এর কারণ স্পষ্টভাবে জানানো।
শরণার্থী ও আশ্রিতরা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে আসতে একটি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তাদের জীবন রক্ষা ও স্থিতিশীলতার জন্য এই গ্রিনকার্ড প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থগিতকরণের ফলে তাদের জীবন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং তাদের আবেদন ফেরত আসা পর্যন্ত তারা নির্ধারিত সময়ের বাইরে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসন যদি তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিষ্কারতা না দেয়, তাহলে এটি আরো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। জনসাধারণের কাছে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কারণ জানানো উচিত এবং শরণার্থী ও আশ্রিতদের গ্রিনকার্ড আবেদন প্রক্রিয়াটি দ্রুত পুনরায় চালুর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই স্থগিতকরণ শরণার্থী ও আশ্রিতদের জন্য এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাদের জীবন ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জপূর্ণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পরও তারা সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতার জন্য লড়াই করছেন। প্রশাসনকে অবশ্যই দ্রুত এই স্থগিতকরণ তুলে নিয়ে তাদের আরো দীর্ঘসময়ের জন্য অনিশ্চিত রাখার পরিবর্তে গ্রিনকার্ড প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে হবে।