কনডেম সেল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির রহস্যজনক পলায়ন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 26-02-2025

কনডেম সেল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির রহস্যজনক পলায়ন

বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। গাজীপুরস্থ কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে তাকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কখন কীভাবে পালিয়েছে এ আসামি এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। একজন কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির আসামি কীভাবে কারাগার থেকে পালিয়ে যায় এ নিয়ে এখন তোলপাড় বাংলাদেশে,। তা-ও কারাগারসূত্র জানাচ্ছে, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর যে কোনো সময় পালিয়েছে ওই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। যা প্রকাশ পেলো এখন। এতোদিন কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লুকিয়ে রেখে আরো রহস্যের সৃষ্টি করেছে। 

এ ব্যাপারে কারা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ দায়সারা ভাবে বলেন, ‘এ ঘটনায় ৬ আগস্ট কারা অধিদফতর কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেছে। সেখানে পলাতক এই বন্দী সম্পর্কে বলা আছে।’ জানা যায়, জেমি আবরার হত্যা মামলা ৩ নম্বর আসামি ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় মুনতাসির আল জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিজের ফেসবুক আইডিতে জানান, আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ। বিষয়টি আদালত ও বাদীপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এরপরই বিষয়টি সামনে চলে আসে। 

আবরার ফাইয়াজ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পর। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি), যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেননি, তখন।’

তিনি লিখেছেন, ‘ফাঁসির আসামির তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে! পালানোর পরও এ তথ্য বাইরে না আসা তো এটাই প্রমাণ করে যে তাকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আগে থেকেই আরো তিনজন পলাতক।’

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহিদ মিনারে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার দিবাগত রাত ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

এ সময় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, অবিলম্বে পলাতক জেমিকে গ্রেফতার করতে হবে। পালানোর ঘটনায় কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করতে হবে। এ সময় আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সরকারের দিকে প্রশ্ন তুলে বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জেমি আদৌ কী ৬ তারিখে পালিয়েছে নাকি পরে পালিয়েছে, কারা জড়িত? সে বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে জবাবদিহি করতে হবে। 

এদিকে যে কোনোদিন আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের জন্য নিম্ন আদালতের নথি) এবং এ মামলায় দণ্ডিত আসামিদের করা আপিল শুনানি শেষে এটি কিউরিয়া অ্যাডভাইজারি ভল্ট (অর্থাৎ যে কোনোদিন রায় ঘোষণা করা হবে) হিসেবে রেখে দেন।

কারা কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পলায়ন নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আবরার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দি কারাগার থেকে পলায়নসংক্রান্ত সংবাদের প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার গাজীপুর থেকে ২০২ জন বন্দির সঙ্গে একত্রে (৮৭ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিসহ) কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পলায়ন করে।

এতে আরো বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৫ আগস্টে কোনাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের পূর্বক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সব কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে ৩৫ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিসহ ৫১ জন বন্দিকে গ্রেফতারপূর্বক কারাগারের প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বন্দিকে গ্রেফতারের প্রচেষ্ট অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, আবরার হত্যা মামলায় কারাগারের আগত বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত ২২ জন বন্দির মধ্যে বর্তমানে ২১ জন বন্দি কারাগারে আটক আছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) একদল নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ মামলায় আরো পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)