মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত প্রধান ক্যালেব ভিতেলোকে তার দায়িত্ব থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এখন তাকে নতুন দায়িত্বে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেখানে তিনি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেবেন এবং অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্তকরণ, গ্রেফতার এবং বিতাড়নের ওপর সরাসরি নজর রাখবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতিপত্রহীন অভিবাসিদের আটক এবং বিতাড়নের গতি প্রত্যাশিত মাত্রায় না পৌঁছানোয় ট্রাম্প প্রশাসন হতাশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় এবং বিতাড়ন অভিযান জোরদার করা ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। তিনি ইতিমধ্যেই তার দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতির ওপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিবাসন আটক ও নির্বাসনের হার প্রশাসনের চাওয়া মাত্রায় বাড়ছে না। ফলে আইসের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান ক্যালেব ভিতেলোকে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে অপসারণ করা হয়েছে। তবে তিনি আইসের সঙ্গেই থাকবেন এবং নতুনভাবে ‘ফিল্ড ও এনফোর্সমেন্ট অপারেশন’ তদারকির দায়িত্ব পালন করবেন। এর অর্থ তিনি সরাসরি অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা এবং বিতাড়নের প্রক্রিয়া তদারকি করবেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলফলিন বলেন, ভিতেলো এখন আর প্রশাসনিক পদে নেই, বরং তিনি সরাসরি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়ামের অগ্রাধিকারের বিষয়। আইসের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পাশাপাশি, প্রশাসন আরো নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও সংস্থাটির কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
ক্যালেব ভিতেলোর পুনর্বিন্যাসের আগে, প্রশাসন ইতিমধ্যে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা রাসেল হট এবং পিটারবার্গকে তাদের পদ থেকে সরিয়েছে। ডিএইচএসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইসকে জবাবদিহির সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। গত চার বছর ধরে এই জবাবদিহিতা অনুপস্থিত ছিল। এখন আমরা কঠোর ফলাফল দেখতে চাই। সূত্র অনুযায়ী, রাসেল হটকে ওয়াশিংটনে আইসের স্থানীয় কার্যালয়ে এবং পিটারবার্গকে সেন্ট পল, মিনেসোটা অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতিমালার অধীনে, ২০ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮২৬ জন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই হারে চলতে থাকলে প্রশাসন প্রথম ৩০ দিনে প্রায় ২৫ হাজার অভিবাসন-সংক্রান্ত গ্রেফতার করবে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আইসের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগের প্রশাসনের (বাইডেন প্রশাসন) সময়কার নীতিগুলো বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ছিলÑ গির্জা, স্কুল ও হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল স্থানে অভিবাসন আটক নিষিদ্ধকরণ।
এই নীতিগুলো বাতিলের ফলে, আইস কর্মকর্তারা এখন আরো স্বাধীনভাবে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার করতে পারছেন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো বর্তমান অভিবাসন আটক ও বিতাড়নের হার নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। সীমান্ত নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা টম হোম্যান চলতি মাসে বলেছেন, আমি বর্তমান গ্রেফতারের সংখ্যায় খুশি নই। আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ক্যালেব ভিতেলোর অপসারণ এবং পুনরায় দায়িত্ব প্রদান ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অভিবাসন অভিযানের গতি ত্বরান্বিত করার’ নীতির অংশ। প্রশাসন অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের জন্য আইসকে আরো শক্তিশালী করতে চায় এবং সংস্থাটির কার্যক্রম কঠোর করার পরিকল্পনা করছে।ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই ’যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসন বিতাড়ন অভিযান’ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই অভিযান কতটা কার্যকর হয় এবং প্রশাসন তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।