টেসলার সিইও ও ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ)-এর প্রধান ইলন মাস্ক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি রোববার তিনি এক টুইটের মাধ্যমে দাবি করেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড মুসলিম বিশ্বের ১৮টি ইসলামিক, আরব ও ফিলিস্তিনি দাতব্য সংস্থাকে অর্থায়ন করছে, যেগুলোকে তিনি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন। ইলন মাস্ক তারপর আরেকটি রিপাবলিকান সমর্থিত টুইট পুনরায় শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে, ইউএসএইড প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন ডলার এ সংস্থাগুলোর জন্য বরাদ্দ করেছে। মাস্ক সেই পোস্টে লিখেছিলেন, অনেকেই বলছেন, কেন আমরা আমাদের করের অর্থ সন্ত্রাসী সংগঠন এবং নির্দিষ্ট দেশগুলোর কাছে পাঠাচ্ছি যারা আমাদের ঘৃণা করে?
সংস্থাগুলোর তালিকায় রয়েছে- ১. সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ইসলাম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি। ২. ইসলামিক অ্যাকশন নেটওয়ার্ক। ৩. আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউট। ৪. প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড। ৫. মুসলিম ওমেনস ফাউন্ডেশন। ৬. আমেরিকান ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। ৭. ফিলিস্তিনি হেলথ কেয়ার সোসাইটি। ৮. ইসলামিক রিলিফ ইউএসএ। ৯. গ্লোবাল ইসলামিক চ্যারিটি। ১০. আল-কুদস হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন। ১১. ফিলিস্তিন রিফিউজি সাপোর্ট গ্রুপ। ১২. ইসলামিক এডুকেশনাল ট্রাস্ট। ১৩. আরব রাইটস অ্যাসোসিয়েশন। ১৪. হিউম্যান কেয়ার ফাউন্ডেশন। ১৫. ইসলামিক ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। ১৬. ফিলিস্তিনি সোশ্যাল সার্ভিসেস। ১৭. ইসলামিক কালচারাল ডায়ালগ ইনস্টিটিউট ও ১৮. আরব-আমেরিকান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তবে এ সংস্থাগুলোর কোনোটি কখনোই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল না বা কোনো তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এ সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা, মানবিক সহায়তা এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) ইলন মাস্কের এই দাবি কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। কেয়ার নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেছেন, আইন অনুযায়ী পরিচালিত ইসলামিক সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া শুধু বেপরোয়া নয়, এটি বিপজ্জনকও। এই ধরনের বক্তব্য ইসলামোফোবিয়া উসকে দেয়, নিরপরাধ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। এর আগেও মাস্ক ইসলাম ও আরব সমাজ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। এমনকি তিনি যুক্তরাজ্যের ইসলামবিরোধী উগ্র-ডানপন্থী কর্মীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। মার্কিন মুসলিম ও আরব কমিউনিটির নেতারা মাস্কের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, তিনি যেন এই বিভ্রান্তিকর বক্তব্য বন্ধ করেন এবং মুসলিম ও আরব আমেরিকানদের অবদানকে স্বীকৃতি দেন।
এই ঘটনা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলভাবে কথা বলা কতটা জরুরি, বিশেষ করে যখন তা সমাজের একটি বড় অংশের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত। ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায়নি, বরং মুসলিম ও আরব কমিউনিটির বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বৈষম্যকে উসকে দিয়েছে। একজন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। বিনা প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থাগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, এটি মানবিক সহায়তা ও শান্তির পথে বড় বাধা। সমাজের জন্য সত্যিকারের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে মাস্কের উচিত হবে নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা এবং বৈচিত্র্য, সহানুভূতি ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো। প্রভাবশালী কণ্ঠস্বরের প্রকৃত শক্তি হলো বিভক্তি নয়, বরং সংহতি সৃষ্টি করা, যা সত্যিকার উন্নয়নের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।