হঠাৎ কেন ধর্ষণ মহামারি?


খন্দকার সালেক , আপডেট করা হয়েছে : 19-03-2025

হঠাৎ কেন ধর্ষণ মহামারি?

বিবিধ সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশে ধর্ষণ বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিশু ধর্ষণ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। সংবাদপত্রের পাতায় বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থান থেকে শিশু ধর্ষণ নারী নির্যাতনের লোমহর্ষক সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, প্রতিক্রিয়ায় ফুঁসে উঠছে বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ। স্ত্রী, মা-বোন, শিশুসন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নাগরিক সমাজ।

অথচ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এমনকি গণতন্ত্রের আন্দোলনে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে নারী। বিদ্রোহী কবির ভাষায় ‘পৃথিবীতে যা কিছু কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। বাংলাদেশের পুরুষশাসিত সমাজে কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে নারী-পুরুষের সমতা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দুই বিশিষ্ট নারী চক্রাকারে দীর্ঘদিন সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকলেও নারীকে এখনো বাংলাদেশ সমাজে ভোগ্য পণ্য বিবেচনা করা হয়েছে। নারীকে তার যোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি।

অতিসম্প্রতি মাগুরায় সাত বছরের শিশু আছিয়াকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছে তার নিকটজন। মারাত্মকভাবে আহত শিশুটি মৃত্যুবরণ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত পাপীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা প্রচণ্ড প্রতিবাদের মুখে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ন্যূনতম সময়ে বিচার করে দোষী প্রমাণিত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে। অতীতে এমনকি নিকট অতীতেও একই ধরণের নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষণের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে, এমনকি কুমিল্লা সেনানিবাসের মতো সংরক্ষিত অঞ্চলেও নারী ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। মুনিয়া হত্যাকাণ্ড। যতদিন মিডিয়া সরব থেকেছে লোমহর্ষক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে সৃষ্টিকারী অধিকাংশ ঘটনার বিচার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে আইনের চোরাগলি পথে এবং অধিকাংশ সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবে দোষী পাপীরা ছাড় পেয়ে দিব্বি মুক্ত মানুষের মতো সমাজ কলুষিত করছে।

সবার হয়তো স্মরণে আছে বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবারের ছেলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে এক তরুণী হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। বিচার হয়নি। গুজব সেই শিল্পগোষ্ঠী নাকি অধুনা যাত্রা শুরু করা একটি রাজনৈতিক দলে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। বিচারের বাণী এভাবেই নীরবে কাঁদছে বাংলাদেশে।

যেভাবে মিডিয়ায় বর্ণনা শুনেছি দুর্ভাগা শিশু আছিয়ার বিষয়ে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। পাঠকরা নিজেদের শিশুসন্তানের কথা ভাবুন। আমাকে আমার ছয় বছর বয়সী গ্রেড-১ পড়া নাতনি ফাতিমা নেটে দেখে প্রশ্ন করেছে ‘What happened to achiya in Bangladesh?’ কি জবাব দেবো? বিষয়টি মিডিয়ায় এতো প্রচার পেয়েছে যে, বিশ্বসমাজে লজ্জায় মাথা নত হয়েছে বাংলাদেশিদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী শিশু নির্যাতন একেবারে হয় না বলা যাবে না। কিন্তু সব দেশে সব আলোকিত সমাজে কঠোর আইনের প্রয়োগ আছে। বাংলাদেশেও আছে আইন। কিন্তু কয়টি ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ হয়েছে? অনেক আশা ছিল বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু লোমহর্ষক ঘটনার দ্রুত বিচার হবে। কিন্তু সাত মাস শেষ হতে চললেও একটি ঘটনার বিচার হয়নি। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় ধর্ষকরা বিশেষত শিশু ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। আইন উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দ্রুত বিচার হবে, কঠোর নতুন আইন করা হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের ন্যূনতম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তি (এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড) প্রদান করা হবে। দেখার আশায় বসে রইলাম।

প্রশ্ন জাগে কট্টর মৌলবাদীদের দাপুটে বর্তমান অবস্থানের কারণে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন বাড়ছে নাতো?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)